দেশের সময়: ম্যাজিক ফিগার পেরতে পারেনি বিজেপি। নরেন্দ্র মোদীর ম্যাজিক শেষ। সরকার গড়তে গেরুয়া শিবিরকে নির্ভর করতে হবে এনডিএ জোটের উপর। আর এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের সরকার গড়তে নজরে ‘N’ ফ্যাক্টর। চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতীশ কুমার কী করবেন, সেদিকেই নজর।
চন্দ্রবাবু নাইডু তাঁর রাজ্যের জন্য স্পেশাল স্টেটাসের দাবি যে ছাড়বেন না, তা একরকম স্পষ্ট। আর নীতীশ কুমার? তাঁর আবদার কী। দরাদরিতে না পোষালে তিনি কি আবার পাল্টি খেতে পারেন? এদিকে, সরকার গড়তে ঝাঁপাচ্ছে ইন্ডিয়াও। আজ, বুধবার কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের বাড়িতে বসতে চলেছে রণকৌশল বৈঠক। সেই বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিকে, আজই বৈঠকে বসছে এনডিএ। ইতিমধ্যেই দিল্লিতে পৌঁছে গিয়েছেন এনডিএর শরিকরা। কীভাবে সরকার গড়া হবে, কার কী দাবি রয়েছে, আলোচনা হবে সেসব নিয়েই। এনডিএ সরকার গড়লে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয়বারের জন্য মোদী শপথ নিতে পারেন ৯ জুন। কিন্তু সেই সরকারের নাম আর মোদী সরকার হবে না। নাম হবে মিলিঝুলি সরকার। একেই বলে নিয়তির পরিহাস।
এতদিন যাঁকে নিয়ে মোদী উঠতে বসতে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতেন, সেই ইউপিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ডক্টর মনমোহন সিং ২০০৯ সালে পেয়েছিলেন ২০৬ আসন। এবার সেই মনমোহন সিং হয়েই থাকতে হবে মোদিকে। শিখতে হবে জোট রাজনীতির ধর্ম। সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী হয়েও কি ‘একনায়কতন্ত্র’ হারাবেন মোদী? পারবেন একের পর এক বিল পাশ করাতে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ বলে দিয়েছেন, ‘পারবেন না। যা ইচ্ছে করার দিন শেষ মোদীর।’
মোদী ম্যাজিক যে ফিকে হয়ে গিয়েছে, তা মানছেন বিজেপি নেতারাও। আড়ালে আবডালে তাঁরা বলতে শুরু করেছেন, একসময় তিনি দাবি করতেন, হারা ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু এখন জেতা ম্যাচেও হেরে যাচ্ছেন তিনি। গত ১০ বছর ধরে পুরসভা, পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা সমস্ত ভোটে তাঁকেই মুখ করে ভোটে লড়েছে বিজেপি। দলের পোস্টার বয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। বিজেপি নয়, মোদী গ্যারান্টিকে সামনে রেখেই ভোট হয়েছিল।
স্লোগান বেঁধে দিয়েছিলেন তিনিই। কিন্তু এবার তাঁর সেই ম্যাজিক কাজেই এল না। ভোটের ফলে প্রভাব ফেলল না রামমন্দির ইস্যুও। অযোধ্যায় রামমন্দির যে লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে, সেই ফৈজাবাদেও হারতে হয়েছে বিজেপিকে। এই পরিস্থিতিতে মোদীর বিকল্প কে, ভোটের ফলপ্রকাশের পরই সেই খোঁজ শুরু করে দিয়েছে আরএসএস।
হিন্দি বলয়ের পার্টির পরিচয় থেকে বেরিয়ে ভারতের মানচিত্র দখলের স্বপ্ন দেখেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বলা হয়েছিল, এবার দাক্ষিণাত্য জয় হবে। কিন্তু তা হল না। উল্টে নিজেদের দুর্গ আর্যাবর্তের একের পর এক রাজ্যে ধাক্কা খেতে হয়েছে বিজেপিকে। রাজস্থান থেকে হরিয়ানা সর্বত্রই আসন হারিয়েছে গেরুয়া শিবির। যোগী-রাজ্য উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে ধরাশায়ী করে দিয়েছে অখিলেশ যাদব ও রাহুল গান্ধীর ব্রিগেড। মুখ থুবড়ে পড়েছে ডবল ইঞ্জিনের মিথ।
আড়াই দশকের এনডিএকে জোর টক্কর দিল এক বছরের ইন্ডিয়া। ৫২ থেকে একলাফে বেড়ে কংগ্রেস ৯৯। জয়ের পর রাহুল গান্ধীর আক্রমণ, দেশের মানুষ নরেন্দ্র মোদীকে চায় না, ভোটের ফলে তা স্পষ্ট। অন্যদিকে, বাংলায় ফের মুখ থুবড়ে পড়ল বিজেপি। ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেও পশ্চিমবঙ্গে আদৌও ভালো ফল করতে পারলেন না মোদী-শাহরা। কাজে এল না সন্দেশখালি ইস্যু। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরাসরি তোপ, ‘বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। নৈতিক হার স্বীকার করে মোদীর এখনই ইস্তফা দেওয়া দরকার।’
হারতে হারতে কোনও মতে জিতলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য মন্তব্য, ‘এটা ঠিক বাংলায় আমাদের ফল আশাপ্রদ নয়। কিন্তু জয়ের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী ও কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে আক্রমণ করছেন, এটা কোন রাজনীতি।’
এদিকে, বঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর হারের পর তোপ দাগতে ছাড়েননি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম না করে তাঁর আক্রমণ, ‘উনি আসলে কংগ্রেসের ছিলেন না। বিজেপি ম্যান ছিলেন।
বিজেপিকে হারিয়ে বহরমপুরে জয়ী হয়েছেন জোড়াফুলের প্রার্থী ইউসুফ পাঠান।’ একইভাবে হার নিয়ে কাঠিবাজির তত্ত্ব সামনে এনেছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বলেছেন, ‘রাজনীতিতে কাঠিবাজি থাকে। আমার সঙ্গেও তা হয়েছে। কিন্তু আমি হারা সিটেও নিষ্ঠার সঙ্গে পরিশ্রম করেছি। সফলতা আসেনি।’ অধীর হারলেও গনি গড়ে জিতে বাংলায় কংগ্রেসের একমাত্র মুখরক্ষা করেছেন ডালু-পুত্র ঈশা খান চৌধুরী।