দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ প্রতি বছরই গঙ্গাসাগর মেলার জন্য মুখিয়ে থাকেন তীর্থযাত্রীরা। শুধু এই রাজ্য নয়, ভিন্ন দেশ এবং রাজ্য থেকেও মেলায় আসেন হাজার হাজার মানুষ। নতুন বছরেই সম্পন্ন হবে গঙ্গাসাগর মেলা।
মেলার প্রস্তুতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবারই গঙ্গাসাগরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে আজ সোমবার বৈঠকে মমতা বললেন, মেলায় লাল-নীল বাতির অনুমতি দেওয়া হয় না। ভিআইপিদের জন্য আলাদা বন্দোবস্তও নেই।সাগরমেলায় কেউ ভিআইপি নয়, নবান্নে বৈঠকে এমনটাই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গঙ্গাসাগর মেলার সঙ্গে মানুষের ভাবাবেগ জড়িত। তাই করোনা আবহে মেলা বন্ধ করার পক্ষে ছিলেন না মুখ্যমন্ত্রী। বরং কোভিড বিধি মেনেই সব প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আজকের বৈঠকে মন্ত্রীদের দায়িত্বও ভাগ করে দিয়েছেন। মমতা বলেছেন, প্লাস্টিক-মুক্ত ইকো ফ্রেন্ডলি মেলার আয়োজন করা হয়েছে। কোভিড বিধি মেনে চলা হবে।
স্পেশাল ট্রেন চালু করার জন্য রেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মেলার ৬ দিনে ৭০টি অতিরিক্ত ট্রেন চলবে বলে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। যাতায়াতের সুবিধার জন্য অতিরিক্ত বাসও দেওয়া হবে। প্রতিটা স্টপেজে ‘মে আই হেল্প ইউ’ ক্যাম্প খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে।
মেলায় কোভিডের জন্য আলাদা কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। কোভিড রোগীদের পরিষেবা দেওয়া থেকে শুরু করে তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া সবরকম ব্যবস্থা করা হবে। নবান্নেও খোলা হচ্ছে আলাদা কন্ট্রোল রুম। এর দায়িত্বে থাকবেন স্বরাষ্ট্রসচিব।
গঙ্গাসাগরে ২৮, ২৯ এবং ৩০ ডিসেম্বর এই তিনদিনের কর্মসূচি রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী। সাগর-সফরে গিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকও করবেন তিনি। মেলার জন্য বিশেষ প্রস্তুতিও নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। কোভিডকালে সংক্রমণ এড়িয়ে কীভাবে তীর্থযাত্রীরা পুণ্য করতে পারবেন সেদিকেই নজর রয়েছে প্রশাসনের।
মেলায় ৬০০ বেডের কোভিড হাসপাতাল, আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হচ্ছে। কোভিড পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে শুরু করে হাসপাতাল, অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে সেখানে। শিশুদের জন্যও থাকছে আলাদা ব্যবস্থা। কোভিড পরীক্ষার জন্য আরটি-পিসিআর টেস্টের ক্যাম্প বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
গঙ্গাসাগর মেলায় বিভিন্ন রাজ্য থেকে দর্শনার্থীদের সমাগম হয়। এই মেলাকে জাতীয় মেলা হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কমিটিকে। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ভিন্ রাজ্যের তীর্থযাত্রীদের মধ্যে প্রচারের জন্য রাজ্য সরকারের স্কিম গুলো হিন্দিতে লিখে মেলায় ডিসপ্লে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মেলায় দুর্ঘটনা ঘটলে পিজি পর্যন্ত গ্রীন করিডর করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
গঙ্গাসাগর ভ্রমণ ছাড়াও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আরও কিছু প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ৫১ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মেলায় ব্যারিকেড দেওয়া হবে। হাজারের বেশি সিসিটিভি বসানো হচ্ছে। মেলায় কেউ হারিয়ে গেলে খুঁজে পাওয়ার জন্য পরিচয় নামে কিউআর বেসড ট্র্যাকিং সিস্টেম রাখা হচ্ছে। বয়স্কদের কিউআর বেসড হাতঘড়ি দেওয়া হবে যাতে হারিয়ে গেলে সহজেই তাঁদের ট্র্যাক করা যেতে পারে। তাছাড়া ই-দর্শনের ব্যবস্থাও রাখছে জেলা প্রশাসন।
গঙ্গাসাগর মেলা পরিদর্শনের জন্য বয়স্ক, অসুস্থ ও বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বৃদ্ধাশ্রমগুলিতে যাঁরা থাকেন তাঁরা যদি মেলা ভ্রমণ করতে চান, তাহলে নিরাপদে ঘুরিয়ে ফের হোমে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষম, অসুস্থদের জন্যও থাকছে একই ব্যবস্থা।
এর জন্য সরকারি ওয়েবসাইট gangasagar.in-এ যেতে হবে। কোনও হোম কর্তৃপক্ষ যদি মনে করেন বিশেষভাবে সক্ষম বা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের গঙ্গাসাগর মেলা ঘুরিয়ে দেখাবেন, তাহলে সরকারি সাহায্যে এখন তা সম্ভব। নিরাপদে ও দায়িত্ব নিয়ে সরকার এই সুপরিকল্পিত উদ্যোগ নিয়েছে যা তারিফ পাচ্ছে নানা মহলে। তাছাড়াও অনলাইনে অর্ডার করলে দেশের যে কোনও প্রান্তে গঙ্গাসাগরের পবিত্র জল ও প্রসাদ পৌঁছে দেওয়া হবে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।