দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী রাষ্ট্র সংঘাতের পথ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই ফের নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়। জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগর উপত্যকায় শনিবার রাতে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। অস্ত্রবিরতির কী হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জম্মু, উধমপুর-সহ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বেশ কিছু শহরে ব্ল্যাকআউট করা হয়। শুধু কাশ্মীর উপত্যকাতেই নয়, পাকিস্তান সীমান্তবর্তী অন্য রাজ্যগুলিতেও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করা হয় শনিবার রাতে। রাজস্থানের বারমেঢ়, জৈসলমের এবং পঞ্জাবের ফিরোজ়পুর, পঠানকোট, মোগায় ব্ল্যাকআউট করে দেওয়া হয়।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলল ভারত। শনিবার রাত ১১টার কিছু আগে সাংবাদিক বৈঠকে ভারতীয় বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী বলেন, “গত কয়েক ঘণ্টা ধরে অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করে যাচ্ছে পাকিস্তান। ভারতীয় সেনাও জবাব দিচ্ছে। এই লঙ্ঘন অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং এর জন্য দায়ী পাকিস্তান।”
শনিবার বিকেলেই ভারত এবং পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়েছে। বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী জানান, শনিবার দুপুর ৩টে ৩৫ মিনিটে ভারতীয় সেনার ডিরেক্টর জেনারেল মিলিটারি অপারেশন (ডিজিএমও)-কে ফোন করেন পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেল মিলিটারি অপারেশন (ডিজিএমও)। তার পর দু’পক্ষই গোলাগুলি এবং সামরিক অভিযান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার বিকেল ৫টায় সংঘর্ষবিরতি চুক্তির (Ceasefire) ঘোষণা হয়েছিল। কিন্তু সেই ঘোষণার মাত্র ৩ ঘণ্টা পরই তা লঙ্ঘন করে পাকিস্তান (Pakistan)। জম্মু-কাশ্মীরের সীমান্ত লাগোয়া অন্তত ১১ জায়গায় গুলিবর্ষণ করে তারা। পাশাপাশি ড্রোন হামলারও চেষ্টা করা হয়। পাক হামলার জেরে সীমান্তে শহিদ হয়েছেন বিএসএফের (BSF) এক সাব-ইন্সপেক্টর মহম্মদ ইমতিয়াজ। আরও ৭ জন আহত বলেও জানা গেছে।
জম্মু-কাশ্মীরের আরএস পুরা সেক্টরে পাক হামলা সামাল দিচ্ছিলেন বিএসএফের এক সাব-ইন্সপেক্টর মহম্মদ ইমতিয়াজ সহ বাকিরা। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই মৃত্যুর খবরও পোস্ট করেছে বিএসএফ জম্মু। আরও যে ৭ জন আহত হয়েছেন তাঁরা নিকটবর্তী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানা গেছে।
https://x.com/bsf_jammu/status/1921210698123612181?t=z2zWrW3Sg8ofymFDk660Ow&s=19
এদিন সন্ধে সাড়ে ৭টার কিছু পরই জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে গুলির আওয়াজ পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, জম্মু-শ্রীনগর সহ একাধিক এলাকায় সাইরেন বাজাতে হয়েছে এবং সেখানে ড্রোন হামলা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। জম্মু-কাশ্মীরের বারামুলা, বদগামেও গুলির আওয়াজ পাওয়া গেছে। ভূ-স্বর্গ ছাড়া রাজস্থানের বাজমেড়ে সাইরেন বাজানো হয়েছে। সেখানেও ব্ল্যাকআউট করে দেওয়া হয়েছে।
যদিও শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, সীমান্তে গোলাবর্ষণ বন্ধ করেছে পাকিস্তান। ভারতের তরফ থেকে ড্রোন হামলা সহ যাবতীয় পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়া হয়েছে। একাধিক পাক ড্রোন গুলি করে নামিয়েছেন জওয়ানরা। তবে তাঁরা সতর্ক। কারণ আবারও পাক সেনা হামলা করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হওয়ার পর জম্মু-কাশ্মীর সহ সীমান্তবর্তী রাজ্যের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন পরিস্থিতি আবার আগের মতো স্বাভাবিক হবে। কিন্তু তা হয়নি। এই সংঘর্ষবিরতি চুক্তি কতদিন স্থায়ী হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গেছে ইতিমধ্যে।