
করোনা অতিমারির অভিঘাত কাটিয়ে দারিদ্র দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে ভারত। বিশ্বব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক রিপোর্ট জানাচ্ছে, সামগ্রিক ভাবেও গত এক দশকে ভারতে ‘চরম দারিদ্র’ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে।
ভারতে চরম দারিদ্র্যসীমার হার গত ১০ বছরে ২৭.১ শতাংশ থেকে কমে ৫.৩ শতাংশ হল। বিশ্বব্যাঙ্কের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০১১-১২ সালে দেশে চরম দারিদ্যসীমা ছিল ২৭.১ শতাংশ। ২০২২-২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫.৩ শতাংশ। ২০১১-১২ সালে দেশে চরম দরিদ্রের সংখ্যা ছিল ৩৪ কোটি ৪৪ লক্ষ ৭০ হাজার। সেখানে ২০২২-২৩ সালে দেশে চরম দারিদ্র্যসীমার মধ্যে এসেছে ৭ কোটি ৫২ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষ।

বিশ্বব্যাঙ্কের তথ্য বলছে, গত ১১ বছরে ২৬ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষকে দারিদ্রসীমার উপরে আনা সম্ভব হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও মধ্যপ্রদেশেই ২০১১-১২ সালে দেশের ৬৫ শতাংশ চরম দরিদ্রের বাস ছিল। ২০২২-২৩ সালে এই রাজ্যগুলিই দারিদ্রসীমা কমানোর ক্ষেত্রে দুই-তৃতীয়াংশ ভাগ নিয়েছে।

সাম্প্রতিক রিপোর্টে স্পষ্ট, অতিমারি-পর্বের সেই ধাক্কা সামলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জমানায় অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে দারিদ্র দূরীকরণ কর্মসূচি। ২০১১-১২ সালে ভারতে ‘চরম দরিদ্র’ জনসংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ৩৪ কোটি। ২০২২-২৩ সালে তা নেমে এসেছে সাড়ে সাত কোটিতে। এমনকি ওই রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০১১-২৩ সালের মধ্যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দারিদ্র্যও ৫৭.৭ শতাংশ থেকে কমে ২৩.৯ শতাংশে এ দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বব্যাঙ্ক দারিদ্রের সংজ্ঞা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আগে দৈনিক ২.১৫ ডলার (প্রায় ১৮৪ টাকা) খরচের ক্ষমতাসীমা মেনে চলত। ২০২১ সালে তা বাড়িয়ে ৩ ডলার (প্রায় ২৫৭ টাকা) করা হয়। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তার পরেও ভারতে কমেছে দরিদ্রের সংখ্যা।
বিশ্বব্যাঙ্ক এই তথ্য হাজির করেছে দিনপ্রতি ৩ ডলার আয়ের হিসাব ধরে। ২০২১ সালের মূল্য সূচক ধরে আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমা নিরূপণ করা হয়েছে, দিনে যারা ৩ ডলার বা তার কম রোজগার করে তাদের ধরে। এতে দেখা যাচ্ছে, দেশের গ্রামীণ ও শহর এলাকা দুক্ষেত্রেই প্রভাব পড়েছে। ২০১৭ সালের মূল্য সূচক ধরে দিনপ্রতি খরচের পরিমাণ আগে ছিল ২.১৫ ডলার। সেই গ্রাফ ধরলে ভারতের দরিদ্র সংখ্যা ১৬.২ শতাংশ থেকে নেমে ২.৩ শতাংশে পৌঁছেছে।

তথ্য বলছে, গ্রামীণ ও নগর এলাকায় সমানভাবে দারিদ্র্যসীমা কমেছে। গত ১১ বছরে গ্রামীণ এলাকায় ১৮.৪ শতাংশ থেকে কমে ২.৮ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ১০.৭ শতাংশ থেকে কমে ১.১ শতাংশে এসে ঠেকেছে। সর্বোপরি বহুমাত্রিক দারিদ্যসীমাতেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে দেশের। বহুমাত্রিক দারিদ্র্য শুধুমাত্র আর্থিক অনটন নয়, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং জীবনযাত্রার মান সহ সবমিলিয়ে একটি দারিদ্র্য সূচক।

২০০৫-০৬ সালে ছিল ৫৩.৮ শতাংশ। ২০১৯-২১ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬.৪। ২০২২-২৩ সালে তা আরও কমে হয়েছে ১৫.৫ শতাংশ।