Fibroids Symptoms আপনার কি মাসিক এর সময়ে অতিরিক্ত রক্তস্রাব হচ্ছে? সঙ্গে অতিরিক্ত যন্ত্রণাও ! জরায়ুতে ফাইব্রয়েড হয়নি তো?

0
1095
পৌলমী ব্যানার্জি ,দেশের সময়

সাধারণত ৮ থেকে ১৩ বছর বয়সের মধ্যে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছয় মেয়েরা। বয়ঃসন্ধির পর নারীদেহে গৌণ যৌন লক্ষণগুলি স্পষ্ট হতে শুরু করে। এর কিছু দিন পরই শুরু হয় ঋতুস্রাব। 

আজকাল বিভিন্ন রকমের স্ত্রীরোগ জাঁকিয়ে বসেছে মেয়েদের মধ্যে। তার মধ্যে জরায়ুতে ফাইব্রয়েডের সমস্যা হল অন্যতম।

এখন জেনে নেওয়া যাক কি এই রোগ: ফাইব্রয়েড হলো এক ধরণের টিউমার যা জরায়ুর মসৃণ পেশী কোষ থেকে সৃষ্টি হয়। প্রজননক্ষম বয়সে এ সমস্যা দেখা দেয়।

এবার জেনে নেওয়া যাক এই রোগের লক্ষণ কি কি:
অনিয়মিত ঋতুস্রাব, অত্যধিক রক্তপাত এবং গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দিলেই ফাইব্রয়েডস আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। অনেক মহিলাই ঋতুস্রাবের যন্ত্রণাকে অবহেলা করেন, যন্ত্রণা কমাতে বেদনানাশক ওষুধ খান। তবে এই অবহেলা কিন্তু ভবিষ্যতে বড় বিপদ ডাকতে পারে। অনেক সময়ে হঠাৎ পেট ফুলে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্যও ফাইব্রয়েডসের লক্ষণ হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ৭-৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বার জরায়ুর আকার যেমন হয়, এ ক্ষেত্রেও পেটের আকার তেমনই হয়ে যায়। এ ছাড়া, প্রস্রাবের হার বেড়ে যাওয়া, প্রস্রাবের সময়ে তীব্র যন্ত্রণা, তলপেটে ব্যথাও এই রোগের উপসর্গ।

দীর্ঘায়ীত মাসিক, ভারী এবং বেদনাদায়ক রক্তপাত, দুটি মাসিক চক্রের মধ্যে রক্তপাত, তল পেটে ব্যথা ইত্যাদি।

ফাইব্রয়েডের কারণে মাসিকের সময়ে বেশি পরিমাণে রক্ত বেরিয়ে যাওয়ায় রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্তা এবং প্রসবেও ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের কারণ হয়ে উঠতে পারে এই টিউমার। 

জরায়ুর ফাইব্রয়েডের সুনির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি। তবে কয়েকটি ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ থাকলে অসুখের ঝুঁকি বেশি। বাড়িতে মা, মাসি, দিদি-সহ অন্যদের এই সমস্যা থাকলে রোগের ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে বেশি। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন ঋতুস্রাবের সময়ে জরায়ুর লাইনিং, অর্থাৎ আবরণকে উদ্দীপিত করে। এর ফলে ফাইব্রয়েড তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এই সব স্ত্রী হরমোনই ছোট ফাইব্রয়েড বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। এই কারণেই সন্তানধারণের ক্ষেত্রে ফাইব্রয়েডের ঝুঁকি বাড়ায়।

এই ধরণের টিউমার থেকে যে ক্যান্সার এর আশঙ্কা থাকে না তা নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সার এর ঝুঁকি থেকেই যায়। স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে তাদের কাছে গাইনি সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদের একটি বড় অংশ ফাইব্রয়েডে আক্রান্ত। আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে এটি ধরা পড়ে। 

বেশি বয়সে সন্তানধারণ করার সময় অনেক মহিলাকেই বেগ পেতে হয়। এই সমস্যার অন্যতম একটি কারণ হল, জরায়ুতে টিউমার। বিনাইন টিউমারের পোশাকি নাম ফাইব্রয়েডস। সাধারণত ২১ থেকে ৫০ বছর বয়সি মহিলাদের জরায়ুতেই এই ধরনের টিউমারের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। ফাইব্রয়েডস মূলত তিনটি জায়গায় তৈরি হতে পারে। প্রথমত, জরায়ুর দেওয়ালের বাইরের দিকে, যাকে সাবসেরাস বলে।

দ্বিতীয়ত, জরায়ুর দেওয়ালের মধ্যে, যাকে ইন্ট্রামিউরাল বলে এবং তৃতীয়ত, জরায়ুর যে অংশ থেকে ঋতুস্রাব হয়, তাকে বলা হয় সাব-মিউকাস। বেশির ভাগ মহিলাই সাব-মিউকাস ফাইব্রয়েডসে আক্রান্ত হন। ঋতুস্রাবের সময়ে পেটে তীব্র যন্ত্রণার অন্যতম কারণ সাব-মিউকাস ফাইব্রয়েডস। এর ফলে অত্যধিক রক্তক্ষরণ হয় এবং অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যাও শুরু হয়। জরায়ুতে এই টিউমার থাকলে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায় কয়েক গুণ।

বনগাঁর  প্রবীণ চিকিৎসক ডাঃ সুনির্মল মিত্র তার দীর্ঘ চল্লিশ বছরের প্র্যাক্টিস এর অভিজ্ঞতা থেকে জানান, “সাধারণত যাদের বন্ধ্যাত্বের সমস্যা আছে বা বাচ্চা অল্প বয়সে হওয়ার পর আর বাচ্চা নিচ্ছেন না, তাদের ক্ষেত্রে এটা হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে জেনেটিক কারণেও হয়ে থাকে। ইস্ট্রোজেন হরমোন বেশি থাকলেও ফাইব্রয়েড হতে পারে। সাধারণত ষোলো থেকে পঞ্চাশ বছর বয়সী নারীর শরীরে প্রজননক্ষম হরমোন ইস্ট্রোজেন এর মাত্রা সর্বোচ্চ থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি  তিন জনের মধ্যে এক জন নারী জীবনের কোনো না কোনো সময়ে জরায়ুতে টিউমারের সমস্যায় ভুগে থাকেন।

অতিরিক্ত ওজন ও ইস্ট্রোজেন এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এই অতিরিক্ত ওজন ফাইব্রয়েড হওয়ার ঝুঁকি দুই থেকে তিন গুণ বাড়িয়ে তোলে। এছাড়া খাদ্যাভাস একটি বড়ো কারণ এই ধরণের রোগের জন্য। এখন আলোচনা করা যাক, এই ধরণের টিউমার কিভাবে এখনকার মহিলাদের ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলছে।

এই রোগ আর কী কী অসুখ ডেকে আনে?
এই রোগে অতিরিক্ত রক্তপাতের ফলে শরীরে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ারও ঝুঁকি বেড়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মহিলাদের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকেরও ঝুঁকি বাড়ে। ফাইব্রয়েড হলে কিডনির কার্যকারিতাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ফাইব্রয়েড থেকে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।

বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ ডাঃ পেভেল মিত্র জানান, জরায়ুতে টিউমার এর কারণে রোগীর অজান্তেই তার মধ্যে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা চলে আসছে। কখনও কোনো কোনো রোগী দের মধ্যে বারংবার গর্ভপাতের সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। 

এই রোগের চিকিৎসা কী: চিকিৎসকরা বলছেন ওষুধের মাধ্যমে ফাইব্রয়েডের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কারো জটিলতা বাড়লে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। তবে জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভাসের পরিবর্তনে উপকার পাওয়া যাবে। প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাক-সবজি খেলে ফাইব্রয়েড থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায় বলে মনে করা হয়। পাশাপাশি ওজন ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

Previous articleWeather update বসন্তের শুরুতেও বঙ্গে বৃষ্টির ‘কাঁটা’!কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে, কী পূর্বাভাস? দেখুন ভিডিও
Next articleSheikh Shahjahan Arrest : ‘শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতারে কোনও বাধা নেই’,নির্দেশ হাইকোর্টের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here