দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ তিনি আসানসোলের জেলের পুলিশ সুপার। তাঁর জেলেই দীর্ঘদিন ছিলেন গরু পাচার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত অনুব্রত মণ্ডল । এমনকী অনুব্রতর গ্রেফতারির পর দুর্গাপুজোর সময় জেলে থাকা বন্দিদের জন্য এলাহি খাওয়া-দাওয়ারও আয়োজন করা হয়েছিল জেল কর্তৃপক্ষের তরফে। জেলে বসেই কব্জি ডুবিয়ে ফ্রায়েড রাইস, দেশি মুরগির ঝোল, সুস্বাদু কাতলা খেয়েছেন কেষ্ট।
এবার সেই জেলেরই পুলিশ সুপারকে ডেকে পাঠাল ইডি ৷ আসানসোলের জেল সুপার কৃপাময় নন্দীকে তলব করা হয়েছে বলে জানতে পারা যাচ্ছে। ৫ এপ্রিল দিল্লিতে হাজিরার নোটিশ। বেশ কিছু নথি নিয়ে তাঁকে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে বলে খবর।
আসানসোল জেলে অনুব্রত মণ্ডলকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করছিলেন শুভেন্দু অধিকারীরা। সেই কারণেই কিনা স্পষ্ট নয় তবে অনুব্রত মণ্ডল যখন তিহাড় জেলে তখন আসানসোল জেলের সুপার কৃপাময় নন্দীকে তলব করল ইডি।
জানা গিয়েছে, কৃপাময়কে দিল্লিতে তলব করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তাঁকে বলা হয়েছে ১০ বছরের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট সঙ্গে নিয়ে যেতে। যা গরু পাচারের তদন্তে নতুন মোড় হিসেবেই দেখছেন অনেকে।
বিরোধী দলনেতার বক্তব্য ছিল, অনুব্রত শুধু আসানসোল জেলে কচি পাঁঠার ঝোল বা দিশি মুরগি খাচ্ছিলেন তাই নয়। তিনি রীতিমতো মোবাইলে জেলার নেতাদের নানান রাজনৈতিক নির্দেশ দিচ্ছিলেন।
বিজেপির অনেকে এও বলছিলেন, আসানসোল জেলে সময়ে অসময়ে বীরভূমের তৃণমূল নেতারা কেষ্ট মণ্ডলের সঙ্গে দেখা করতেন।
এতদিন সবটাই ছিল রাজনৈতিক মঞ্চের অভিযোগ। এবার জেল সুপারকে ইডির তলব অন্য মাত্রা যোগ করেছে। এখন দেখার জেল সুপার কৃপাময় কবে যান ইডি দফতরে বা আদৌ যান কিনা।
তবে পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, এই তলব অন্যান্য জেলের সুপারদেরও তঠস্থ করে তুলতে পারে। বিশেষ করে নিয়োগ দুর্নীতি, কয়লা ও গরু পাচার মামলায় যাঁরা বিভিন্ন জেলে বন্দি তাঁদের ব্যাপারে জেল কর্তৃপক্ষ চাপে থাকবে বলেই মত অনেকের।
এদিকে তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই অনুব্রতর উপর চাপ বাড়িয়ে চলেছেন তদন্তকারীরা। হাতে উঠে আসছে নিত্যনতুন তথ্য। ডাক পড়েছে অনুব্রত কন্যা সুকন্যা মণ্ডলেরও। তাঁর কাছেও বেশ কয়েকবার এসে গিয়েছে নোটিশ। যদিও সুকন্যা জানাচ্ছেন তাঁর শরীর খারাপ। সে কারণেই যেতে পারছেন না দিল্লিতে।
এদিনও এই মর্মে ইডিকে একটি মেল পাঠিয়েছেন সুকন্যা। শেষবার গত ২০ মার্চ তাঁকে তলব করেছিল ইডি। না গেলে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দিয়েছিল ইডি। যদিও ই-মেলে সুকন্যা জানাচ্ছেন শরীর খারাপের কারণে তিনি যেতে পারছেন না। এমতাবস্থায় এবার আসানসোলের জেল সুপারকে তলব এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেটের তলবে নতুন করে শুরু হয়েছে চাপানউতর। তাঁর কাছ থেকে ঠিক কোন কোন তথ্য পেতে চাইছেন তদন্তকারীরা তা নিয়ে চলছে জল্পনা।
অন্যদিকে এখন অনেকগুলি দিন তিহাড়ে কাটাতে হবে অনুব্রতকে। কেষ্টর আইনজীবী অবশ্য জানাচ্ছেন, সেখানে ভালই আছেন তিনি। খাওয়া দাওয়া করছেন ঠিকঠাক। ঘুমও হচ্ছে ভালই। আগে থেকে এই জেলে রয়েছেন কেষ্টর প্রাক্তন দেহরক্ষী সায়গল হোসেন। আবার সদ্য গ্রেফতার হওয়া অনুব্রতর হিসাবরক্ষক মণীশ কোঠারিও ঢোকানো হয়েছে তিহাড়েই।