পিয়ালী মুখার্জী: দেশের সময়
১৯৪৫ সালের ৬ আগাস্ট, জাপানের হিরোশিমায় ফেলা হয়েছিল প্রথম পরমাণু বোমা
পরমাণু বোমার ধ্বংসলীলার ক্ষত আজও বয়ে নিয়ে চলছে জাপানের হিরোশিমা আর নাগাসাকি। ভয়ঙ্কর সেই অতীতের স্মৃতি ৭৬ বছর পরেও যেন ত্রাস গোটা বিশ্বের কাছে। হিরোশিমা আর নাগাসাকির ক্ষত সারিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে জাপান। কিন্তু এখনও সেই দেশ ভুলে যায়নি অতীত। আজও ৮০ হাজার মানুষকে শ্রদ্ধা জানায় জাপানের বাসিন্দারা। স্মরণ করে ভয়ঙ্কর অতীতকে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। দীর্ঘ দিন পরে শান্তির প্রতীক্ষায় তখন প্রহর গুণছিল গোটা বিশ্ব। কিন্তু সেই সময়ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের ওপর পরপর দুটি বোমা ফেলে। প্রথমটি ছিল হিরোশিমাতে। দ্বিতীয়টি ছিল নাগাসাকিতে।
চিন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় থেকেই জাপানি সামরিক কার্যকলাপের মূল কেন্দ্র উঠেছিল হিরোশিমা। পাশাপাশি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও সামরিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ছিল এই শহর। বিশ্বের এটিই প্রথম শহর, যার ওপর পরমাণু বোমার হানা হয়। দ্বিতীয় শহর হল জাপানের নাগাসাকি।
১৯৪৫ সালের ৬ অগাস্ট পরমাণু বোমায় নিমেষেই তছনছ হয়ে গিয়েছিল জাপানের হিরোশিমা। কার্যত গোটা শহরই পরিণত হয়েছিল শ্মশানে। সেই ভয়ঙ্কর দিনকে আজও স্মরণ করে বিশ্ব। এদিনেই পালন করা হয় হিরোশিমা দিবস।
বিশ্বশান্তি ও শান্তিপূর্ণ রাজনীতির প্রচার করতেই হিরোশিমা দিবস পালন করা হয়। একটা পরমাণু বোমা কেড়ে নিয়েছিল এই শহরের প্রাণ। ৭৬ বছর কেটে গিয়েছে সেই ঘটনার। হামলার পরই, শহর খালি করে দেওয়া হয়েছিল।
পরমাণু বোমার আঘাতে মৃত্যু হয়েছিল ৮০ হাজার মানুষের। আহত হয়েছিলেন ৩৫ হাজারেও বেশি মানুষ। জাপানের সরকারি ওয়েবসাইটের রিপোর্ট অনুযায়ী হিরোশিমার ৬৫ শতাংশ বাড়ি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল।
শান্তির রাজনীতি প্রচার করার জন্য জাপান আজও হিরোশিমা দিবস পালন করে। বর্তমানে হিরোশিমাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জাপান। ধ্বংসের সেই শহর বর্তমানে উল্লেখযোগ্য শিল্পকেন্দ্র। সেই সময় পরিত্যক্ত হয়েছিল এই শহর।
চিন আর রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের সময় জাপানের সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছিল হিরোশিমা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই শহরকে কেন্দ্র করে একাধিক সামরিক কার্যকলাপ শুরু করেছিল জাপান। হিরোশিমা রীতিমত ত্রাস হিসেবেই সামনে এসেছিল।
এই শহরকেই তাই টার্গেট করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বি-২৯ বোমারু বিমান থেকে হিরোশিমায় ফেলা হয়েছিল লিটল বয়- মানের পরমাণু বোমা। বোমা বর্ষণের পর নিমেশেই শহরের ৯০ শতাংশ জীবন নিশ্চহ্ন হয়ে যায়। ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ে যায় চারদিক।
কিন্তু এখানেই শেষ হয়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তাণ্ডব। এর ঘটনার ঠিন তিন দিন পর মার্কিন বোমারু বিমান দ্বিতীয় পরমাণু বোমা বর্ষণ করেছিল নাগাসাকিতে। ৯ অগাস্ট ছিল সেই ভয়ঙ্কর দিন। এর পর ১৫ অগাস্ট নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেন জাপানের সম্রাট হিরোহিতো।
হিরোশিমা আর নাগাসাকির সেই ভয়ঙ্কর অতীত প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বহন করে চলেছে জাপানের বাসিন্দারা। পরবর্তী বেস কয়েকটি প্রজন্ম বিকলাঙ্গ হয়েও জন্ম গ্রহণ করেছে।
লিটল বয়- এই নামের পরমাণু বোমার আঘাতে নিশ্চিহ্ন হয়েগিয়েছিল দুটি শহর। ১৯৪৫ সালে এজাতীয় ৩২টি বোমা তৈরি করা হয়েছিল। লস অ্যালামস ল্যাবরেটরি তৈরি করেছিল বোমাগুলি। বোমায় তেজস্ক্রিয় পরমাণু ইউরেনিয়ম ২৩৫ ব্যবহার করা হয়েছিল।
এই বোমা বর্ষণের মাত্র ৫৭ সেকেন্ড বিস্ফোরণের মাত্রা ছিল ১৩ কিলোটন এরসমতুল। এই বোমার ওজন ছিল ৪০ হাজার কেজি। দৈর্ঘ্য ছিল ৯ ফুটের একটু বেশি। আকারে ছোট হওয়ার জন্যই বোমাগুলির নাম লিটল বয় রাখা হয়েছিল।
প্রতি বছর শহরের শান্তি মেমোরিয়াল পার্কে একটি শান্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেদিনের ভয়াবহতা থেকে যাঁরা প্রাণে বেঁচেছিলেন এবং সাধারণ নাগরিক– সকলে মিলে সেখানে উপস্থিত হয়ে বিস্ফোরণে মৃত নিরীহ মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ও তাঁদের আত্মার শান্তিকামনা করেন।