কেকেআর ১৭৪/৮ (নারিন ৪৪, রাহানে ৫৬)
আরসিবি ১৭৭/৩ (সল্ট ৫৬, কোহলি ৫৯ )
আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচ ইডেনে। নাইটদের ঘরের মাঠ। কিং খান হাজির। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও ক্রিকেটের নন্দনকাননে। সব মিলিয়ে ক্রিকেটের মহাযজ্ঞ কলকাতায়। তার উপরে কলকাতা নাইট রাইডার্স গতবারের চ্যাম্পিয়ন। দিনান্তে উৎসব মুখর কলকাতায় মরশুমের প্রথম ম্যাচেই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা লজ্জার হারের সম্মুখীন। প্রিয় দল হেরে গেল বিরাট যুদ্ধে।
২২ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেটে ম্যাচ জেতে আরসিবি।
ফিল সল্ট ও বিরাট কোহলির যুগলবন্দিতে ইডেনে হারের মুখ দেখল কেকেআর।
প্রাক্তন নাইট কাঁটায় বিদ্ধ কেকেআর। গতবার আইপিএল জয়ী কেকেআর দলের সদস্য ছিলেন সল্ট। কিন্তু তাঁকে রিটেন করেনি কেকেআর। ১১.৫০ কোটি টাকার বিনিময়ে সল্টকে নিলামে কিনে নেয় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। সল্ট বেছে নিলেন তাঁর পুরনো দলকেই। কেকেআরের ১৭৪ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে সল্ট যেন নুন ছিটিয়ে দিয়ে গেলেন। তাঁকে একদিন অসম্মানের সঙ্গে ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই অসম্মানিত তারকাই ইডেন জুড়ে দাপট দেখালেন। শুধু কি তিনি একা! সঙ্গী ছিলেন বিরাট কোহলিও। এই দুই ব্যাটার শুরু থেকে আক্রমণের রাস্তা নিলেন। আর তাঁদের আক্রমণে শেষ কেকেআর।
৬ ওভারে কেকেআর করেছিল ৬০ রান। আরসিবি ৬ ওভারে তুলে নেয় ৮০ রান। এতেই বোঝা যাচ্ছে দুই আরসিবি ব্যাটারের দাপট। শুরু থেকে বিরাট-ঝড় তোলেন সল্ট ও কোহলি। ওই ঝড়ের সামনে উড়ে গেল কেকেআর। শনিবার ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা ছিল কলকাতায়। বিরাট ও সল্ট যেন ফিরলেন সেই ঝড় হয়ে।
রহস্য স্পিনার হিসেবে সমাদৃত বরুণ চক্রবর্তী। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বরুণ-রহস্য ভেদ করতে পারেনি প্রতিপক্ষরা। সেই বরুণকেও এদিন মলিন দেখাল। শেষমেশ বরুণ চক্রবর্তীই ফেরালেন সল্টকে। কিন্তু ততক্ষণে ৮.৩ ওভারে ৯৫ রান করে ফেলেছে বেঙ্গালুরু। ৩১ বলে ৫৬ রানের সল্টের ইনিংসে ছিল ৯টি বাউন্ডারি ও ২টি ছক্কা।
দেবদত্ত পারিক্কল বেশিক্ষণ টেকেননি। সুনীল নারিনের বলে মাত্র ১০ রানে থামতে হয় পাড়িক্কলকে। এর পরেও কি থামানো গেল আরসিবি-কে? যাবেই বা কীভাবে? অন্যপ্রান্তে যে ছিলেন বিরাট কোহলি। কেকেআরের বিরুদ্ধেই হাজার রান করে ফেলেন তিনি। এই ইডেনেই নিজের জন্মদিনে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করেছিলেন। সেই নন্দনকাননেই কোহলি ধরা দিলেন বিরাট অবতারে।
অধিনায়ক রজত পাতিদারও দলের সম্পদ কোহলির উপরে চাপ পড়তে দেননি। ১৬ বলে ৩৪ রান করে তিনি ফিরে যান। বাকি কাজটা করেন কোহলি। দিনের শেষে কোহলি অপরাজিত থেকে যান ৫৯ রানে। গতবারের চ্যাম্পিয়নরা হার দিয়ে শুরু করল আইপিএল অভিযান।
ক্রুনাল পাণ্ডিয়ার দাপটে কেকেআরকে ৮ উইকেটে ১৭৪ রানে আটকে রেখেছিল আরসিবি। তিন উইকেট নেন সিনিয়র পাণ্ডিয়া ব্রাদার। ফেরান অজিঙ্ক রাহানে, ভেঙ্কটেশ আইয়ার এবং রিঙ্কু সিংকে। তারমধ্যে পরের দু’জন বোল্ড। শুরুতে অজিঙ্ক রাহানে, সুনীল নারিন যেভাবে ব্যাট করছিলেন, মনে হয়েছিল কেকেআর অনায়াসেই ২০০ রানের গণ্ডি পেরিয়ে যাবে। কিন্তু আরসিবিকে ম্যাচে ফেরান ক্রুনাল।
তবে কেকেআরের অধিনায়কের প্রশংসা করতেই হবে। আইপিএলের মেগা নিলামের প্রথম দিন অবিক্রিত ছিলেন। দ্বিতীয় দিন বেস প্রাইজ মাত্র দেড় কোটিতে তাঁকে কেনে কলকাতা নাইট রাইডার্স। তারওপর আইপিএল চ্যাম্পিয়নদের অধিনায়ক নির্বাচিত হন। না চাইতেই যেন সবকিছু চলে এসেছিল রাহানের হাতের মুঠোয়। তার প্রতিদান দিলেন মুম্বইয়ের অধিনায়ক। আইপিএলের ১৮তম সংস্করণে প্রথম অর্ধশতরান এল রাহানের ব্যাট থেকে। ৩১ বলে ৫৬ রান করে আউট হন। ইনিংসে ছিল ৪টি ছয়, ৬টি চার। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দেন সুনীল নারিন। ২৬ বলে ৪৪ রান করে আউট হন। তবে রাহানে-নারিন ছাড়া বাকিরা ব্যর্থ।
শুরুতে হোঁচট খায় কেকেআর। বেগুনি জার্সিতে অভিষেক মনের মতো হয়নি কুইন্টন ডি ককের। ম্যাচের দ্বিতীয় বল বাউন্ডারিতে পাঠান। আইপিএল ২০২৫ এর প্রথম বাউন্ডারি। প্রথম ওভারে হ্যাজেলউডের তৃতীয় বলে ক্যাচ দেন প্রোটিয়া তারকা। কিন্তু মিস করেন সুয়াশ শর্মা। আগের বছর পর্যন্ত এই মাঠেই কেকেআরের জার্সিতে খেলেন তরুণ স্পিনার। কিন্তু পুরোনো মাঠে শুরুটা ভাল হয়নি। অবশ্য তার খেসারত দিতে হয়নি। জীবন ফিরে পাওয়ার ফায়দা তুলতে পারেননি ডি কক। ওভারের পঞ্চম বলে উইকেটের পেছনে জিতেশ শর্মার হাতে ধরা পড়েন। ৪ রানে আউট হন। তবে দ্রুত প্রথম উইকেট হারানো সুনীল নারিন এবং অজিঙ্ক রাহানেকে দমাতে পারেনি। রসিক সালামের ওভারে বিধ্বংসী মেজাজে পাওয়া যায় রাহানেকে। ওভারে ১৬ রান নেন। তারমধ্যে ছিল দুটো ছয়। মাত্র ২৯ বলে ৫০ রানের পার্টনারশিপ। পাওয়ার প্লের শেষে ১ উইকেট হারিয়ে কেকেআরের রান ছিল ৬০। প্রথম তিন ওভার মাত্র ৯ রান। পরের তিনে ৫১।
দুর্দান্ত রাহানে। মাত্র ২৫ বলে অর্ধশতরানে পৌঁছে যান কেকেআরের নেতা। ইনিংসে ছিল ৪টি ছয়, ৬টি চার। স্ট্রাইক রেট ২০০। শুরুতেই চমক রাহানে, নারিনের নতুন জুটির। ৯.৩ ওভারে ১০০ রানে পৌঁছে যায় কেকেআর। কিন্তু তারপরই পতনের শুরু। ব্যাক টু ব্যাক ওভারে আউট হন নারিন এবং রাহানে। ক্রুনাল পাণ্ডিয়া এসেই কেকেআরের ঝড় থামান। প্রাক ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনে আরসিবির কোচ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার বলেছিলেন, ক্রুনাল স্মার্ট ক্রিকেটার। তাই তাঁকে নেওয়ার জন্য অলআউট ঝাঁপিয়েছিল বেঙ্গালুরু। ফ্র্যাঞ্চাইজির সিদ্ধান্ত যে সম্পূর্ণ সঠিক ছিল, সেটা প্রমাণ করলেন ক্রুনাল। রাহানেকে ফেরানোর পর ম্যাচে ফেরে আরসিবি। বৃষ্টির জন্য দীর্ঘক্ষণ ইডেনের পিচ ঢাকা থাকায় আদ্রতা ছিল।
উইকেট থেকে কিছুটা সুবিধা পায় স্পিনাররা। গত মরশুমে ব্যাট করার সুযোগ পাননি। গোটা আইপিএলে মাত্র ১১৩ বল খেলেন। এবার সুযোগ ছিল রিঙ্কু সিংয়ের সামনে। কিন্তু ব্যর্থ। ১২ রানে ফেরেন। ব্যর্থ দলের সবচেয়ে দামী প্লেয়ার ভেঙ্কটেশ আইয়ারও। মাত্র ৬ রানে আউট হন। রাহানে আউট হওয়ার পরই কেকেআরের রানের গতি কমে যায়। রিঙ্কু, ভেঙ্কটেশ রান না পাওয়ায় সেই জায়গা থেকে রিকোভার করা সম্ভব হয়নি। ব্যর্থ আন্দ্রে রাসেলও (৬)। গুরুত্বপূর্ণ ৩০ রান যোগ করেন অঙ্গকৃষ রঘুবংশী। ২০ ওভারের শেষে ১৭৪ রান কেকেআরের। জোড়া উইকেট নেন জস হ্যাজেলউড। তিন উইকেট ক্রুনাল পাণ্ডিয়ার। এর পরেও থামানো গেল না আরসিবিকে।