Gardening Tips অনেকেরই ছাদ বাগানে গোলাপ আছে,কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও ফুল ঠিকঠাক পাচ্ছেন না, কী করবেন?

0
40

দেশের সময়: গোলাপ এমনই একটি ফুল যা বাড়িয়ে দেয় আপনার ছাদ বাগানের সৌন্দর্য। কিন্তু এর জন্য সঠিক পরিচর্যা প্রয়োজন।

প্রথমেই বলা দরকার, গোলাপের জন্য প্রয়োজন ১২ ইঞ্চির টব। এই টবে তিনভাগ বাগানের মাটি, এক ভাগ গোবর বা কম্পোস্ট সার, আধ ভাগ পাতা পচা সার, ২৫ গ্রাম হাড়গুঁড়ো, ২৫ গ্রাম কাঠের ছাই, এবং ১০ গ্রাম অনুখাদ্য মিশ্রণ দিয়ে প্রথমে মাটি তৈরি করে নিন। মূলত শীতকালে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে গাছ বসাতে পারলে ভালো। তবে চাইলে আপনি অন্য সময়েও বসাতে পারেন।

টবে একেবারে মাঝখানে চারা বসাতে হবে। কলমের জোড়ার মুখ যেন মাটি থেকে অন্তত দুই ইঞ্চি উপরে থাকে। টব মাটি দিয়ে কানায় কানায় ভর্তি করবেন না। সার, জল দেওয়ার জন্য কিছুটা খালি রাখবেন। চারা বসানোর পর টব কয়েক দিন ছায়ায় রাখবেন। টবের মাটিতে কতটা রস রয়েছে, সেটা বুঝেই সেচ দেবেন।

গোলাপ গাছের গোড়ায় যে জল দেবেন, তাতে যেন ক্লোরিন না থাকে। কারণ, গোলাপ ক্লোরিন পছন্দ করে না। বর্ষার শুরুতে এবং শীতের শুরুতে গোলাপ গাছের সার দেওয়ার উপযুক্ত সময়। গাছের গোড়া থেকে তিন ইঞ্চির মতো মাটি খুঁড়ে তুলে নিন। তারপর সেখানে কিছুটা দোয়াশ মাটি ও গোবর সার মিশিয়ে আবার ভরাট করে দিন। সার হিসেবে দিন টব পিছু কুড়িগ্রাম খোল, ৫০ গ্রাম হাড় গুঁড়ো, ২৫ গ্রাম কাঠের ছাই, ১৫ গ্রাম অনুখাদ্য।

শীতে অবশ্যই গোলাপের ডাল ছাঁটাইয়ের কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে রিপটিং দরকার। বছরের অন্য সময় দুমাসে একবার খাবার দিলেই হবে। কিন্তু শীতে যেহেতু গোলাপ ফুল বেশি ফোটে, তাই এই সময় খাবার একটু বাড়াতে হবে। মাসে একবার করে খাবার দিতে হবে।

গোলাপ ফুল শুকিয়ে গেলে বোঁটার এক ইঞ্চি নিচে থেকে কেটে ফেলে দিতে হবে। ওই কাটা অংশের পাশ থেকে আবার নতুন ডাল বের হবে। এবং নতুন শাখার ডগায় কুঁড়ি আসবে। ডাল কাটার পর অবশ্যই ১০০ মিলিলিটার জলে আড়াইগ্রাম ব্লাইটক্স গুলে ওই কাটা অংশে প্রয়োগ করুন। এতে ছত্রাকের আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।

গোলাপের একটি ভয়ংকর রোগ ব্ল্যাক স্পট বা পাতায় কালো দাগ। এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে প্রতি লিটার জলে দেড় গ্রাম কভচ গুলে স্প্রে করুন। পাতার উপর যদি বাদামি হলদে মরচে জলে ভেজা দাগ যদি দেখা যায়, তাহলে প্রতি লিটার জলে ০.৭৫ মিলিলিটার টিল্ট বা দেড় গ্রাম এলাইট বা ০.৫ মিলিলিটার ইনডেক্স গুলে করুন। গোলাপের পাতায় সাদা পাউডারের মতো দেখা গেলে প্রতি লিটার জলে প্রয়োগ করতে পারেন ৩ গ্রাম সালফার বা ০.৭৫ মিলিলিটার টিল্ট।

যদি পাতার নিচে লাল মাকড়ের হানা হয়, তাহলে তা দমনে প্রয়োগ করুন প্রতি লিটার জলে দেড় মিলিলিটার কেলথেন বা ০.৫ মিলি লিটার মিলবিনক। গাছের গোড়ায় উইপোকা, পিঁপড়ে, কাটুই পোকা বাসা বাঁধলে প্রতি লিটার জলে আড়াই মিলি লিটার সুক্লোর বা ২ মিলিলিটার মার্শাল গুলে প্রয়োগ করতে পারেন।

আপনি কি বাগানি? জানা আছে, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশ কোনটি গাছের কখন প্রয়োজন? অভাবে গাছের কী ক্ষতি হয়? কোন সার থেকে পাওয়া যায় কোন উপাদানটি, সেটিও কি জানা?

গাছের বৃদ্ধির জন্য নাইট্রোজেন দরকার। এর ঘাটতি হলে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়। ফসফরাসের দরকার হয় গাছের সালোকসংশ্লেষের জন্য। এটি গাছে কুঁড়ি আনতে, ফুল ফোটাতে, বীজ পরিণত করতে এবং অঙ্কুরোদগমে সাহায্য করে। শিকড় তৈরি করতেও এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ফসফরাসের অভাবে গাছের পুরনো পাতার নীচের দিকে অ্যানথ্রোসায়ানিন জমা হয়। ফলে পাতা বাদামি বা তামাটে হয়ে হয়। ব্যাহত হয় গাছের বৃদ্ধি।

পটাশিয়াম কোষ বিভাজন, ফুল ও ফল তৈরি করা, কাণ্ডের কাষ্ঠল ভাব আনা এবং গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে কাজ করে। এর অভাবে নতুন পাতার ধারে ক্লোরোফিলের অভাব দেখা দেয়। পাতার ধার কুঁকড়ে যায়। পরে সার প্রয়োগ করেও ওই কোঁকড়ানো পাতা আর ঠিক করা যায় না। ক্যালশিয়াম গাছের কোষ প্রাচীর তৈরি করে। পাশাপাশি নতুন ডালপালা ও শিকড় তৈরিতে সাহায্য করে থাকে।

এর অভাব হলে নতুন পাতা, শিকড় এবং কুঁড়ির বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। নতুন পাতার ধারগুলি কুঁকড়ে যায় নীচের দিকে। পাতার ধার এবং সামনের দিক বাদামি হয়ে যায়। ম্যাগনেশিয়াম গাছের কার্বোহাইড্রেট, সুগার, ফ্যাট তৈরিতে সাহায্য করে। এবং পুষ্টি শোষণে সাহায্যকারী উৎসেচকের ক্রিয়াকলাপেও সাহায্য করে থাকে। অংশ নেয় গাছের ক্লোরোফিল তৈরিতে। এর অভাবে পুরনো পাতার শিরার মাঝে ক্লোরোফিলের অভাব দেখা দেয়। খুব বেশি অভাব হলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়।

ছোট হয়ে যায় পাতার আকার। পুরনো পাতা ঝরে যায়। লোহা বা আয়রন গাছের ক্লোরোপ্লাস্টের প্রোটিন এবং বিভিন্ন উৎসেচক তৈরিতে কাজে লাগে। এর ঘাটতিতে নতুন পাতার শিরার মাঝে ক্লোরোফিলের অভাবে সবুজ থেকে হলুদ বর্ণ দেখা দেয়। খুব বেশি অভাব হলে নতুন পাতা কুঁকড়ে ছোট এবং সাদা হয়ে যায়। ম্যাঙ্গানিজ গাছের নাইট্রোজেন শোষণের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক তৈরিতে সাহায্য করে। তাছাড়া গাছের সালোকসংশ্লেষ, শ্বসন এবং উৎসেচক তৈরিতে কাজে লাগে।

এর ঘাটতিতে নতুন পাতায় ক্লোরোফিলের অভাব দেখা দেয়। খুব অভাব হলে পাতা ছোট হয়ে শুকিয়ে যায়। জিঙ্ক মূলত গাছের অক্সিন, ইন্ডোল অ্যাসিটিক অ্যাসিডের মতো হরমোনকে উদ্দীপ্ত করে। এর ঘাটতিতে নতুন পাতায় ক্লোরোফিলের অভাব দেখা দেয়। পাতা শুকিয়ে যায়। পাতার বর্ণ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। উচ্চতা কমে গাছের। বোরণ গাছের ডগায় নতুন কোষ তৈরির সময় কোষ বিভাজনের কাজে লাগে। এর অভাবে গাছের উচ্চতা কমে যায়। নষ্ট হয় গাছের আকৃতি। নতুন পাতা ছোট হয়ে যায়। গাঢ় সবুজ বর্ণ ধারণ করে।

গাছেদেরও ক্যালেন্ডার হয়। বাগানিদের হাতের কাছে রাখতে হবে সেই ক্যালেন্ডার। একেবারে দিনক্ষণ ধরে কখন কী করতে হবে বলে দেবে সেই ক্যালেন্ডার। তাহলে আপনার বাগান পরিচর্যায় আর কোনও ঝক্কি থাকবে না। আপাতত জুন ও জুলাই মাসের ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হল।

জুন: গ্রীষ্মকালীন ফুলের পরিচর্যা চালিয়ে যান। বর্ষার ফুলের চারা বসান। বর্ষা না নামা পর্যন্ত সেচ চালিয়ে যান। টবের জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা ঠিক আছে কি না দেখে নিন। নতুন গাছ বসাতে হলে, এটাই উপযুক্ত সময়। বনসাই থাকলে এসময় টব পাল্টান। অন্য গাছেরও রি পটিং করতে পারেন। যদি দেরিতে বোগেনভিলিয়া ফুল এসে থাকে, তাহলে এসময় ডাল ছাঁটুন। চন্দ্রমল্লিকার চারা তৈরির জন্য হরমোন দিয়ে ডাল বালিতে বসান। শাকসব্জি চাষ করতে পারেন। আগে যেসব সব্জি লাগিয়েছেন, তাতে চাপানসার দিন। ফল গাছের গোড়ায় সার দিতে হবে। নতুন ফল গাছ লাগাতে পারেন। বর্ষা শুরু হলে গাছে শাখা ও গুটি কলমের কাজ শুরু করতে পারেন।

জুলাই: বর্ষাকালীন ফুলের চারা বসাতে হবে। আগে যদি বসিয়ে থাকেন, সেগুলি পরিচর্যা করতে হবে। টব যদি খোলা আকাশের নীচে থাকে, তাহলে সেচ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, এসময় বৃষ্টি চলবে। ভালোভাবে দেখে নিতে হবে, টবে জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা ঠিক আছে কি না। চন্দ্রমল্লিকার কাটিং লাগাতে পারেন। ডালিয়ার পুরনো গাছের ডাল ছাঁটতে পারেন। গোলাপ বা অন্য গাছে চুন ব্যবহার করার প্রয়োজন থাকলে, মাটির সঙ্গে মিশিয়ে করতে পারেন। এমাসেও রি পটিংয়ের কাজ করতে পারেন। শীতের সব্জির জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। আগে লাগানো সব্জিতে চাপানসার দিতে হবে। অন্যান্য পরিচর্যাও দরকার। ফলগাছের গোড়ায় সার দেওয়া না হলে এখনই দিয়ে নিতে হবে। সঙ্গে ডালপালা ছাঁটাইয়ের কাজ করতে হবে।

Previous articleTMC  বাগদার রং এ বার সবুজ হবে মন্তব্য রথীনের,অভিমান ভুলে উপনির্বাচনে সবাই একসঙ্গে লড়ুন, কর্মীসভায় বার্তা সুব্রত -র
Next articleNamami Gange সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ আয়োজন করল ‘নমামি গঙ্গে’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here