ক্যালেন্ডার বলছে হাতে আর মাত্র কয়েকটা দিন। জোর কদমে চলছে দুর্গা পুজোর প্রস্তুতি। রীতিমতো নাওয়া খাওয়া ছেড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন প্রতিমা শিল্পীরা।
পুজোর আগে ডেঙ্গি আতঙ্ক তাড়াকরে বেড়াচ্ছে বনগাঁর পটুয়াপাড়াতেও ৷ রীতিমতো মশারি খাটিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন প্রতিমা শিল্পী৷ সেই ছবি ধরা পড়ল দেশের সময়-এর ক্যামেরায় ৷ দেখুন ভিডিও
উত্তর ২৪ পরগনা জুড়ে ডেঙ্গির প্রকোপ অব্যহত। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় দ্রুত ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে। নানা জায়গায় জমা জল, আবর্জনা নিয়ে এখনও সচেতন হচ্ছেন না অনেকেই।
বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল সূত্রের খবর, সেখানে প্রায় ৮০ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের জন্য হাসপাতালে ফিভার ক্লিনিক খোলা হয়েছে। অ্যালাইজা পরীক্ষায় কারও ডেঙ্গি পজ়িটিভ হলে তাঁকে আলাদা জায়গায় রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে। নিয়মিত নজরদারি চলছে।
বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপালশেঠ বলেন, এলাকায় কেউ ডেঙ্গি আক্রান্ত হলে সেই বাড়ির আশপাশের ৫০টি বাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মীরা সমীক্ষা করছেন। জ্বর হলেই ডেঙ্গি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসীন্দাদের বোঝাচ্ছেন, দিনে হোক বা রাতে মশারি টাঙিয়ে ঘুমোতে হবে। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জমা জল নষ্ট করে দিচ্ছেন। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে সরকারি ভাবে অ্যালাইজা পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। সামনেই শরদৎসব সে নজর রেখে পুরসভার পক্ষ থেকে বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে৷
যদিও অনেকের অভিযোগ, মহকুমার অন্য কোনও সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা হচ্ছে না। ফলে, বেসরকারি জায়গা থেকে ডেঙ্গি পরীক্ষা করাতে হচ্ছে অনেককেই।
গাইঘাটা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুজন গায়েন বলেন, “জুন পর্যন্ত ব্লকে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। তারপর থেকে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের অনুমান, আরও কিছু দিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে। কারণ, বর্ষা পুরোপুরি বিদায় নিতে দেরি হচ্ছে ।
গত সপ্তাহে জেলা সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী বাগদা ও বনগাঁ ব্লকে ডেঙ্গি নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করেন। উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিডিও-রা। ডেঙ্গি মোকাবিলার কাজ সঠিক ভাবে না হওয়ায় পঞ্চায়েতের কয়েকজন আধিকারিককে ধমকও দেন সভাধিপতি।
বৈঠক শেষে নারায়ণ জানান, “প্রতিটি সংসদ এলাকায় জমা জল পরিষ্কার করতে হবে। সেই কাজ দেখার জন্য প্রধানকে সকাল ৮ টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সশরীরে হাজির থাকতে হবে। ডেঙ্গি নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে আরও বেশি করে মিটিং-মিছিল করতে হবে।”
তবে এত কিছুর পরেও সচেতনতায় ফাঁক থেকে যাচ্ছে অনেক জায়গাতেই। জেলার বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় বহু জায়গাতেই জল, আবর্জনা জমে রয়েছে। বাড়ির ছাদে, ফুলগাছেও জল জমে রয়েছে অনেক জায়গায়। যততত্র গাড়ির টায়ার, মাটির হাঁড়ি, প্লাস্টিকের ব্যাগ, থার্মোকলের বাটি-থালা পড়ে আছে। তাতেও জল জমে আছে। প্রশাসনের আধিকারিকেরা বলছেন, এলাকা সাফ রাখার চেষ্টা চলছে। সাধারণ মানুষকেও সতর্ক হওয়ার আবেদন করেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দিনকয়েক আগেই দেগঙ্গার চাঁপাতলা পঞ্চায়েতের কুমরুলি গ্রামের শরিফুল ইসলাম নামে বছর চব্বিশের ডেঙ্গি আক্রান্ত এক যুবকের মৃত্যু হয়। জ্বরে মৃত্যু হয় এক শিশুরও। শুধু দেগঙ্গাই নয়, বারাসত মহকুমার আমডাঙা, বারাসতেও ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। এই পরিস্থিতিতে গত সোমবার ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে দেগঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতিতে আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী-সহ জেলা প্রশাসনের কর্তারা। স্থানীয় প্রশাসনকে নানা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দেগঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ আসাদুল সর্দার বলেন, “প্রতিটি সংসদের জনপ্রতিনিধিরা ভিআরপি (ভিলেজ রিসোর্স পার্সন) এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। কোনও জায়গায় যাতে জল জমে না থাকে, সে জন্য বাড়ির লোকেদের সচেতন করছেন। বাজারগুলিতে যাতে প্লাস্টিক না জমে থাকে, সে জন্য বাজার কমিটিরগুলির সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।”