
কলকাতার বিশিষ্ট চিত্র শিল্পী মহিনী বিশ্বাসের মোবাইল থেকে কল এসেছিল বনগাঁ পুরসভার পুর প্রধানের কাছে । তাঁর প্রশ্ন ছিল দাদা , এ বার একুশে -র অনুষ্ঠান হচ্ছে তো ? ‘ভাষা দিবসে’র জন্য একটি ছবি এঁকেছি বাংলাদেশ’ কে উপহার দেব । মুহুর্তেই হতাশাভরা উত্তর পেলেন তিনি !

বাংলাদেশের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির কারণে আমরা এ বার ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ দু’দেশের যৌথ উৎসবে থাকছি না। আমরা বনগাঁ শহরে ইছামতির তীরে নিজেদের মতো করে উৎসব পালন করব। পুরসভার পক্ষ থেকে স্থায়ী ভাবে ভাষা-শহিদদের স্মরণে শহিদ বেদি তৈরি করা হচ্ছে বলে শিল্পী মোহিনী বিশ্বাসকে জানিয়েছেন বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ ।
বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, প্রতি বছর দু’দেশের যৌথ ‘ভাষা উৎসব’-এর জন্য দু’দেশের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হত। তৎপরতা চোখে পড়ত। বনগাঁ পুরসভা, ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত এবং বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতি। এ দেশের তরফে একসঙ্গে উৎসবের আয়োজন করত । কিন্তু এ বার বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা কেউ তাঁদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করেননি । তিনি আরো জানান , পঞ্চায়েত সমিতি থেকে বিএসএফের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলে আমরা পেট্রাপোল এলাকায় পঞ্চায়েতের থেকে আলাদা অনুষ্ঠান করব। নো ম্যানন্স ল্যান্ডে যৌথ উৎসব এ বার না হওয়ার সম্ভাবনা ।
প্রতি বছর বনগাঁর যে সব সাধারণ মানুষ উৎসবে শামিল হতেন, তাঁদের একাংশ মনে করছেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার আর ভাষা-উৎসব বা তার আবেগকে গুরুত্ব দেবেন না। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের বাড়ি যে ভাবে ভাঙা হয়েছে, যে হারে অশান্তি চলছে, তাতে উৎসব হবে না বলেই তাঁরা ধরে নিয়েছেন। একইসঙ্গে হতাশাও প্রকাশ করেছেন।
বনগাঁ ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েতের শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্য সঞ্চালোক পরিতোষ বিশ্বাস বলেন, প্রতি বছর বনগাঁ – কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলার যে সব সাধারণ মানুষ এই উৎসবে শামিল হতেন, তাঁদের অনেকেই মনে করছেন, বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের বাড়ি যে ভাবে ভাঙা হয়েছে, যে হারে অশান্তি চলছে, তাতে বর্তমান ইউনুস সরকার আর ভাষা-উৎসব বা তার আবেগকে বিশেষ গুরুত্ব দেবেন না। তাতে উৎসব হবে না বলেই তাঁরা ধরে নিয়েছেন। গত বছর পর্যন্ত দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ উৎসবে শামিল হয়েছেন । ২১ ফেব্রুয়ারি কিছুক্ষণের জন্য দু’দেশের সীমান্ত খুলে দেওয়া হত। দু’দেশের ভাষাপ্রেমীরা অবাধে যাতায়াত করতেন। ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ যৌথ অনুষ্ঠান-মঞ্চ হত। দু’দেশের শিল্পীরা সেখানে অনুষ্ঠান করতেন। মঞ্চে দু’দেশের অতিথিরাও থাকতেন। নিরাপত্তার কারণে কয়েক বছর আগেই মঞ্চ বেঁধে অনুষ্ঠান বাতিল হয়। তবে, ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ দু’দেশের অতিথি এবং বিশিষ্টদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান হচ্ছিল। বাংলাদেশের ভাষা-শহিদদের স্মরণে অস্থায়ী শহিদ বেদিতে মালা দেওয়া হত। চলত মিষ্টি-ফুল বিনিময়, পরস্পরকে আলিঙ্গনও।