
যে ভারতের হাত ধরে স্বাধীনতার মুখ দেখেছিল, সেই ভারতের বিরুদ্ধেই বিদ্বেষের চাষ হচ্ছে গোটা দেশে। যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে পদ্মপাড়ে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল ভারত, সেই পাকিস্তানই এখন তাঁদের প্রিয় বন্ধু। কথা হচ্ছে বাংলাদেশ নিয়ে। এই বাংলাদেশ থেকেই এবার বেশ কিছু পণ্য সোজাপথে ভারতে ঢুকতে পারবে না। কোন কোন পণ্য এই তালিকায় রয়েছে শনিবার সেই তালিকা দিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের অধীনে থাকা বৈদেশিক বাণিজ্য দফতর (DGFT)। তাতেই হইচই পড়ে গিয়েছে দুই দেশে। শোরগোল শুরু হয়ে গিয়েছে ইউনুস প্রশাসনের অন্দরেও।

বৈদেশিক বাণিজ্য দফতর, এখন থেকে ভারতের সব সীমান্ত বা বন্দর থেকে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাবার, প্লাস্টিকের জিনিসপত্র, কাঠের আসবাব, রঙ কিছুই আর আমদানি করা যাবে না। তবে ভারত হয়ে নেপাল-ভুটান যেতে কোনও সমস্যা নেই। ভারতের এই সিদ্ধান্তেই মাথায় হাত সে দেশের ব্যবসায়ীদের। উদ্বেগের ছবি ধরা পড়েছে স্পষ্টতই।

বাংলাদেশের প্রথমসারির সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, ইতিমধ্যেই সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করে দিয়েছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা। তাঁরা স্পষ্টতই বলছেন ভারতের এই বিধিনিষিধে দেশের রপ্তানি ক্ষেত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের জিনিসপত্র এসেছিল। এই সব কিছুর মধ্যে রেডিমেড পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্যই বেশি ছিল। তাতেই যদি কোপ পড়ে যায় তাহলে ব্যবসায় যে কোপ পড়বে তা বলাই বাহুল্য।
অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতে স্থলপথে বাণিজ্য করা অনেকটাই সহজ। জিনিস আদান-প্রদানে সময় অনেক কম লাগে। কিন্তু, অন্য ক্ষেত্রে তা লাগে না। তবে এ ক্ষেত্রে মনে রাখ ভাল, গত ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) স্থলপথে ভারত থেকে সুতা আমদানি নিষিদ্ধ করে। এবার ভারতের নতুন সিদ্ধান্তে জোরদার চাপানইতোর সে দেশে। সে দেশের বাণিজ্যসচিব মো. মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলছেন, “বিচ্ছিন্নতা বাড়লে দু-দেশের বাণিজ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আমরা এ নিয়ে ভারতের সঙ্গে দর কষাকষি করব।” চাপানউতোর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলেও।

উল্লেখ্য, শনিবার ভারত সরকারের বাণিজ্য এবং শিল্প বিষয়ক মন্ত্রকের অধীন ডিজিএফটি বা ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফরেন ট্রেড’-র তরফে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বাংলাদেশে তৈরি সব রকমের ‘রেডিমেড গার্মেন্টস’ এ বার থেকে শুধু নৌবন্দর দিয়েই ভারতে প্রবেশ করবে।
সে ক্ষেত্রে কলকাতা এবং মুম্বই বন্দরকে প্রবেশপথ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে৷ ফল, প্রসেসড ফুড, ঠান্ডা পানীয়, চিপস, কাঠের আসবাবপত্র, পিভিসি পাইপ — কোনও ভাবেই অসম, মিজ়োরাম, ত্রিপুরা এবং পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ি ল্যান্ড পোর্ট দিয়ে ভারতে ঢুকবে না বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

বাংলাদেশের মাছ, ভোজ্য তেল, স্টোন চিপস এবং এলপিজি আমদানির ক্ষেত্রে অবশ্য এই নিষেধাজ্ঞা থাকছে না ।
ঘটনাচক্রে, এপ্রিলের মাঝামাঝি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তারা আর ভারত থেকে স্থলপথে সুতো আমদানি করবে না। তার আগে বাংলাদেশের পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছিল ভারত সরকার।

মোদী সরকারের তরফে গৃহীত ওই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতের বন্দর ব্যবহার করে অন্য কোনও দেশে নিজেদের পণ্য রপ্তানি করতে পারবে না বাংলাদেশ। এ দিন জারি নিষেধাজ্ঞার আওতা থেকে অবশ্য বাদ রাখা হয়েছে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিকে।