Export Import বাণিজ্যে সমতা ফেরাতে বাংলাদেশি পণ্যে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তের জেরে কতটা প্রভাব পড়বে? কী বলছে সীমান্ত বাণিজ্যমহল? দেখুন ভিডিও

0
10
অডিও শুনুন

অর্পিতা বনিক ও রাহুল দেবনাথ ,দেশের সময় : পেট্রাপোল : স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্র। ফলে, রবিবার থেকে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোল দিয়ে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুল্ক দফতর সূত্রে খবর, পেট্রাপোল মারফত বাংলাদেশ থেকে দৈনিক প্রায় ২৫ ট্রাক তৈরি পোশাক ঢুকতে, যা তাদের অন্যতম রফতানি পণ্য। আমদানি আটকানো হয়েছে আরও কিছু সামগ্রীর। দেখুন ভিডিও

এই সিদ্ধান্তের জেরে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের আমদানি কমতে পারে ভারতে। একই সঙ্গে ভারতের বাজারে পোশাকের উৎপাদনে গতি আসতে পারে। এর জেরে ঘরোয়া টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে ১ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা বাড়তে পারে।

বাংলাদেশের পোশাক আমদানিতে রাশ টানার দাবি অনেক দিন ধরেই জানাচ্ছিলেন ভারতের পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক শূন্য হওয়ায় গত কয়েক বছরে আমদানি অনেকটা বেড়েছিল। এই সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার জেরে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি রয়েছে বলে মত বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের। এ ব্যাপারে ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজ়েশনের ইস্টার্ন রিজিয়নের চেয়ারম্যান বিমল বেঙ্গানি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘ভারতের অত বেশি ক্ষতি হবে না। স্থলসীমান্তের বদলে বন্দর দিয়ে রপ্তানি করা বাংলাদেশের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’ একই কথা বলেন সিয়াম লজিস্টিক প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান সুমন রায় ।

বাংলাদেশের উপর এই নিষেধাজ্ঞার জেরে ভারতের পোশাক শিল্পের বৃদ্ধির পথ আরও প্রশস্ত হবে। এ ব্যাপারে ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের ন্যাশনাল টেক্সটাইল কমিটির চেয়ারম্যান সঞ্জয় জৈন বলেছেন, ‘আমরা প্রতি বছর বাংলাদেশের থেকে ৬ হাজার কোটি টাকার পোশাক কিনে থাকি। এখন তা কমে এক থেকে দু’হাজার কোটিতে নেমে আসতে পারে। সেই জায়গা নিতে পারে ভারতে তৈরি পোশাক।’ কারণ বর্তমানে ভারতে যে পরিমাণ পোশাক আমদানি করা হয়, তার এক তৃতীয়াংশই আসে বাংলাদেশ থেকে।

তবে বাংলাদেশের উপর এই নিষেধাজ্ঞার ফলে দীর্ঘমেয়ায়ে ভারত উপকৃত হলেও, স্বল্পমেয়াদে সাময়িক কিছু সমস্যা হতে পারে। যেমন, সাপ্লাই চেনে ব্যাঘাত। ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের অনেক পোশাক বাংলাদেশ থেকে আসে। সেগুলি কম পরিমাণে এলে বাজারের পর্যাপ্ত জোগানে ঘাটতি হতে পারে। তবে তা স্বল্প সময়ের জন্য হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

সরকারি সূত্র বলছে, দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে সুবিচার এবং সাম্যের লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত। দেশীয় শিল্পও উপকৃত হবে। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, আমদানিকারী একাংশ উদ্বিগ্ন। পোশাক আমদানির জন্য তাঁরা ৯০% টাকা বাংলাদেশের রফতানিকারীদের দিয়ে দিয়েছেন। ফলে ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ছে।

পেট্রাপোল আন্তর্জাতিক ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘বাংলাদেশকে একটা বড় বার্তা দেওয়া হলো। আমরা যেন বাংলাদেশের কাছে একটা ভিলেন হয়ে গিয়েছি। যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, আমাদের রাষ্ট্র নেতারা সাহায্য করেছিলেন। আজকে তার কোনও মূল্যায়ন আমাদের কাছে নেই। ভারতের বিরুদ্ধে যে প্রচার হচ্ছে বাংলাদেশে, সেটার জন্যেই ব্যবসায় প্রভাব পড়ে।’ 

পেট্রাপোল সীমান্ত বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত  সিয়াম লজিষ্টিক কোম্পানির কর্ণধার সুমন রায় জানান, বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর ব্যবহার করে সারাদিনে যা গাড়ি ঢোকে ভারতে তার প্রায় ২৫ শতাংশ গাড়ি পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে আসে। পেট্রাপোল দিয়ে পোশাক-সহ বেশ কিছু প্যাকেটজাত খাদ্য সামগ্রী, প্লাস্টিকের সামগ্রী আসে বাংলদেশ থেকে। এই সব পণ্য আমদানি বন্ধ করে বাংলাদেশে আর্থিক প্রভাব পড়বে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যিক লাভ হবে বলেই জানাচ্ছেন তিনি।

সীমান্ত বাণিজ্য ব্যবসায়ী অসীম সেন বলেন , বাণিজ্যে সমতা ফেরাতে বাংলাদেশি পণ্যে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্র সরকার সেই সিদ্ধান্তকে আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাচ্ছি । কারণ এই সিদ্ধান্তের জেরে আগামীদিনে দেশীয় শিল্পকেও সাহায্য করবে, বিশেষত ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলি আর্থিক ভাবে লাভবান হবে বলে আমার ধারনা ।

সসরকারি মহলের দাবি, এই পড়শির বাণিজ্যিক সম্পর্ক এ বার ‘পারস্পরিক শর্ত’ নির্ভর হবে। ভারত থেকে সুতো এবং চাল আমদানিতে একই রকম নিষেধাজ্ঞা বসিয়েছে ঢাকা। অন্যান্য পণ্যেও নজরদারিও বাড়াচ্ছে। নয়াদিল্লির সিদ্ধান্ত এর পাল্টা জবাব।

গত শনিবার বাণিজ্য মন্ত্রকের ডিজিএফটি বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের আমদানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। শুধু মুম্বইয়ের নভ শেভা এবং কলকাতা বন্দরের মাধ্যমে তা আনা যাবে। প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, কর্বোনেটেড পানীয়, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, তুলো ইত্যআদিও অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজ়োরাম, ফুলবাড়ি এবং পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংরাবান্ধার ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন এবং চেক পোস্ট দিয়ে এ দেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের নিষেধাজ্ঞা দেশীয় শিল্পকেও সাহায্য করবে, বিশেষত ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলিকে।

Previous articleYusuf Pathan পাক-নিন্দায় বিজেপি-র ‘তৈরি’ বহুদলীয় প্রতিনিধিদলে নাম থাকলেও যাচ্ছেন না তৃণমূল সাংসদ ইউসুফ পাঠান ,স্পষ্ট বার্তা মমতার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here