Durand Cup Kolkata Derby : ১৯ বছর পর ডুরান্ড ফাইনালে ইস্টবেঙ্গল,মহারণের প্রস্তুতি তুঙ্গে দুই শিবিরে

0
495

দেশের সময়: রবিবার ডুরান্ড কাপের ফাইনাল। ফুটবলের মহারণ দেখার অপেক্ষায় গোটা বাংলা। মুখোমুখি হতে চলেছে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল। চলতি ডুরান্ড কাপে এটা দ্বিতীয় ডার্বি। তবে আজকের ডার্বি একেবারেই আলাদা। কারণ, ১৯ বছর পর ডুরান্ড কাপের ফাইনালে লাল-হলুদ। ইতিহাস বলছে, ২০০৪ সালে শেষবার ডুরান্ডের ফাইনালে পৌঁছেছিল ইস্টবেঙ্গল। সেই ম্যাচে মোহনবাগানকে ২-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল লাল-হলুদ।

শনিবার ছবি তুলেছেন সুবীর মজুমদার ৷

এরপর আরও একবার ডুরান্ডের ফাইনালে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছিল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। তবে ২০১৯-এ শেষবার ডুরান্ডের ফাইনালে পৌঁছেও গোকুলামের কাছে হেরে যেতে হয়েছিল তাদের। এবার যেন ২০০৪ সালের বদলা নিতে মুখিয়ে রয়েছে জুয়ান ফেরান্দোর ছেলেরা। বদলা আরও একটা কারণে। চলতি ডুরান্ডে গ্রুপ লিগের ম্যাচে হারের বদলা। অন্যদিকে, জয়ের ধারা অব্যাহত রাখাটাই চ্যালেঞ্জ ইস্টবেঙ্গলের। গ্রুপ লিগের এ গ্রুপে ছিল ইস্টবেঙ্গল। সেই গ্রুপে টপার হয়ে নকআউট পর্বে পা রাখে তারা।

প্রথমে গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ আর্মির সঙ্গে ২-২ ড্র করে ইস্টবেঙ্গল। এরপর মোহনবাগানের সঙ্গে ১-০ ব্যবধানে ডার্বি জেরে এবং এরপর গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পাঞ্জাবকে ১-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ ট্রপার হয় লাল-হলুদ ব্রিগেড। এরপর নকআউট পর্বে গোকুলাম এফসিকে ২-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে যায় ইস্টবেঙ্গল। সেমি ফাইনালে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের সঙ্গে প্রথমে ২-২ গোলে ড্র করে এবং পরে টাইব্রেকারে ৫-৩ ব্যবধানে হারিয়ে ডুরান্ড কাপের টিকিট পেয়ে যায় লাল-হলুদ ব্রিগেড।

অন্যদিকে, মোহনবাগানও ছিল গ্রুপ এ পর্বে। সেই গ্রুপে দ্বিতীয় দল হিসেবে নকআউট পর্বে ওঠে জুয়ান ফেরান্দোর ছেলেরা। গ্রুপ পর্বে দারুণ শুরু করে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড।  গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশ আর্মিকে ৫-০ গোলে হারিয়ে দেয় তারা। এরপর পাঞ্জাবকে হারায় ২-০ ব্যবধানে। এটা দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন, নকআউট পর্বে বোধ হয় টপার হবে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। কিন্তু তা হয়নি।

ইস্টবেঙ্গলের কাছে মোহনবাগান হেরে যায় ১-০ গোলে। ফলে নকআউট পর্বে ওঠা নিয়ে সমস্যায় পড়ে সবুজ-মেরুন বাহিনী। যদিও শেষ পর্যন্ত তারা কোয়ার্টার ফাইনালে পাকা করে নেয় নিজেদের জায়গা। নকআউট পর্বে মুম্বই সিটি এফসিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে দেয় মোহনবাগান।

এরপর এফসি গোয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনাল খেলার ছাড়পত্র পেয়ে যায় সবুজ-মেরুন।

মেগা ডার্বিতে যুবভারতী হাউসফুল ঘোষণা করে দিয়েছে ডুরান্ড কাপ কর্তৃপক্ষ। এদিকে মহারণের আগে রেফারিং নিয়ে সুর চড়িয়েছে লাল-হলুদ শিবির।

ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার প্রশ্ন তুলেছেন, একটি ক্লাবকে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, কেয়ার্টার ফাইনালে কীভাবে মুম্বই সিটি এফসিকে ন্যায্য পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাছাড়া সেমি ফাইনালে বক্সের বাইরে ফাউল করা হলেও কীভাবে পেনাল্টি দেওয়া হল মোহনবাগানকে। তাঁর কথায়, ৩ তারিখ সুন্দর ম্যাচ হোক, এটাই চাই আমি। কোনও ক্লাবই যেন অন্যায্য সুবিধা না পায়।

আয়োজকরা যেন সঠিক সিদ্ধান্ত নেন। কোনও একটি বিশেষ ক্লাবকে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হবে, এমনটা যেন না হয়। একইসঙ্গে টিকিট নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন লাল-হলুদ কর্তা। বলেছেন, ডুরান্ডের প্রথম পর্বের ডার্বির টিকিট নেয়নি ইস্টবেঙ্গল। ফাইনালে ডুরান্ড কমিটির তরফে দেওয়া টিকিট নিয়েছে ইস্টবেঙ্গল।

তবে ক্লাবের কোনও কর্মকর্তা ফাইনালে মাঠে যাবেন না। এটাই তাঁদের প্রতিবাদ। অন্যদিকে বিশেষ একটি ক্লাবকে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার প্রশ্নে পাল্টা জবাব দিতে ছাড়েনি মোহনবাগানও।

মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত বলেছেন, ডার্বির আগে রেফারিদের উপর চাপ তৈরির কৌশল এটা।

প্রসঙ্গত, এখনও পর্যন্ত মোট ১৬ বার ডুরান্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইস্টবেঙ্গল।

ফুটবলপ্রেমীরা মনে করছেন, রবিবার কলকাতা ডার্বিতে আরও একবার দৃষ্টিনন্দন ম্যাচ দেখতে পারবেন তাঁরা। আজকের ম্যাচ যে হাইভোল্টেজ তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কুয়াদ্রাত ইস্টবেঙ্গলের স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। ফাইনালে তিনি কি আবারও কোনও চমক দেখাতে পারবেন? সেমি ফাইনালে দলের বেশ কয়েকজন ফুটবলারকে বিশ্রাম দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর অধিকাংশ সিদ্ধান্তই দলের পক্ষে এসেছে। গত দু’বছর ইন্ডিয়ান সুপার লিগে ইস্টবেঙ্গল একেবারে বাজে পারফরম্যান্স করেছিল। 

প্রথমে রবি ফাওলার এবং পরে ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন কোচ স্টিফেন কনস্ট্যান্টাইনকে এনেও হাল ফেরানো যায়নি দলের। আপাতত টানটান উত্তেজনায় ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা অধীর অপেক্ষায়, ১৭ নম্বর ডুরান্ড শিরোপা কি তাঁদের মাথায় উঠবে?

অন্যদিকে, মোহনবাগান সমর্থকরা হারের বদলা নিতে ফুটছেন টগবগিয়ে।

২০০৪ সালে বেঙ্গালুরুর হ্যাল থেকে ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার এডুয়ার্ডো চাকন কোয়েলহো লার্সেদা ওরফে ডুকে সই করিয়েছিল মোহনবাগান। টাফ ফুটবল খেলে অচিরেই সমর্থকদের আস্থা অর্জন করেছিলেন তিনি। প্রায় একযুগ আগে বুটজোড়া তুলে রাখলেও নিজেকে এখনও পালতোলা নৌকায় সওয়ারি মনে করেন। হাইভোল্টেজ ম্যাচের আগে ব্রাজিল থেকে এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডু জানিয়েছেন, ব্রাজিলে বসেই আমি কলকাতায় ডার্বির উত্তাপ টের পাচ্ছি। কত পুরনো স্মৃতি ভেসে উঠছে চোখের সামনে। কলকাতার সমর্থকদের উন্মাদনা কখনও ভোলার নয়। ডার্বি সবসময় ফিফটি ফিফটি। 

তবে এবারের মোহনবাগান অনেক বেশি ওজনদার। বিশেষ করে কামিংস সাদিকুর মতো ফুটবলার দলের সম্পদ। আশা করি মোহনবাগানই শেষ হাসি হাসবে। ১৯ বছর আগের স্মৃতি হাতড়ে বললেন, সেবার সালগাওকরকে টাইব্রেকারে হারিয়ে আমরা ফাইনালে উঠেছিলাম। মেহতাব বাসুদেবরা দারুণ ছন্দে ছিল। একটা সময় প্রবল প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে দিয়েছিল মোহনবাগান। ১-২ গোলে হারলেও সেরা পারফরম্যান্স ধরে রেখেছিলাম। শেষ মুহূর্তে চন্দনের দুরন্ত গোলের পর প্রত্যাবর্তনের সময় পাওয়া যায়নি। সেই ম্যাচে ট্যাকল করতে গিয়ে হাঁটুতে চোটও পেয়েছিলাম।  

অন্যদিকে, সুদর্শন কার্লেস কুয়াদ্রাতের স্টাটেজিতেই স্বপ্নের জাল বুনছে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। তাঁর ধূর্ত চালেই পালাবদলের গল্প লিখেছে লাল-হলুদ শিবির। ডাগ আউটের লড়াইয়ে ফেরান্দোকে বশ মানাতে পারলে কুয়াদ্রাতের জন্য একাধিক উপহার অপেক্ষা করছে নিশ্চিতভাবেই।

খাবরাদের কোচ অবশ্য নিজেকে সংযমের কম্বলে মুড়ে ফেলেছেন। প্রথম দল নিয়েও স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না। ১১টি ডামি ম্যানিকুইন সাজিয়ে মহড়া চলেছে ফুটবলারদের। প্রস্তুতি শেষে ক্লেটন ও বোরহা জানিয়ে দিয়েছেন, বড় ম্যাচ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তার চেয়েও বেশি জরুরি ট্রফি জেতা। স্টিফেন কনস্ট্যানটাইনের মতো মোটেই একগুঁয়ে নন লাল-হলুদ কোচ।

কঠিন ম্যাচে একাধিক পরিকল্পনা করেই মাঠে আসেন তিনি। চুঁইয়ে আসা খবর, ভিডিও অ্যানালিস্টের সঙ্গে মোহনবাগান ম্যাচের রেকর্ডিং বেশ কয়েকবার দেখেছেন তিনি। বোমাসের সঙ্গেই আশিক কুরুনিয়ানের দৌড় থামাতে মরিয়া স্প্যানিশ কোচ। পাশাপাশি ফেরান্দোর দুর্গে আঘাত হানতে সেট পিস বড় ভরসা তাঁর। ডুরান্ডের নকআউট পর্বে ফ্রি কিক ও কর্নার দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে ইস্টবেঙ্গল।

ডিফেন্ডার জর্ডন এলসের উচ্চতা কাজে লাগানোর ব্লু প্রিন্টও তৈরি। প্রথম এগারো সাজানোর পাশাপাশি রিজার্ভ বেঞ্চ নিয়ে বিব্রত লাল-হলুদ। ফিটনেসের সমস্যা থাকলেও মোবাশির রহমান ও ভিপি সুহেরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান কুয়াদ্রাত। আরও একটি বিষয় স্পষ্ট, মোহনবাগানের শুরুর চাপ সামলে প্রতি আক্রমণে পাশার দান উল্টে দিতে চান লাল-হলুদ কোচ।

ফুটবলারদের তরতাজা রাখাটাই লক্ষ্য ফেরান্দোর। সেকারণে সেমি ফাইনালের পর হাল্কা অনুশীলন করিয়েই ছুটি দিয়েছেন ছেলেদের। বলেছেন, ফাইনালে যাতে একশো শতাংশ উজাড় করে খেলতে পারে ছেলেরা, তাই প্রয়োজনমতো বিশ্রাম দিয়েছি ওদের। চলতি মরশুমে শুরু থেকেই মোহনবাগান লেফ্ট উইং ব্যাক পজিশনে দুর্বল। প্রতি ম্যাচেই প্রতিপক্ষ এই জায়গা থেকেই আক্রমণ তুলে আনার চেষ্টা করেছে। গত বৃহস্পতিবার সেমি ফাইনাল ম্যাচ দেখতে যুবভারতীতে হাজির ছিলেন খোদ ইস্টবেঙ্গল কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত।

ফেরান্দো অবশ্য এসব নিয়ে এতটা ভাবতে নারাজ। বলেছেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী ফর্মেশনে পরিবর্তন আনতে হয়। তবে ছেলেরা চেষ্টা করছে মানিয়ে নেওয়ার। ডুরান্ড কাপের গ্রুপ পর্বে হেরে মাঠ ছেড়েছিল মোহনবাগান। টানা আট ম্যাচের পর মর্যাদার লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসে ইস্টবেঙ্গল।

রবিবার ফাইনালে তাই প্রতিশোধের লক্ষ্যে মুখিয়ে জেসন কামিংস দিমিত্রি পেত্রাতোসরা। জানিয়ে দিয়েছেন, সেই হার মেনে নেওয়া কঠিন ছিল। তবে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। ডার্বি জিতেই সমর্থকদের খেতাব উপহার দেব। হুগো বোমাস অবশ্য আজকের ম্যাচকে প্রতিশোধ হিসেবে দেখতে নারাজ। তাঁর কথায়, অথীতে একাধিক ডার্বি জিতেছি। ফলে একটা হারে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েনি।

Previous articleParenting Tips: আপনার সন্তান কি খুবি দুরন্ত ? কোন কথাই কি শুনছে না? অবিলম্বে জানুন কী করবেন
Next articleDesher Samay epaper দেশের সময় ই পেপার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here