কলকাতা: মঙ্গলবার দুপুর ২টোর পর কলকাতা পুরসভার ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিদ্যাসাগর কলোনিতে হইচই পড়ে যায়। কারণ চারতলা একটি বহুতল আচমকা ধসে গিয়ে হেলে পড়ে একদিকে।
দেখুনভিডিও
এই দৃশ্য দেখে একদিকে যেমন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন পড়শিরা, তেমনই বিস্মিত হন। কীভাবে এমন ঘটনা ঘটতে পারে! এমনটা ঘটলে যা হয়, প্রথমেই আঙুল ওঠে প্রমোটারের দিকে। কারণ, কুন্দলিয়া থেকে হালফিলে গার্ডেনরিচের কলকাতার স্মৃতি এখনও ধুসর হয়নি। কিন্তু ঘটনা হল, এই বাঘাযতীন বিপর্যয় ম্যান-মেড হলেও এর নেপথ্যে প্রমোটারের কোনও ভূমিকা নেই।
বাঘাযতীনের বিস্তীর্ণ এলাকা একদা জলাজমি ছিল। সেখানে পুকুর বা জলাজমি ভরাট করে প্রমোটারির ডজন ডজন অভিযোগ রয়েছে। তাই প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছিল, প্রমোটার পাইলিংয়ের কাজ ভাল করে করেনি। বা কমদামি কিংবা নিকৃষ্টমানের সামগ্রী দিয়ে এই বহুতল তৈরি করেছিলেন। পুরসভার নিয়ম মেনেও তা তৈরি করা হয়নি। কিন্তু ক্রমশ প্রকৃত ঘটনা সামনে আসে।
ওই এলাকায় জল জমে। বর্ষাকালে পরিস্থিতি খারাপ হয়। এতটাই যে বাড়িতে বা সিঁড়ির ঘরে জল জমে যায়। সেই কারণে হাইড্রোলিক জ্যাক দিয়ে বাড়িটি উঁচু করা হচ্ছিল। তার জেরে বাড়িটির গ্রাউন্ড ফ্লোরের চাঙড় উঠে যায়। ফলে এই বিপত্তি।
হাইড্রলিক জ্যাক দিয়ে বাড়ি উঁচু করার ঘটনা নতুন নয়। হরিয়ানার একাধিক সংস্থা এ ব্যাপারে পেশাদার ভাবে কাজ করে। বাংলাতেও তার নজির রয়েছে। এক তলা বাড়ি হাইড্রলিক জ্যাক দিয়ে উঁচু করা হয়েছে।
এই ফ্ল্যাট বাড়িটি ২০০৯ সালে তৈরি হয়েছিল। ১৫ বছরের পুরনো বাড়ি। সূত্রের খবর, হাইড্রলিক জ্যাক দিয়ে বাড়িটি উঁচু করার জন্য ১৮ লক্ষ টাকা খরচ ধরা হয়েছিল। তবে এ ব্যাপারে পুরসভার কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। ফলে ওই বাড়ির বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে এবার পুরসভা ব্যবস্থা নিতে পারে। ফৌজদারি মামলাও দায়ের করা হতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ অবশ্য বলছেন, বাড়িটিতে অনেক আগে থেকে ফাটল লক্ষ্য করা গেছিল। কিন্তু সেইভাবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বাড়ি উঁচু করা হচ্ছে এমন খবর শুধু তাঁরা শুনেছিলেন। চারিদিক থেকে ঘিরে আসলে কী কাজ চলছে তা জানতে পারেননি।
আপাতত বাঘাযতীনের হেলে পড়া সেই চারতলা ফ্ল্যাটবাড়ি ভেঙে ফেলার শুরু হয়েছে। চারতলার উপরের ফ্ল্যাটের জানলার কাচ ভেঙে ভিতরে ঢোকেন ভাঙার কাজে নিযুক্ত কর্মীরা। ঘটনাস্থলে রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, পুরসভা, পুলিশ এবং দমকল আধিকারিকেরা। তাঁদের তদারকিতেই চলছে ভাঙার কাজ। ঘটনাস্থলে রয়েছে দমকল বাহিনী থেকে শুরু করে পুরসভার আধিকারিক, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। বাড়ি ভেঙে ঘর ছাড়া অবস্থায় রয়েছে আটটি পরিবার।