দেশের সময় কলকাতা : সাড়ে ন’টা থেকে রাত সওয়া ১২টা। প্রায় পৌনে ৩ ঘণ্টা ধরে স্বাস্থ্যভবনে আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করলেন রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। কিন্তু সমাধান সূত্র কি বের হল?
বৈঠক শেষে আন্দোলনকারীরা সাফ জানালেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে তবে তো সমাধান সূত্র বের হবে। আমাদের সহকর্মীরা টানা ১০০ ঘণ্টা ধরে অনশনে রয়েছেন, জল ছাড়া কিছু খাননি অথচ সরকার বলছে, পুজো চলছে, আন্দোলন তুলে নাও। আমরা কথা দিচ্ছি, পুজোর পর সব দাবি পূরণ করব।’
আন্দোলনকারীদের আরও প্রশ্ন, ‘যেখানে ই-মেলের জবাব আসে ৯৬ ঘণ্টা পরে সেখানে কোন ভরসায় মৌখিক আশ্বাসে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করব?’
আন্দোলনকারীরা আরও বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম, বৈঠক থেকে কোনও সমাধান সূত্র বের হবে। কিন্তু আজকের বৈঠকে সদর্থক আলোচনা তো দূরে থাক, প্রশাসনের তরফে লিখিত প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়নি। ফলে আশাহত হওয়া ছাড়া কিছু জোটেনি।”
তাঁদের বক্তব্য, আসলে যে দাবিতে আন্দোলন তার সমাধান করা নয়, বরং যেন তেন প্রকারেন অনশন কর্মসূচি তুলে দেওয়াটাই ছিল সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু দাবি পূরণ না হলে সেটা যে সম্ভব নয়, তা স্পষ্ট করেছেন আন্দোলনরত পড়ুয়ারা। স্বাস্থ্য ভবন ছেড়ে যাওয়ার আগে তাঁরা এও জানিয়েছেন, অনশন কর্মসূচি যেমন চলছে চলবে, ধর্মতলায় ফিরে ফের বৈঠকে বসে পরবর্তী পদক্ষেপ জানানো হবে।
বৈঠক শেষে ধর্মতলার অনশন মঞ্চে ফিরে গিয়েও সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদেরই এক জন আশফাকউল্লা বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ভবনে ডেকে অপমান করা হয়েছে। মিটিং ডাকতে হয়, তাই ডেকেছেন। কোনও অ্যাকশন প্ল্যান হাতে ছিল না। মিটিংয়ে যা হয়েছে, ইমেল করে দিলেও বুঝে যেতাম। আমরা মৃত্যুকে ভয় পাই না। মিথ্যেকে ভয় পাই।’’
যদিও বৈঠকের পর মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ বলেন, “রাজ্যের তরফে ইতিমধ্যে সবধরণের দাবি পূরণের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু রাতারাতি সব কিছু একসঙ্গে পূরণ করা তো সম্ভব নয়। আমাদেরও কিছু সময় দিতে হবে। আশা করব, আন্দোলনকারীরাও সদর্থক ভূমিকা পালন করবেন। এদিনও আমরা ওদের অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছি।”
প্রসঙ্গত, স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুত নির্যাতিতার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যসচিবের পদ থেকে নারায়ণস্বরূপ নিগমকে অপসারণ করা, হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা-সহ ১০ দফা দাবিতে গত শনিবার থেকে ধর্মতলায় অনশন শুরু করেছেন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা।
যদিও গত সোমবার নবান্ন থেকে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণা করেন, ডাক্তারদের সুরক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়েই দেখছে সরকার। ‘রাত্তিরের সাথী’ প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ৪৫ শতাংশের বেশি সিসিটিভির কাজ হয়ে গেছে। এছাড়া ওয়াশরুম সংক্রান্ত ৬৫ শতাংশ কাজ এগিয়ে গেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে ৯০ শতাংশ কাজ হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যসচিব।
তিনি এও বলেন, ১৫ অক্টোবর থেকে পাইলট প্রজেক্টের কাজ শুরু হবে। সব ঠিক হলে প্যানিক বটন-এর কাজ শুরু হবে পয়লা নভেম্বর থেকে। পাল্টা হিসেবে সেদিনই আন্দোলনকারীদের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, শুধু মৌখিক আশ্বাস নয়, দাবি পূরণে নির্দিষ্ট সময়সীমা দিতে হবে।
জানা যাচ্ছে, ,সমাধান সূত্র বের করতে এদিন আন্দোলনকারীদের ই-মেল করা হয় রাজ্যের তরফে। এরপরই স্বাস্থ্য ভবনের বৈঠকে যোগ দেন আন্দোলনকারীরা।
প্রশাসনের তরফে বৈঠকে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী এবং ডিজি রাজীব কুমার। অন্যদকে আন্দোলনকারীদের তরফে ২০ জন জুনিয়র চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন।