অরিত্র ঘোষ দস্তিদার : ‘তাকেই বলি শ্রেষ্ট শিক্ষা, যা কেবল তথ্য পরিবেশন করে না, যা বিশ্ব সত্ত্বার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে’ – কথাটি বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ‘শিক্ষা’ মানুষের সাথে মানুষের ও বিশ্বসত্ত্বার সাথে যোগাযোগের সেতুবন্ধন তৈরি করে। একটা জাতি গড়ে ওঠে সঠিক শিক্ষা পেলে। আবার শিক্ষার অভাবে একটা জাতি ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়। বাঙালি জাতির অতীত ও বর্তমান অবস্থা সে কথার প্রমাণ দেয়। রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, ঋষি অরবিন্দ, নেতাজী সুভাষ, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি প্রভৃতি স্মরণীয় ব্যক্তিত্বের আদর্শে গড়ে ওঠা অবিভক্ত বঙ্গপ্রদেশ বা বিভক্ত পশ্চিমবঙ্গ আজ কোন দিকে এগিয়ে চলেছে, তা পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট বোঝা যাবে। বাঙালির চিন্তায়, চেতনায় বর্তমানে রয়েছে পরানুকরণতা। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন -“হে ভারত, এই পরানুবাদ, পরানুকরণ, পরমুখাপেক্ষা, এই দাসসুলভ দুর্বলতা, এই ঘৃণিত জঘন্য নিষ্ঠুরতা – এইমাত্র সম্বলে তুমি উচ্চাধিকার লাভ করিবে?”
স্বামী বিবেকানন্দের এই জিজ্ঞাসা আজও কতটা প্রাসঙ্গিক তা সমাজের দিকে লক্ষ্য করলে স্পষ্ট উপলব্ধি করা যায়। এই মানসিকতাকে ঝেড়ে ফেলে নতুন করে দেশকে গড়তে এগিয়ে এসেছে একদল তরুণ উদ্দমী। গড়ে তুলেছে ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’। বাংলার এই আদর্শকে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত করার জন্য আজ এই আয়োজন করেছিল তারা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বদেশী ভাষা, সংস্কৃতি ও শিক্ষার বাণী তুলে ধরে, শিক্ষা সঞ্চারের কাজ।
‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’-এর পক্ষে শুভ দোলপূর্ণিমা পরবর্তী হোলি উৎসবের দিনে বাঁকুড়া জেলার ছাতনা ব্লকের অন্তর্গত বেলা কুঁড়ি গ্রামে সমাজসেবী ছাত্র শ্রীমান অসীমলাল মুখার্জির নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হল ছাত্রদের ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য পথ প্রদর্শন ও কার্যকরী সহযোগিতার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কার্যক্রমের সূত্রপাত। গ্রামের তিরিশটি ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে তৈরি হচ্ছে তথ্য সংগ্রহের কাজ। তাদের বিস্তারিত পরিচয় নেওয়া হচ্ছে, তাদের পূর্ববর্তী সাফল্যের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে, আগামী সম্ভাবনার কথাও লেখা হচ্ছে।এই তথ্য সংগ্রহের কাজ যেমন চলবে ধারাবাহিকভাবে, তেমনি সময়ে সময়ে তাদের সচেতন করানো হবে নানান বিষয়ে। দেখা হবে কার কোন বিষয়ে আগ্রহ ও ভালোবাসা।দেখা হবে কোন ছাত্রের কোন দিকে পারদর্শিতা,কোন শখ, কোন ইচ্ছে,তাদের মনের গহনে,কোন পথে তাদের সর্বোত্তম বিকাশ লাভ সম্ভব।বছরের নানান সময় তাদের সঙ্গে মিশবেন প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাবিদ এবং উচ্চ শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রেরা।সব কিছু লিপিবদ্ধ আকারে রাখার পরই শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে,সে কোন বিষয় নিয়ে উচ্চতর শিক্ষালাভ করবে। জানিয়ে দেওয়া হবে তাদের অভিভাবকদের। সাধ্যমতো যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হবে নানান মহলে, যাতে সহায়তা পান।
বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও অধ্যাপক ড. কল্যাণ চক্রবর্তীকে প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন এই কার্যক্রমের। ড. চক্রবর্তী জানান -“শিক্ষার্থীরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তারা এক একটি নতুন চারাগাছ। তাদেরকে স্বামী বিবেকানন্দের দেখানো পথে চারিত্রিকভাবে গড়ে তুলতে হবে। তারাই পারে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে। ওরা সবুজ, ওরা কাঁচা। আধ মরাদের ঘা মেরে ওরাই বাঁচিয়ে তুলতে পারে। ওদের হাতেই ‘নতুন স্বাবলম্বী ভারত’ গড়ে উঠবে। ওদের গড়ে তোলা ভারত ‘বিশ্বগুরু’র আসন দখল করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
এদিনের অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন -বেলকুড়ি গ্রাম এবং আশেপাশের গ্রামগুলির স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’-এর পক্ষ থেকে অসীম লাল মুখার্জি।। আজকের দিনে শিক্ষার গুরুত্ব প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন যে, “আজকের যুব সমাজ আদর্শহীনতায় ভুগছে। তারা সঠিক পথের সন্ধান পাচ্ছে না। স্বামী বিবেকানন্দের জীবনবোধ ও তাঁর দেখানো পথে বর্তমান যুব সমাজ যাতে নিজেদের চরিত্র নির্মাণ করে, তাঁর আদর্শে যাতে দেশের কাজে এগিয়ে এসে দেশ মাতৃকার মঙ্গল সাধনে ব্রতী হয় – সেই উদ্দেশ্যেই আজকের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।’
গ্ৰামের মানুষ এবং বাচ্চাদের অভিভাবকরা খুব আনন্দিত হন এবং দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির কে তাঁরা একত্রে স্বাগত জানান। গ্রাম এর পক্ষ থেকে জানানো হয় “এ ধরনের উদ্যোগে যথেষ্ট প্রশংসনীয় এবং আমরা কল্যাণ মন্দির এর পাশে থাকব……..আমরা এই উদ্যোগে খুব খুশি।”
এছাড়াও দেখা যায় বাচ্চাদের মধ্যে আনন্দের ঢেউ ওঠে, তারা খুব খুশি হয়। বাচ্চাদের মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
এইভাবেই অনুষ্ঠান পরিচালনা করে দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির।