দেশের সময়, কলকাতা: নির্বাচনের সময়ে রাজ্যে যেভাবে অশান্তি ও রক্তারক্তির অভিযোগ উঠে এসেছে, তা দেখে অত্যন্ত ব্যথিত বাংলার সাংবিধানিক প্রধান। রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের গণনাপর্বের মধ্যেই রাজভবন থেকে বার্তা দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৷
বাংলার পঞ্চায়েত ভোটের লাগামছাড়া হিংসা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কথা হয়েছে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের । কোনপথে এর মোকাবিলা সম্ভব, তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেছেন তিনি। মঙ্গলবার সন্ধেয় নিজেই একথা জানিয়ে রাজ্যপাল বলেন , “অমিত শাহের সঙ্গে কথা হয়েছে। সাংবিধানিক সহকর্মীর সঙ্গে দেখা করে ডিটেল কথা বলেছি। আমি পাবলিক করব না। তবে বাংলায় হিংসা হচ্ছে, এটা আমি দেখেছি। তদন্ত হবে। লড়াই জারি থাকবে দুর্নীতি ও অশান্তির বিরুদ্ধে।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, বাংলার ভোটে লাগামছাড়া হিংসা এবং রাজনৈতিক সন্ত্রাসের প্রসঙ্গই আরও একবার স্পষ্ট করতে চেয়েছেন রাজ্যপাল। বোঝাতে চেয়েছেন, মানুষের প্রাণের চেয়ে কোনও কিছু দামি হতে পারে না। বস্তুত, ভোটের আগে থেকেই হিংসার প্রশ্নে কমিশনকে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। এমনকি ভোটের দিন হিংসা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখেছিলেন। বাংলাকে দুর্নীতি এবং হিংসা মুক্ত করতে এখন থেকে লাগাতার প্রশাসনিক কর্মসূচি গ্রহণের কথাও জানিয়েছিলেন।
এমনকি এদিন সকালে কলকাতা থেকে দিল্লি ফিরেও রাজ্যপালের প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, দুর্নীতির প্রশ্নে কাউকেই রেয়াত করা হবে না। সন্ধেতেও রাজ্যপাল একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন। রাজ্যপাল বলেন, “এই নির্বাচন আমাদের দুটো শিক্ষা দিল- একটা দুর্নীতি আর একটা হিংসা। আমাদের এদের সঙ্গে লড়াই করতে হবে। মনে করিয়ে দিয়েছেন, দেশের প্রগতির জন্য নির্বাচন করানো উচিত। প্রত্যেক ভোটার গুরুত্বপূর্ন। তর্জনীতে রক্ত নয়, ভোটের কালি লাগানো আমাদের কর্তব্য।“
বলেছেন, “অনেকের দৌড়ে একজনই জেতে। ভোটটাও তাই। এতে হিংসার প্রয়োজন নেই। রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঝামেলা থাকবে। কিন্তু আমরা গণতান্ত্রিক দেশের বাসিন্দা। আমাদের কর্তব্য শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা।“ বস্তুত, বাংলার নির্বাচনী হিংসা খতিয়ে দেখতে রাজ্যে আসছে বিজেপির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি। হিংসার বিষয়ে ওই কমিটি তাঁর সহযোগিতা চাইলে তিনি সাহায্য করবেন বলেও জানান।
উল্লেখ্য, রাজ্য নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই যেভাবে অশান্তি, রক্তারক্তির অভিযোগ উঠে এসেছে, তা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন রাজ্যপাল। শান্তি-শৃঙ্খলা ফেরাতে রাজভবনে ইতিমধ্যেই তিনি একটি পিস রুম চালু করেছেন। রাজ্যের যে প্রান্ত থেকে যখনই কোনও অভিযোগ পেয়েছেন, চেষ্টা করেছেন সেখানে পৌঁছে যাওয়ার। ফোনেও কথা বলেছেন আক্রান্তদের সঙ্গে। আর আজ পঞ্চায়েতের গণনার দিন হিংসা ও অশান্তির বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধ ঘোষণার কথা বললেন তিনি।
যা থেকে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ভোট মিটলেও রাজ্য বনাম রাজ্যপালের সংঘাত থামার সম্ভাবনা কম।