নবান্নের পর কালীঘাট, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠক বার বার ভেস্তে গিয়েছে। সোমবার আবার জুনিয়র ডাক্তারদের ইমেল করে কালীঘাটের বৈঠকে ডাকা হয়েছে। এ বার কি সফল হবে বৈঠক?
স্টেনোগ্রাফারে মিলল অনুমতি। পেশাদার স্টেনোগ্রাফার নিয়ে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হল। প্রতিনিধিরাও ভিতরে ঢুকলেন।
ভিতরে গেলেন সমস্ত মেডিক্যাল কলেজেরই প্রতিনিধিরা। অনিকেত মাহাতো, কিঞ্জল নন্দ, অনিকেত কর, লহরী সরকার, রক্তিম মজুমদার, পরিচয় পাণ্ডা, অমৃতা ভট্টাচার্য, রুমেলিকা কুমার-সহ ৩০-৩৫ জন ভিতরে ঢুকলেন।
দেশের সময় কলকাতা : কালীঘাটে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁরা স্পষ্ট বলে দেন, তাঁদের তরফে মিটিংয়ের কার্যবিবরণী লিখতে দিতে হবে। এই কথা লিখে ফের একি ইমেলও পাঠান তাঁরা মুখ্যসচিবকে।
এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছে সরকার। জানিয়েছে কার্যবিবরণীর শর্তে তারা রাজি। ফলে বিকেল ৫টায় কালীঘাটে নির্ধারিত বৈঠকটি হতে চলেছে আজই। তবে ডাক্তাররা সঙ্গে যে দু’জন স্টেনোগ্রাফার নিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের বৈঠকের মিনিটস লিখতে দেওয়া হবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। শেষমেশ কী হয়, সেদিকেই এখন নজর গোটা রাজ্যের। এদিন ডাক্তাররা রওনা দেওয়ার সময়ে তাঁদের উদ্দেশে উলুধ্বনি দেন সাধারণ মানুষ।
অনেকেই মনে করছেন, প্রথমে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবি, সেখান থেকে সরে ভিডিও করতে চাওয়া এবং শেষমেশ সরকার তাও না মানলে নিজেদের তরফে ট্রান্সক্রিপ্টর বা স্টেনোগ্রাফার নিয়ে গিয়ে বৈঠকের মিনিটস লেখার দাবি– আন্দোলনকারীদের এই ধারাবাহিক জেদাজেদির একটা বড় কারণ রয়েছে।
তা হল, এই মুহূর্তে ডাক্তারদের আন্দোলনের দিকে চোখ গোটা রাজ্যের। সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ যেমন এই আন্দোলনের অন্যতম অস্ত্র, তেমনই একথা অস্বীকার করার উপায় নেই, বহু রাজনৈতিক দল এবং গোষ্ঠীও কার্যত বন্দুক রাখছে এই ডাক্তারদের ঘাড়েই। ফলে এখন তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কী বলবেন আর কী বলবেন না, কী কী মানবেন আর কতটা মানবেন না– তার উপরে নির্ভর করছে অনেক কিছু।
তাই আন্দোলনের শক্তি ধরে রাখার প্রবল দায়ের পাশাপাশি, এইভাবে ৫-৬ দিন ধরে রাস্তায় পড়ে থাকার পরে পিছিয়ে আসারও জায়গা নেই তাঁদের। তাই পাঁচদফা দাবি নিয়ে যে অনড় অবস্থান, তা সামান্যতম টোল খেলেই বা নত হলেই, এতদিন ধরে মাথা উঁচু করে সংহতি সংগ্রহ করা ডাক্তাররা ‘হেরে যেতে’ পারেন। কথা শুনতে হতে পারে আন্দোলনে সরাসরি অংশ না নেওয়া মানুষদের থেকেও। এটাই তাঁদের একটা বড় ভয় বা সতর্কতা বলে মনে করছেন অনেকে।
তাই এদিন মুখ্যসচিবের তরফে জুনিয়র ডাক্তারদের মেল করে পঞ্চম তথা শেবারের জন্য কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে বৈঠকে যোগ দিতে বলা হল বেলা ৩টে ৫৩ নাগাদ মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে ইমেল করেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
ওই মেলে তাঁরা স্পষ্ট জানান তাঁদের তরফ থেকে মিটিংয়ের ভিডিও করতে চান তাঁরা। তা না হলে, মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে যে ভিডিও করা হবে তা আনএডিটেড অবস্থায় সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারদের হাতে তুলে দিতে হবে। তাও সম্ভব না হলে তাঁদের তরফে লিখতে দিতে হবে মিটিংয়ের মিনিটস এবং রেকর্ড করতে দিতে হবে মিনিটসে দু’পক্ষের সই।
তাঁরা লেখেন, আরজি করের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করার পরে পুরোপুরি পাল্টে গেছে পরিস্থিতি। এই পরিস্থিতিতে বৈঠকের ভিডিও করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে স্বচ্ছতার স্বার্থে।
তাই দু’তরফের আলাদা করে ভিডিও করা দরকার বলে লেখেন তাঁরা। যদি তা না হয়, কেবল রাজ্যের তরফে ভিডিও করা হয়, তাহলে বৈঠক শেষের পরেই সঙ্গে সঙ্গে সেই ভিডিওর কপি তুলে দিতে হবে তাঁদের হাতে।
শেষে তাঁরা লেখেন, ভিডিও কোনওভাবেই সম্ভব না হলে, বৈঠক চলাকালীন পুরো মিনিটস নথিবদ্ধ করতে দিতে হবে। বৈঠক শেষের অব্যবহিত পরেই দু’পক্ষ সই করবে সেই মিনিটসে। বৈঠকে যোগদানকারী প্রত্যেকের হাতে এই মিনিটসের কপি তুলে দিতে হবে।
‘ফিরে এসে সকলের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত’, রওনা হওয়ার আগে বলে গেলেন আন্দোলনকারী ডাক্তারেরা