দেশের সময়, হাবড়া: উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায় জ্বর- ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর। মৃত ছাত্রীর নাম দেবযানী দাস। বয়স মাত্র ১১ বছর ৮ মাস। এই ঘটনায় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার পাশাপাশি এলাকায় জঞ্জাল সাফাই ও পুরসভার ডেঙ্গি অভিযানে ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন মৃত মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা। ঘটনায় শোকের ছায়া নেমেছে এলাকায়।
হাবড়া গার্লস হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া এই ছাত্রী চলতি গত ১১ অগস্ট রাতে জ্বরে আক্রান্ত হয়। পরদিন সকালেই মেয়েটির পরিবার তাকে স্থানীয় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে রক্ত পরীক্ষার পর জানা যায়, সে ডেঙ্গি আক্রান্ত। এরপর ১৩ অগস্ট সকালে তাকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর চারদিন পর সে কিছুটা সুস্থ হয়েও উঠেছিল। এমনকী হাসপাতালের বেডে বসেই রিলস বানিয়েছিল।
কিন্তু তার পরেরদিন ফের অসুস্থ হয়ে পড়ে দেবযানী। জ্বর বেড়ে যায়, বমিও হয়। পরিবারের তরফে চিকিৎসককে জানানো হলে হাবড়া হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ছাত্রীটিকে দু’টি ইঞ্জেকশন দেয়। অভিযোগ, এরপরেই কিশোরীর অবস্থা মারাত্মকভাবে খারাপ হয়ে যায়। রোগীর পরিবারকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে, দেবযানীকে কলকাতায় নিয়ে যেতে। সে মতোই গত ১৮ অগস্ট কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথে শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে বারাসত হাসপাতালে ঘণ্টাদুয়েকের জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।
কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত বেড না মেলায় আবার কলকাতার হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়। সেদিন রাতেই আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা পরীক্ষার পর জানান একেবারেই ঠিকঠাক চিকিৎসা হয়নি। অবস্থা খুবই খারাপ। এরপর সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু হলেও আর শেষরক্ষা হয়নি। দু’দিন পর গত রবিবার রাতে মৃত্যু হয় দেবযানীর। এরপরই পরিবারের তরফে হাবড়া হাসপাতালের নিম্নমানের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রশ্ন তোলা হয়।
পাশাপাশি পুরসভাও এলাকায় ডেঙ্গি নিয়ে সাফাই অভিযান, ব্লিচিং পাউডার ছেটানো বা মশা মারার তেল স্প্রে করার মত কিছুই করেনি বলে অভিযোগ। এসব কিছুই দেবযানীর মৃত্যুর পরে হয়েছে বলে দাবি তার পরিবারের। মৃত কিশোরীর বাবা বিশ্বজিৎ দাস জানান, এলাকায় অনেক পরিবারেরই কেউ না কেউ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রয়েছে। তার মেয়ের মৃত্যুর পর পুরসভা থেকে নানারকম পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এগুলো যদি আগে করা হতো, তাহলে মেয়েটা অকালে চলে যেত না।
পুরপ্রধান নারায়ণচন্দ্র সাহা বলেন, “ওই এলাকা-সহ সর্বত্র মশা মারার তেল স্প্রে করা হচ্ছে নিয়মিত। চুন-ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছে। ঝোপ-জঙ্গল সাফ করা হচ্ছে। বাড়ির মধ্যে ঝোপ-জঙ্গল সাফ করতে অনেক সময়ে পুরকর্মীদের বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তা সত্বেও আমরা বাড়ির মধ্যে ঝোপ-জঙ্গল থাকলে তা সবই সাফ করে দেওয়া হচ্ছে।’’ তিনি আরও জানান, দেবযানীর মৃত্যুর পরে এলাকায় মেডিক্যাল ক্যাম্প হয়েছিল। রক্ত পরীক্ষা করা হয়। দু’জনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, ডেঙ্গি প্রতিরোধে পুরপ্রধান ও কাউন্সিলররা উদাসীন।