

রবিবার গভীর রাতে কেঁপে উঠল দক্ষিণ-পূর্ব আফগানিস্তান । রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬.০, যা আতঙ্ক ছড়িয়েছে আফগানিস্তানের পাশাপাশি পাকিস্তান ও ভারতের বেশ কিছু অঞ্চলেও। রাত ১২টা ৪৭ মিনিট নাগাদ হঠাৎই কম্পন অনুভূত হয়। ঘুম ভেঙে অনেক মানুষ আতঙ্কে ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় ছুটে আসেন। রাজধানী দিল্লি-সহ উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন জায়গায়ও ভূমিকম্পের আঘাত টের পাওয়া যায়। এখনও পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে।

মূল কম্পনের ২০ মিনিটের মধ্যেই প্রথম ‘আফটারশক’ হয়, রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৪.৫। ভূমি থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে ছিল এর উৎস। এর পর ভারতীয় সময় অনুযায়ী রাত ১টা ৫৯ মিনিটে ৪.৩ মাত্রা, সোমবার ভোর ৩টে ৩ মিনিটে ৫ মাত্রা এবং ভোর ৫টা ১৬ মিনিটে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে আফগানিস্তানে। প্রতিটির গভীরতা ছিল ভূমির ১০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গভীরে।

ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল আফগানিস্তানের জালালাবাদ থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে এবং মাটি থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার গভীরে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি এভাবে ভূমিকম্প হলে সেটি অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়, কারণ এর প্রভাব দ্রুত পৃষ্ঠে পৌঁছে যায় এবং ঘরবাড়ি ভাঙনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আফগানিস্তানে ২৫০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত কমপক্ষে ৫০০। আরও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।

আফগানিস্তান প্রায়ই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। এর প্রধান কারণ হল দেশটি ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এই অঞ্চলের ভূপৃষ্ঠ অত্যন্ত সক্রিয় এবং প্রায়শই প্লেটগুলির সংঘর্ষ থেকে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়। মাত্র এক মাস আগেও দেশটিতে ৫.৫ ও ৪.২ মাত্রার দুটি ভূমিকম্প হয়েছিল।
এর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানে ৬.৩ মাত্রার আরও একটি তীব্র ভূমিকম্প হয়েছিল। দেশটির একাংশ ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল সেই কম্পনে। বহু বাড়িঘর ভেঙে পড়েছিল। তালিবান সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, মৃতের সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। যদিও পরে রাষ্ট্রপুঞ্জ জানায়, তাদের হিসাবে আফগানিস্তানের ওই ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা দেড় হাজারের কিছু বেশি।
ভূমিকম্পের মূল কারণ পৃথিবীর ভেতরের টেকটোনিক প্লেটগুলির নড়াচড়া। এই বিশাল প্লেটগুলো সবসময় আস্তে আস্তে সরে যায় এবং একসময় একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খায়। ফলে ভেতরে প্রচণ্ড চাপ তৈরি হয়। চাপ চরমে পৌঁছালে ফাটল ধরে যায়, আর সেখান থেকেই শক্তির বিস্ফোরণ ঘটে, যা ভূমিকম্পের রূপ নেয়।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে, ঘনবসতিপূর্ণ উপত্যকা, দুর্বল নির্মাণবিধি এবং ভূকম্পন প্রতিরোধে অপর্যাপ্ত প্রস্তুতি- সব মিলিয়ে বড় ধরণের ক্ষতি ও দুর্যোগের সম্ভাবনা তৈরি করে। উপরন্তু জলবায়ু পরিবর্তন মাটির স্থিতিশীলতা ও আবহাওয়ার ধাঁচেও প্রভাব ফেলছে, এতে ভূ-ভিত্তির সূক্ষ্ম ভারসাম্য নতুন চাপে পড়ে এবং ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। তাই পর্যবেক্ষণ বাড়ানো, সিসমিক মনিটরিং শক্ত করা এবং দুর্যোগ প্রস্তুতিতে সক্রিয় হওয়া এখন আগের চেয়ে বেশি জরুরি বলে বিজ্ঞানীরা বলছেন।