দেশের সময় কলকাতা : সাত জেলায় ডেঙ্গি পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। তালিকায় রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার নাম। রবিবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করেন স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম ও স্বরাষ্ট্রসচিব পিবি গোপালিকা। রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়েই এদিনের সাংবাদিক সম্মেলন ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এদিন ডেঙ্গি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। ছিলেন সমস্ত জেলাশাসক, পঞ্চায়েত দফতর, স্বাস্থ্য দফতর, গ্রাম পঞ্চায়েত, পুরসভার প্রতিনিধিরা। স্বরাষ্ট্রসচিব মেনে নেন রাজ্যে ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এখনও অবধি সরকারি হাসপাতালে ১৫০০ রোগী ডেঙ্গি নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। ২৫টি একটু গুরুতর। তবে হাসপাতালে যেহেতু, নজরে আছেন। তবে এখনও অবধি ডেঙ্গিতে মৃত কত, সেই সংখ্যাটা বলা মুশকিল বলেই জানান স্বাস্থ্যসচিব।
জুন মাস থেকে বাংলায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। জুন মাসে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা যেখানে ছিল ৬০০ কোটায়, অগস্ট মাসেই সেই সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। দিনে দিনে ডেঙ্গি পরিস্থিতি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। রাজ্যের ৩০টিরও বেশি অঞ্চল ডেঙ্গি স্পর্শকাতর।
গত বৃহস্পতিবারই ডেঙ্গি (Dengue) পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট জমা পড়েছিল নবান্নে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই এদিনের বৈঠক হয় নবান্নের সভাঘরে। সূত্রের খবর, শুধু ডেঙ্গি নয়, এই বৈঠকে রাজ্যের ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানতে চান স্বরাষ্ট্রসচিব।
জানা গেছে, এদিনের বৈঠকে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্রসচিব। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, দুই ২৪ পরগনা, মালদহ, মুর্শিদাবাদ সহ কয়েকটি জেলার একাধিক অঞ্চলে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ছে। সেইসব জায়গায় সংক্রমণ কমাতে বাসিন্দাদের সতর্ক করতে হবে। কোথাও জল জমে থাকলে, তা অবিলম্বে পরিষ্কার করার কথাও বলেন স্বরাষ্ট্রসচিব।
ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া মোকাবিলা করতে প্রত্যেকটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্রসচিব।
জেলাশাসকদেরই বিষয়টি দেখবে হবে বলে জানান তিনি। শুধু গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা নয় পুরসভা এলাকাতেও ওয়ার্ড কমিটিগুলিকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা বলেন স্বরাষ্ট্রসচিব।
সূত্রের খবর, এলাকার কোথাও জল জমে থাকলে, সেই জায়গা দ্রুত চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকে। প্রয়োজনের ড্রোনের ব্যবহার করার কথাও বলা হয়েছে এদিনের বৈঠকে। বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর ড্রোন দিয়ে এলাকায় সার্ভে চালাতে হবে। ফাঁকা জমি পড়ে থাকলে, সেখানে নিয়মিত পরিষ্কার রাখার দায়িত্বও নিতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকেই। পুকুর জলাশয় পরিষ্কার রাখার কথাও বলা হয়েছে এদিনের বৈঠকে। গোটা পরিস্থিতি নিয়ে নবান্নকে রিপোর্ট দিতে বলেছেন স্বরাষ্ট্রসচিব।
স্বরাষ্ট্রসচিব পিবি গোপালিকা জানান, বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর ডেঙ্গি কেস আসছে। তাই সীমান্তে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২০৫টি জায়গায় নমুনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে। ৯ লক্ষের মতো নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। গোপালিকা জানান, কোনওভাবেই জল জমতে দেওয়া যাবে না। যেসমস্ত টিম পরিদর্শনে যাচ্ছে, তাদের সহযোগিতা করার কথা বলেন তিনি। জ্বর হলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডেঙ্গি পরীক্ষা করানোর কথাও বলেন।
শুধু তাই নয়, নবান্ন সূত্রে আরও খবর, এদিনের বৈঠকে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল ও হাসপাতালের সুপারদের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব। তিনি বলেছেন, হাসপাতালগুলিতে রক্তের সঙ্কট যাতে না হয় সেটা নজর রাখতে হবে। কোনও রকম রেফার চলবে না। হাসপাতালগুলিতে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া আক্রান্তদের চিকিৎসা করানোর মতো প্রয়োজনীয় কাঠামো আছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে। না থাকলে, তা অবিলম্বে ব্যবস্থা করতে হবে।
ইতিমধ্যেই সমস্ত থানা থেকে শুরু করে সরকারি অফিসগুলিকেও সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। বাড়িতে থাকা ডেঙ্গি রোগীকে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনও ওষুধ দিতে না করা হয়েছে। বেশি করে জল, ফলের রস খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কোমর্বিডিটি থাকলে একদম সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং হাসপাতালে ভর্তি হন, পরামর্শ নবান্নের।