পণ্য পরিবহণে বাংলাদেশকে জোরালো ধাক্কা দিল ভারত। মঙ্গলবার জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ইনডিরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (CBIC) বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট ফেসিলিটি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। অর্থাৎ, ভারতের ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন, এয়ারপোর্ট এবং পোর্ট ব্যবহার করে অন্য দেশে পণ্য পাঠাতে পারবে না বাংলাদেশ।
ভারতের মাটি ব্যবহার করে মূলত নেপাল, ভুটান এবং মিয়ানমারে পণ্য পরিবহণ করত বাংলাদেশ। ২০২০ সালের জুন মাসের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশকে এই সুবিধা দিচ্ছিল ভারত। তা এ বার বন্ধ হবে। এর জেরে নেপাল, ভুটান এবং মিয়ানমারের মতো দেশে পণ্য পাঠাতে প্রবল সমস্যায় পড়বে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস চিন সফর থেকে ফিরে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন, তাতে নিন্দার ঝড় ওঠে ভারতের অন্দরে। এর পরই এই পদক্ষেপ করা হলো। যদিও কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, ট্রাম্প ট্যারিফের জেরে পরিবর্তিত পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্যই তা এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের উপর ২৬ শতাংশ ট্যারিফ চাপানোর জেরে ভারতীয় পণ্যের রপ্তানি মার্কিন মুলুকে কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই ভারতীয় ব্যবসায়ীদের একাংশ অনেক দিন ধরেই এই সুবিধা বাতিলের দাবি জানাচ্ছিল। ভারতের মাটি ব্যবহার করে বাংলাদেশ রেডিমেড পোশাক, ফল, মাছ-সহ বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ করত। এর জন্য কোনও শুল্ক এতদিন দিতে হতো না বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের রেডিমেড পোশাক ভারতীয় বস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এই সিদ্ধান্তে ভারতীয় পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলি সুবিধা পাবে।
এ বিষয়ে গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (GTRI)-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেছেন, ‘এত দিন ভারতের মাটি ব্যবহার করে সস্তায় পণ্য পরিবহণ করার সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি এক্সপোর্টার এবং ইমপোর্টারদের সমস্যা বাড়তে পারে। কিন্তু সম্প্রতি ইউনূস যে মন্তব্য করেছেন তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। তাই এই সিদ্ধান্তের গুরুত্ব অনেক বেশি।’
ইউনূস বলেছিলেন, ‘ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি ল্যান্ডলকড রিজ়িয়নে রয়েছে। সাগরের সঙ্গে সরাসরি তাদের যোগাযোগ নেই। আমরাই (বাংলাদেশ) এই এলাকার একমাত্র অভিভাবক। এটা বড় সুযোগ করে দিয়েছে। চিনা অর্থনীতির জন্য তা অনেক সুযোগ তৈরি করতে পারে।’ ইউনূসের এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছিল নয়াদিল্লি। ভারতের চিকেন নেকের কাছে অবস্থিত বাংলাদেশের লালমণিরহাটে চিনের সাহায্যে স্ট্র্যাটেজিক এয়ারবেস গড়ার প্রস্তাবেও ক্ষুব্ধ হয় নয়াদিল্লি। তার পরই এই সিদ্ধান্ত সামনে এল।
বাংলাদেশের মধ্যে দিয়েও উত্তর-পূর্ব ভারতে পণ্য পরিবহণ করে ভারত। এই সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ কী পদক্ষেপ করে সে দিকেও নজর রয়েছে ভারতের। ভারত এবং বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজ়েশনের সদস্য। সেখানে এই বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানাতে পারে ঢাকা।