
কলকাতার আকাশে বৃষ্টির ভ্রুকুটি উড়িয়ে ইডেনে শাহরুখ-শো হিট। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও হিট।
‘ঝুমে যো পাঠান’ গানের বিট বাজতেই জমে উঠল ইডেন গার্ডেন্স। শাহরুখের সুপারহিট গানের তালে একসঙ্গে নাচতে শুরু করলেন বলিউড বাদশা এবং ক্রিকেট রাজপুত্র বিরাট কোহলি। হ্যাঁ, মাঠে নামার আগে কোহলিকে পর্যন্ত নাচিয়ে ছাড়লেন শাহরুখ। কিং খানের আবেদন অস্বীকার করবেন কে!
২০০৮-এর বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী। ২০২৫-এর ইডেন গার্ডেন্স। মাঝে কেটে গিয়েছে দীর্ঘ ১৮ বছর। বহু ঘটনার স্রোত বয়ে গিয়েছে দেশের উপর দিয়ে। ভারতীয় ক্রিকেটের থ্রি মাস্কেটিয়ার্স শচীন তেণ্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল দ্রাবিড়রা ক্রিকেটারের শিরস্ত্রাণ খুলে রেখেছেন।
তিনি বিরাট কোহলি। সূচনার দিনও ছিলেন। এবারও রয়েছেন। সাবালক হয়ে উঠেছে আইপিএল। বিরাট কোহলি হয়ে উঠেছেন বনস্পতি। তিনি ফুল দিচ্ছেন, ফল দিচ্ছেন, ছায়া দিচ্ছেন। আগামিদিনেও তাঁকে দেখেই দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলতে আসবেন অসংখ্য তরুণ-যুবা।
সেদিন অর্থাৎ ১৮ বছর আগের বেঙ্গালুরুতে প্রথম ম্যাচে ঝড় তুলেছিলেন ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। এদিন শুরুতেই ঝড় তুলে দিলেন শাহরুখ খান। একমেবাদ্বিতীয়ম কিং খান। মঞ্চে কিং। বাইশ গজে আরেক কিং। সেটা অবশ্য আরও একটু পরে দেখা যাবে।
শাহরুখের কণ্ঠস্বরেই বোধন হয়ে গেল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের। বলিউড বাদশা যে এদিনের উদ্বোধনী মঞ্চে সঞ্চালনা করবেন, তা জানাই ছিল। শাহরুখ এলেন, দেখলেন আর জয় করে নিলেন।
আইপিএলকেই বিশ্বের সেরা ক্রিকেটীয় ইভেন্ট বললেন কিং খান। মনে করিয়ে দিলেন, এই ১৮ বছরে আইপিএলের দুনিয়া দেখেছে, ভযঙ্কর ইয়র্কার, ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে গ্যালারিতে উড়ে গিয়েছে ছক্কা, আইপিএল সেই ময়দান যেখানে তারকার আবির্ভাব ঘটে।
শাহরুখ যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই যেন শুরু করলেন শ্রেয়া ঘোষাল।
শুরুটাই করলেন কলকাতা-বাংলাকে হৃদয়ে জড়িয়ে। তাঁর সুরেলা কণ্ঠস্বর ধ্বনি তুলল, ”আমি যে তোমার…।”
তার পরে সময় যত গড়িয়েছে শ্রেয়া মায়াজাল বিছিয়ে দিলেন ইডেনে। সুরের মূর্ছনায় ভাসল কলকাতা। এক নিশ্বাসে গাইলেন, রঙ্গ দে বাসন্তী, ওম শান্তি ওম, বালম স্বামী, ভাগ মিলখা ভাগ। গাইলেন সব ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে। শেষ করলেন ‘বন্দে মাতরম’ গেয়ে।
কলকাতা আবার তিলোত্তমা হল। দীর্ঘ কয়েক বছর এই শহর দেখেনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সেই পিপাসা বোধ হয় এতদিনে মিটল। তারাদের উপস্থিতি ছিল। কে ছিলেন না সেখানে। বোর্ড প্রেসিডেন্ট রজার বিনি, নব্য সচিব দেবজিৎ সইকিয়া-সহ বিসিসিআই-এর একাধিক প্রশাসক। ছিলেন আরও অনেকে।
ধোনির বায়োপিকে ‘প্রিয়াঙ্কা ঝা’-র ভূমিকায় অভিনয় করে চমকে দিয়েছিলেন দিশা। সেই দিশা পাটানি এদিন শুরুই করলেন ‘পাগল হয়ে হয়ে যাব’ গানের সঙ্গে পা মিলিয়ে। মঞ্চ মাতালেন করণ আউজালও।
গত কয়েকদিন ধরে হাওয়া অফিসের চৈতাবনী ছিল, বৃষ্টিতে ভাসতে পারে কলকাতা। সেই আশঙ্কা এখনও রয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, উদ্বোধনী ম্যাচের বল গড়াবে তো শেষমেশ, এমন আশঙ্কার বাণীই ঘোরাফেরা করছিল কলকাতার আকাশ বাতাসে।
কেউ কেউ ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গও টেনে এনেছিলেন। সেবারের অনুষ্ঠান ভেস্তে গিয়েছিল বৃষ্টি-দমকা হাওয়ায়। লেজার শো হওয়ার কথা ছিল ইডেনে। সেটাও এলোমেলো হাওয়ায় নষ্ট হয়ে যায়। সেবার আর এবারের মধ্যে যে অনেক পার্থক্য।
আশঙ্কা, দুর্ভাবনা-উদ্বেগকে ব্যাকফুটে ফেলে দিয়ে কলকাতা আবার উজ্জ্বল-ভাস্বর স্বমহিমায়। বহু বছর পরে এরকম এক ঝলমলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হল কলকাতায়। ইডেন সুপারহিট।
শাহরুখ মঞ্চে ডেকে নিলেন কোহলিকে। বললেন, ”প্রথম দিন থেকে ১৮ বছর ধরে এক ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়েই খেলে যাচ্ছে বিরাট ভাই।”
ইডেন উত্তাল। ধ্বনি উঠল, ”কোহলি-কোহলি।” আগামী দু’মাস দেশের শ্বাসপ্রশ্বাসে কেবল কোহলি-ধোনি-রোহিত।
অপেক্ষার অবসান! আইপিএল ২০২৫- ইডেন গার্ডেন্সে মুখোমুখি অজিঙ্ক রাহানের নেতৃত্বে কলকাতা নাইট রাইডার্স ও রজত পাতিদারের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।
ক্রিকেট ও বিনোদনের মহামিলন, বিশ্বের অন্যতম সেরা টি-টোয়েন্টি লিগের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্স প্রস্তুত, দুই দলও তৈরি।
ইডেন গার্ডেন্সে টস ভাগ্যে জয়ী হল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। অধিনায়ক রজত পাটীদার প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কলকাতা নাইট রাইডার্সকে দ্রুত চাপে ফেলতে চান তিনি। ইডেনের পিচে বোলারদের জন্য কিছুটা সুবিধা থাকতে পারে, তাই শুরুতেই বিপক্ষকে চেপে ধরতে চায় বেঙ্গালুরু শিবির। ব্যাটিংয়ে বড় রানের লক্ষ্য তাড়া করতে তৈরি থাকবেন কোহলি-সল্টরা।