দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ এক বছরের আন্দোলন সফল! বিতর্কিত তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করল কেন্দ্র। আজ, শুক্রবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে এ কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
অনেকেই বলছেন, কৃষকদের এক বছরের নাছোড় আন্দোলনের পরে পিছু হটতে বাধ্য হল কেন্দ্রীয় সরকার। অনড় অবস্থান থেকে সরে এলেন মোদী। যদিও এদিন ঘোষণার সময়ে মোদী আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘আমাদের উদ্দেশ্য সৎ ছিল। কিন্তু কৃষি আইনের সুফলের কথা কিছু কৃষককে আমরা বোঝাতে পারিনি।’’কৃষকদের প্রায় এক বছরের আন্দোলনের পর প্রত্যাহার করা হল ২০২০ সালে পাশ হওয়া বিতর্কিত তিন কৃষি আইন।
বিষয়টি নিয়ে টুইট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
দেশের কৃষকদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি লিখেছেন, এই জয় তাঁদেরই। অনড় মনোভাব দেখানোর পরও কেন্দ্রের শাসকের এই পিছু হঠায় আন্দোলনের জয়ই দেখছেন বিরোধীরা। গণতন্ত্রের জয়ের কথা বলে রাজ্যের শাসকদলের নেতারা খোঁচা দিতে ছাড়েনি কেন্দ্রের শাসকদলকে।
শুক্রবার সকালে করা টুইটে মমতা লিখেছেন, ‘বিজেপি কৃষকদের প্রতি নৃশংস। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যে সমস্ত কৃষক নিরন্তর লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তাঁদের প্রত্যেককে আমার হার্দিক অভিনন্দন। এটা আপনাদের জয়। এই লড়াইয়ে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা।’
My heartfelt congratulations to every single farmer who fought relentlessly and were not fazed by the cruelty with which @BJP4India treated you. This is YOUR VICTORY!
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) November 19, 2021
My deepest condolences to everyone who lost their loved ones in this fight.#FarmLaws
মোদীর ঘোষণার পরই কৃষি আইন প্রত্যাহার নিয়েই একাধিক টুইট করেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। প্রথম টুইটেই তিনি খোঁচা দিয়েছেন তিনি লিখেছেন, ‘অহংকারের হার। অহঙ্কারের হার, অতিরিক্ত গর্ব থেকে ভূপতিত।’
A million words. pic.twitter.com/Yn1aqZzrHP
— Derek O'Brien | ডেরেক ও'ব্রায়েন (@derekobrienmp) November 19, 2021
মোদী যুগের শেষের শুরু৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা করার পর এমনই প্রতিক্রিয়া দিলেন তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় ৷ আর এক তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় অবশ্য কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে গণতন্ত্রের জয় হিসেবেই দেখছেন৷ তার দাবি, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের সময় বিক্ষোভ এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷
মোদী আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা করতেই বিজেপি-কে খোঁচা দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। বর্ষীয়ান এই সাংসদের মতে, এই আইন প্রত্যাহার আসলে দেশের গণতন্ত্রের জয়। তিনি বলেছেন, ‘‘দিল্লি সীমানায় গত বছর থেকে আন্দেলন চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। বিজেপি সেই আন্দোলন ভাঙার অনেক চেষ্টা করেছিল। এটাই গণতান্ত্রিক শক্তি।’’ এর পরই বিজেপি-র উদ্দেশে খোঁচা দিয়ে বলেছেন, ‘‘সামনে পাঁচ রাজ্যে নির্বাচন রয়েছে। নির্বাচনে ভরাডুবির ভয়েই বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার করলেন মোদী।’’ সাংসদের অধিবেশনে বিক্ষোভ এড়াতেই আগেভাগে এই ঘোষণা করা হল বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, প্রথম থেকেই কৃষকদের এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেস৷ দিল্লি সীমান্তে গিয়ে আন্দোলনরত কৃষকদের সঙ্গে দেখা করে আসেন তৃণমূল সাংসদরা৷ তিন আইন প্রত্যাহারের দাবিতে সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কলকাতায় এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে যান কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত৷ ফলে কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে স্বভাবতই খুশি তৃণমূল৷
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে তিনটি কৃষি বিল আইনে পরিণত করে সরকার। এরপরেই দিল্লি, পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানাতে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়। দেশজুড়ে শুরু হয় আন্দোলন, বনধ ডাকা হয়। বিরোধীরা পাশে দাঁড়ান কৃষকদের। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয় কংগ্রেস, তৃণমূল সহ একাধিক রাজনৈতিক দল। শুধু দেশ নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও এই নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। সার্বিক প্রেক্ষাপটে মোদীর এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।