যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালের ঘটনায় আহত হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁর কোমরে এবং হাতে চোট লেগেছে বলে সূত্রের খবর। সেই কারণে চিকিৎসার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে গেছেন শিক্ষামন্ত্রী। অভিযোগ, যাদবপুরের ধস্তাধস্তির ঘটনার মাঝে পড়ে আহত হয়েছেন তিনি। মন্ত্রীর রক্ষীও আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ব্রাত্য তৃণমূলপন্থী অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপার বৈঠক সেরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোচ্ছিলেন। সেই সময় ব্রাত্যের গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেন ওই পড়ুয়ারা। গাড়ি থেকে নেমে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু তাঁর সামনেই চলতে থাকে বিক্ষোভ। ওঠে ‘চোর-চোর’ এবং ‘গো ব্যাক স্লোগান’। পরে মন্ত্রীর গাড়ি এবং সঙ্গে থাকা দু’টি পাইলট কারে ভাঙচুর চালানো হয়। ভেঙে দেওয়া গাড়ির ‘লুকিং গ্লাস’ও। মন্ত্রী জানান, কাচের টুকরো গায়ে লেগে তিনি আহত হয়েছেন। চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালে।
শনিবার সকাল থেকেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনার পারদ ধিকিধিকি জ্বলছিল। ওয়েবকুপার বার্ষিক সাধারণ সভার আগে সেই আগুনে যেন ঘি পড়ল। পোস্টার হাতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বাম ছাত্ররা। পালটা তৃণমূলের তরফে স্লোগান দেওয়া হয়। ধস্তাধস্তিও হয় একপ্রস্থ। সদ্য পাওয়া খবর ওয়েবকুপা – এসএফআইয়ের হাতাহাতিতে পরিস্থিতি চরমে ওঠে। আহত হন একাধিক অধ্যাপক-ছাত্রছাত্রীরা। শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করেন কয়েকজন। তখনই গাড়ির ধাক্কায় আহত হন এক ছাত্র।

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সভায় যেতেই বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন ছাত্র-ছাত্রীরা। পরে তিনি বেরনোর সময়ে হামলা করা হয় তাঁর গাড়িতে। বনেটে লিখে দেওয়া হয় ‘ব্রাত্য বসু চোর‘! এছাড়া ‘চোর-চোর’ এবং ‘গো ব্যাক স্লোগান’ তোলা হয় বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে। এই চরম পরিস্থিতিতে ভাঙে শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির কাচও।

শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি আটকে বিক্ষোভের চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারী ছাত্ররা। তখনই দেখা যায় ব্রাত্যর গাড়ির ধাক্কায় ছিটকে পড়ে যান এক ছাত্র। তাতেই মাথা ফেটে যায় তাঁর। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে চ্যাংদোলা করে উদ্ধার করেন ছাত্র-ছাত্রীরা।
গোটা পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে ফোন করা হলে তিনি জানান, ”আমার গাড়ি ঘিরে হামলা চালানো হয়েছে। কাচ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আমার ওপরও হামলার চেষ্টা হয়। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়া কখনই কাম্য নয়।”

অন্যদিকে ছাত্র-ছাত্রীদের বক্তব্য, “একজন শিক্ষামন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছিল। তাই বলে গাড়ি চাপা দিয়ে চলে যাবেন তিনি? এটা কি কাম্য?” সদ্য পাওয়া খবর, ঘটনার প্রতিবাদে এখন যাদবপুর এইট-বি বাস স্ট্যান্ডের সামনে অবরোধে বসেছেন ছাত্রছাত্রীরা।
পড়ুয়াদের বিক্ষোভ থেকে রেহাই পাননি অধ্যাপকেরাও। এক সময় প্রতিবাদী পড়ুয়াদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় ওয়েবকুপার সদস্যদের। যাদবপুরের অধ্যাপক তথা ওয়েবকুপার সদস্য ওমপ্রকাশ মিশ্রকে লাঠি হাতে তাড়া করেন বাম এবং অতি বাম সংগঠনের কয়েক জন পড়ুয়া। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যান। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ধস্তাধস্তির মধ্যে এক পড়ুয়ার মাথা ফেটেছে। আহত হয়েছেন দুই অধ্যাপক। এক মহিলা অধ্যাপকের শাড়ি ছেঁড়ার অভিযোগও উঠেছে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে।

ব্রাত্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরেও বিশৃঙ্খলা থামেনি। অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তৃণমূল প্রভাবিত কর্মচারী সংগঠনের অফিসে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার প্রতিবাদে যাদবপুর এইট বি মোড়ে রাস্তা অবরোধ করেন বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর পড়ুয়ারা। ওই পড়ুয়াদের বক্তব্য, শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোনোর সময় এক পড়ুয়া গাড়ির ধাক্কায় আহত হয়েছেন। তাঁর মাথা ফেটেছে বলে দাবি করা হয়েছে।
কী নিয়ে এত ঝামেলা?
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বসছে ওয়েবকুপার (তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন) বার্ষিক সাধারণ সভা। সেখানেই এসেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করেই সকাল থেকেই ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় ক্যাম্পাসে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়েই শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের দাবি জানায় বাম ছাত্র সংগঠনগুলি। এই ইস্যুকে ভিত্তি করে দফায়-দফায় অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে।
