দেশের সময়: ফের মুখ খুললেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাবেশ নিয়ে তাঁর মন্তব্য, মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা হচ্ছে। একটি পরিবারকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। নেতাকে বাঁচানোর চেষ্টা হচ্ছে মাত্র। কংগ্রেসের মতোই তৃণমূলও শেষ হয়ে যাবে। দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্য ঘিরে ব্যাপক আলোড়ন ছড়িয়েছে।
তৃণমূলের ভবিষ্যৎ লেখা হয়ে গিয়েছে। মারপিট করে কয়েকটা আসন জিততে পারে, কিন্তু মানুষ তৃণমূলের চরিত্র বুঝে গিয়েছে, বললেন দিলীপ।
তাঁর বক্তব্যের পাল্টা দিতে গিয়ে তৃণমূল সাংসদ অধ্যাপক সৌগত রায় বলেছেন, দিলীপ ঘোষের কথার কোনও উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। উনি একজন অশিক্ষিত ও অপসারিত সভাপতি। ওঁর কথায় কোনও গুরুত্ব নেই। আজ হাজার হাজার ছাত্র যোগ দেবেন মেয়ো রোডের সমাবেশে। বিজেপির কোনও দিনও ক্ষমতা হবে না এ ধরনের সমাবেশ করার। ওদের পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই প্রতিদিন সকালে উঠে একটা কথা বলে বাজার গরম করার চেষ্টা করেন দিলীপ ঘোষ। তাঁর এদিনের বক্তব্যকে শুধু প্রত্যাখ্যান করছি তাই নয়, তীব্র নিন্দা করছি।
এদিকে, গত একমাসে রাজ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনেকটাই বদলে গিয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে গ্রেফতার হয়ে জেল হেফাজতে রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গোরু পাচার কাণ্ডে গ্রেফতার হয়ে জেলে ঠাঁই হয়েছে তৃণমূলের দাপুটে বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলেরও। এর পরও কি বিজেপি আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে বাংলায় সেভাবে ছাপ ফেলতে পারবে?
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এই প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ, দিন কয়েক আগেই বনগাঁ ও আসানসোলে পুরসভার উপ নির্বাচনেও তৃণমূলের ঝুলিতে এসেছে বিপুল ভোট। দুই জায়গাতেই বড় ব্যবধানে জয় এসেছে জোড়াফুলের। এই পরিস্থিতিতে রাজারহাটে বৈদিক ভিলেজে আজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে বঙ্গ বিজেপির তিন দিনের চিন্তন শিবির। এই শিবিরে যোগ দিচ্ছেন দলের দিল্লির নেতারা। এই চিন্তন শিবির থেকেই পঞ্চায়েত ভোটের রোড ম্যাপ তৈরি হবে বলে বিজেপি সূত্রের খবর।
বিজেপি সূত্রে খবর, চিন্তন শিবিরে একাধিক বৈঠক রয়েছে। দলের জেলা সভাপতিদের আজ বেলা এগারোটা ডাকা হয়েছে। বারোটা নাগাদ কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক তথা দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসাল এসে পৌঁছবেন। কিছুদিন আগেই কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে সরিয়ে তাঁকে বঙ্গ বিজেপির পর্যবেক্ষক করা হয়েছে। দায়িত্ব পাওয়ার পর আজই তিনি কলকাতায় আসছেন। থাকছেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বি এল সন্তোষ। দলের বিভিন্ন সংগঠনের শীর্ষ পদাধিকারীদেরও হাজির থাকতে বলা হয়েছে।
বিজেপির বৈঠক ঘিরে বৈদিক ভিলেজে আঁটোসাঁটো করা হয়েছে নিরাপত্তা। যাঁরা বৈঠকে যোগ দেবেন, তাঁরা ছাড়া আর কারও ভিতরে ঢোকার অনুমতি নেই। দলের জেলা সভাপতিদের যেমন ডাকা হয়েছে, তেমনই এই চিন্তন শিবিরে যোগ দেবেন গেরুয়া শিবিরের জনপ্রতিনিধিরা। এলাকায় নিজেদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে কী করতে হবে, মূলত তা নিয়েই গাইড লাইন বেঁধে দেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে, বিজেপির এই শিবিরকে বৈভব শিবির বলে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের জন্য সুইট বুক করা হয়েছে। প্রশিক্ষণের জন্য ১৫০ কটেজ বুক করা হয়েছে।
বিজেপির এই চিন্তন শিবির নিয়ে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন। তাঁর তোপ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জনসমর্থন দেখে চিন্তার ভাঁজ বাড়ছে বিজেপির। তাই দুকোটি টাকারও বেশি খরচ করে চিন্তন শিবির করতে হচ্ছে ওদের। এসব করেও কিছুই করতে পারবে না। পুরভোটের উপনির্বাচনের ফল দেখেছে ওরা। পঞ্চায়েতেরও দেওয়াল লিখন হয়ে গিয়েছে।
পঞ্চায়েতে বিজেপির নাম থাকবে শুধুই দেওয়ালে। আর ভোট থাকবে মানুষের খেয়ালে। বৈদিক ভিলেজের পথে হাতিশালে ঝাঁটা, জুতো সহ পোস্টার পড়েছে তৃণমূলের।
শান্তনুর বক্তব্য নিয়ে দিলীপ ঘোষের জবাব, ওদের তো কোনও প্রশিক্ষণ নেই। তৃণমূলের তো শুধু সিন্ডিকেট আছে। চুরি-ডাকাতি করার আর কী প্রশিক্ষণ হবে। লুটে পুটে খেতে কোনও প্রশিক্ষণ শিবিরের দরকার হয় না।