রতন সিনহা : দেখতে দেখতে এসে গিয়েছে দুর্গাপুজো । প্রতি বছর এই কয়েকটা দিনের জন্য সারা বছর দীর্ঘ অপেক্ষার পথ পেরোন বাঙালিরা। সেই দুর্গাপুজো ঘিরে বাংলার গ্রাম ও শহরের বুকে সাজ-সাজ পরিবেশ তৈরি হয় সর্বত্র। থিমের লড়াইয়ে একে অপরকে টক্কর দেওয়ার প্রতিযোগিতায় নামে গ্রাম ও শহরের ছোট-বড় ক্লাবগুলো।
আস্তে আস্তে সেই থিমের লড়াই এক ব্যাপক চেহারা নেয় কলকাতা সহ জেলা শহরের দুর্গাপুজোয়। পুজো মানে তো আসলে শুধু পুজো নয়, হাজার হাজার মানুষের রুটিরুজি, পরিশ্রম জুড়ে তৈরি হয় এই পুজো। কোটি কোটি টাকার উৎসব। শহরের সব পুজোই প্রতি বছর কিছু নতুনত্বের জন্য মুখিয়ে থাকে। গজিয়ে ওঠে বিভিন্ন সম্মানের। বিভিন্ন সংস্থা মূল্যায়ন করে পুরস্কার তুলে দেয় ক্লাবের হাতে। এটাই যেন প্রাপ্তি।
তবে এত আরম্বড়ের মধ্যে এখন কি আদৌ প্রকৃত ভাবনা পরিস্ফুট হচ্ছে? থিমেও কি সেই ভাবনা থাকছে? নাকি হারিয়ে যাচ্ছে? “থিম আস্তে আস্তে কিছু উদ্ভট বাংলা শব্দের প্রয়োগ হয়ে উঠছে। চলছে কথার জাগলারি। থিমের অর্থ হারিয়ে যাচ্ছে”– এমনটাই মত কলকাতা যাদবপুর এলাকার এক শিল্পী মোহিনী বিশ্বাসের।
পুজোর থিমের কাজের সঙ্গে যুক্ত মোহিনী বিশ্বাস , রাজু সাহা, মৃন্ময় দের মতো শিল্পীরা। বহু বড় বড় থিমের কারিগররা গত দুই-তিন বছর নিজেদেরকে সরিয়ে নিয়েছেন পুজোর কাজের থেকে। কিন্তু কেন? শিল্পী মোহিনী বিশ্বাসে কথায়, “শিল্পের একটা দাম থাকে। এখন ক্লাবগুলো অল্প রসদে অভিনবত্ব কাজ চাইছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় রসদের অভাবে বহু ভালো কাজ পূর্ণতা পাচ্ছে না। নামের খেলাতে মেতে গেছে এখনকার থিম। বাইরে জাঁকজমকের চাদর থাকলেও ভেতরে অভাব থাকছে ভাবনার।”
পুজোর থিম মেকার দীপঙ্কর বিশ্বাস বলেন দু’বছর হল নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন পুজোর থেকে। সরাসরি না বললেও বর্তমান পুজোর কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট নন তিনিও। তাঁর কথায়, “যেভাবে আমরা কাজ করেছি, সেই কাজ আর হচ্ছে কই? আমরা তো আর নিজের ইচ্ছায় কাজ করি না, ক্লাবের ইচ্ছায় কাজ করি। কিন্তু যে ধরনের কাজ আমি করি, সেই রকম কাজ করার তাগিদ তেমন দেখতে পায়নি কোনও ক্লাবকে।”
বনগাঁর রাজুর অবশ্য কোনও আক্ষেপ নেই করোনা পরিস্থিতিতে দু’বছর কাজ না করতে পেরে। একবছর মতিগঞ্জ ঐক্যসন্মেলনী ক্লাবে কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। একটি আদিবাসীগ্রামের উপাখ্যান তুলে ধরেছিলেন। পুজোয় পরিযায়ী বাঙালির গল্পও উঠে এসেছিল তাঁর গতবারের একটি পুজো মন্ডপে ,ছিল বাস্তবতার চিত্র ৷
তবে করোনার মতো মহামারী পুজোর উন্মাদনায় ভাঁটা ফেলেছে বলে মনে করেন অনেক শিল্পী । তাঁদের কথায়, “সময় তো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না। থিম পুজোর গোড়া থেকে ধীরে ধীরে উন্নতি ঘটেছে। তেমনই এখনও পরিবর্তন হচ্ছে। তবে এখন প্রচুর নতুন ছেলেমেয়ে কাজ করছে। সবার কাজ তো এক রকম হবে না। এভাবেই এখন থিম মেকারদের থিমের পুজো চলছে গোটা বাংলায়৷