* কুমুদিনী স্কুলে এবার উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছিলেন ২৭৯ জন। ৩৭ জন ইংরেজিতে পাশ করতে পারেননি। পাশ না করালে আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা।
দেশের সময় : ১০ জুন প্রকাশিত হয়েছে এবারের উচ্চমাধ্যমিকের ফল ৷ যদিও পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি অনেকেই। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেই পাশের দাবিতে সরব হয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। প্রায় সব জেলাতেই এই ধরনের ছবি দেখা যাচ্ছে। বাদ যায়নি উত্তর ২৪ পরগনাও ।
এই জেলার কুমুদিনী স্কুলে এবার উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছিলেন ২৭৯ জন। আর তার মধ্যে থেকে ৩৭ জন ইংরেজিতে পাশ করতে পারেননি। তাঁদের কথায়, পরীক্ষার আগে সিলেবাসের বিভিন্ন রকম পরিবর্তন হয়েছে। তারপর অফলাইন ও অনলাইন নিয়ে নানান ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছিল। তার জেরেই তাঁদের পরীক্ষা দিতে বেশ কিছু সমস্যা হয়। কিন্তু, একসঙ্গে এতজনের ইংরেজিতে ব্যাক আসার বিষয়টি একেবারেই অসম্ভব বলে দাবি করছেন তাঁরা। তাই পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে স্কুলের সামনে যশোর রোডের উপর অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। এমনকী, পাশ না করালে আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছেন।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে ওই স্কুলের সহ শিক্ষিকা পদ্মাবতী মণ্ডল বলেন, “ছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছে। আসল তারা ভেবেছিল যে স্কুল থেকে হয়তো প্রোজেক্টের নম্বর কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, তা একেবারেই ঠিক নয়। সবাইকেই ঠিক করে নম্বর দেওয়া হয়েছে। যার যেমন প্রাপ্ত তাকে তেমন নম্বরই দেওয়া হয়েছে। তারা যতক্ষণ না পর্যন্ত হাতে মার্কশিট পাচ্ছে ততক্ষণ কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।”
তবে শুধুমাত্র কুমুদিনী স্কুলের ঘটনাই নয়। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার , দত্তপুকুর নিবাধুই বালিকা বিদ্যালয়ের ৫৭ জন ছাত্রী অকৃতকার্য হন। সোমবার তাঁরা দত্তপুকুর স্টেশন অবরোধ করেন। কিছু সময় অবরোধ শুরু হলে পুলিশ গিয়ে অবরোধ সরিয়ে রেল চলাচল স্বাভাবিক করে। দত্তপুকুর থানার পুলিশ গিয়ে অবরোধকারীদের সরিয়ে দিলে তাঁরা তাঁদের বিদ্যালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
অন্যদিকে হাটথুবা কালিবালা স্কুলেও ঘটেছে এই ধরনের ঘটনা। সেখানে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৫০ জন ইংরেজিতে অসফল হন। এদিকে ফেল করার পর হাবড়া থানার দ্বারস্থ হন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, বাংলায় লেটার পাওয়া সত্ত্বেও কি করে একইসঙ্গে সব ছাত্রী ইংরেজিতে ফেল করেন।
পাশাপাশি হাবড়ার কামিনী কুমারের কিছু ছাত্রীও এদিন একই অভিযোগ নিয়ে থানার দ্বারস্থ হন। মোট ৭৫ জন ছাত্রী পুলিশের দ্বারস্থ হন। তাঁদের অভিযোগ, সকলেই ইংরেজিতে ফেল করেছেন। এদিকে খাতা রিভিউ করতে গেলে অনেকটা সময় লেগে যাবে। তাই থানার দ্বারস্থ হন তাঁরা। থানার আধিকারিক অরিন্দম মুখার্জি জানিয়েছেন, লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করা হোক তাহলেই তদন্ত করে দেখা হবে
এর পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিকে অকৃতকার্য ছাত্র-ছাত্রীদের পাশ করানোর দাবিতে কাঁচড়াপাড়া বাগমোড়ে বিক্ষোভ দেখান হালিশহর মল্লিকবাগ হাইস্কুলের পড়ুয়ারা। ফেল করা পড়ুয়াদের পাশ করানোর দাবিতে সোমবার বেলায় কাঁচড়াপাড়া বাগমোড়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। পড়ুয়াদের অভিযোগ, ভালো পরীক্ষা দেওয়া সত্ত্বেও তাঁদেরকে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে পৌঁছয় বীজপুর থানার পুলিশ। তারপর পড়ুয়াদের রাস্তা থেকে হটিয়ে দেওয়া হয়।
বনগাঁর যশোর রোডের মতোই পথ অবরোধ হয় হুগলির চুঁচুড়ায়। চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড়ে সোমবার সকাল থেকেই বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন উচ্চ মাধ্যমিকে অসফল ছাত্র-ছাত্রীরা। দেশবন্ধু গার্লস নারী শিক্ষামন্দির, জ্যোতিষচন্দ্র বিদ্যাপীঠ-সহ বেশ কয়েকটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা অবরোধে শামিল হন। অবরোধের জেরে রাস্তায় যানজট দেখা দেয়। পরে চুঁচুড়া থানার পুলিশ গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বুঝিয়ে অবরোধ তোলার চেষ্টা করে। উত্তর ২৪ পরগনা বা হুগলির মতোই বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে বীরভূমে।
বজবজ ট্রাঙ্ক রোড অবরোধ করেন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ফেল করা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মহেশতলার সারেঙ্গাবাদ হাই স্কুল ও যজ্ঞেশ্বরী গার্লস হাই স্কুলের পড়ুয়ারা। পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান শিলিগুড়ির মোট ৮ স্কুলের পড়ুয়ারা অকৃতকার্য হওয়ার কারণ জানতে চেয়ে দীর্ঘক্ষণ হাসমিচক অবরোধ করেন তাঁরা৷
এত সংখ্যক পরীক্ষার্থী কীভাবে অসফল হতে পারেন, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ছাত্রীরা। বেশিরভাগই ইংরেজিতে পাশ করতে পারেননি। তাঁদের অভিযোগ, স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়া ছাত্রছাত্রীরাও উচ্চমাধ্যমিকে অকৃতকার্যের তালিকায় রয়েছেন। যা একেবারেই অসম্ভব। পরীক্ষার উত্তরপত্রগুলির সঠিক মূল্যায়ন হয়নি বলেই দাবি তাঁদের।