২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সেই হাথরসের এক দলিত তরুণীর গণধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল হয়েছিল গোটা দেশ। সেই হাথরসেই আবার পদপিষ্টের ঘটনা গোটা দেশে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে।
হাথরাসের ভোলেবাবা প্রাক্তন গোয়েন্দা অফিসার! তাঁর সৎসঙ্গেই মৃত শতাধিক, কে এই ধর্মগুরু?
দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হয়ে এখনও পর্যন্ত ১১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি সংবাদ সংস্থার। মৃতদের মধ্যে বেশিরভাগ মহিলা এবং বেশ কয়েকজন শিশুও রয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে মৃতদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। একই সঙ্গে যে ধর্মগুরুর ডাকে এদিনের ‘সৎসঙ্গ’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
https://x.com/myogiadityanath/status/1808103722851225625?t=Q7FYlrPkj62bs1983bddLw&s=19
স্থানীয় সূত্রে খবর, নারায়ণ সাকার ওরফে ‘ভোলে বাবা’ নামে স্বঘোষিত এক ধর্মীয় গুরুর ডাকে এদিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠান শেষে বেরানোর সময় পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, যেখানে এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে অতি বেশি সংখ্যক মানুষ ডুকে পড়েছিলেন এবং ভিড় সামলানোর জন্য আয়োজকদের তরফে বিশেষ কোনও ব্যবস্থা রাখা হয়নি। অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের বা বেরানোর পথটিও ছিল অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ। তারই জেরে হুড়োহুড়ি থেকে পদপিষ্টের ঘটনা বলে দাবি স্থানীয়দের একাংশের।
ঘটনার জন্য উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী টুইটার হ্যান্ডেলে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করছেন।
‘টুইটে মোদী লিখেছেন, কেন্দ্র উত্তরপ্রদেশ সরকারকে সব রকম সাহায্য করছে। যোগী আদিত্যনাথ জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী লক্ষ্মী নারায়ণ চৌধুরী এবং সন্দীপ সিং। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন রাজ্যের মুখ্য সচিব ও পুলিশের ডিজি।
হাথরাসের জেলাশাসক আশিস কুমার জানিয়েছেন, আহতদের উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে কীভাবে এই ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কে এই ভোলে বাবা?
ইটাহ জেলার পাটিয়ালি তেহশিলে বাহাদুর গ্রামের বাসিন্দা ভোলে বাবা। সেখানেই রয়েছে তাঁর মূল আশ্রম। যদিও শুরু থেকেই সাধু ছিলেন না সুরজ। একটা সময় পর্যন্ত তিনি ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোতে চাকরি করতেন, অন্তত এমনটাই দাবি তাঁর। ২৬ বছর আগে ধর্মীয় উপদেশ দেওয়ার জন্য তিনি নাকি চাকরি ছেড়ে দেন! তারপর থেকে বাড়ি ছেড়ে গ্রামে এক ঝুপড়ি তৈরি করে সেখানেই থাকতে শুরু করেন।
বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঈশ্বরের নামে প্রচার শুরু করছেন সুরজ। বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং দিল্লি সহ গোটা দেশ জুড়ে তাঁর শিষ্যের সংখ্যা কম নয়। আধুনিক যুগের ধর্মগুরুদের মতো ভোলে বাবাও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকেন। কোনও সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মেই তাঁর কোনও অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট নেই। বেশিরভাগ সময়ই তাঁকে সাদা পোশাকে দেখা যায়।
ধর্ম প্রচারের টাকায় বিভিন্ন জায়গায় সৎসঙ্গের আয়োজন করেন ভোলে বাবা। প্রতি মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে ভোলে বাবার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কয়েক লক্ষ ভক্ত সমাগমের সেইসব সৎসর্গে। মঙ্গলবার তেমনই এক অনুষ্ঠানে ঘটে মর্মান্তিক ঘটনা।
প্রচন্ড গরমের মধ্যেই এদিন চলছিল এই সৎসঙ্গ অনুষ্ঠান। সেই সময় তাঁবুর ভেতরে একেবারে ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা সকলের। এরই মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ হতেই হুড়মুড় করে বেরোতে যান ভক্তরা। আর তখনই পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান শতাধিক মানুষ।