দেশের সময় কলকাতা :বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে স্থলভাগের দিকে এগোচ্ছে গভীর নিম্নচাপ। শেষ ছ’ঘণ্টায় তার গতিবেগ রয়েছে ১৭ কিলোমিটার। শনিবার সন্ধ্যায় শক্তি বৃদ্ধি করে তা পরিণত হতে চলেছে ঘূ্র্ণিঝড়ে। তখন তার নাম হবে ‘রেমাল’। রবিবার সকালে আরও শক্তি বৃদ্ধি করে ‘রেমাল’ পরিণত হতে পারে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। তার প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে ঝড়বৃষ্টি হবে। কলকাতা-সহ ছয় জেলায় জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। সেখানে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। সঙ্গে বইতে পারে ঝড়।
শনিবার দুপুর থেকেই অবশ্য দিঘায় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। সমুদ্র সকাল থেকেই ছিল উত্তাল। উপকূলবর্তী বাকি জেলাতেও শনিবার বিক্ষিপ্তভাবে ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। শনিবার দুপুরের পর কলকাতার আকাশও মেঘলা। নামতে পারে বৃষ্টি।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে উত্তর দিকে এগোচ্ছে গভীর নিম্নচাপ। শেষ ছ’ঘণ্টায় তার গতিবেগ ছিল ১৭ কিলোমিটার। এখন সেই গভীর নিম্নচাপ রয়েছে বাংলাদেশের খেপুপাড়ার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে ৪২০ কিলোমিটার দূরে। পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ থেকে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্বে ওই একই দূরত্বে অবস্থান করছে গভীর নিম্নচাপ। ক্যানিংয়ের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্বে ৪৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে সেটি।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের উপ-অধিকর্তা সোমনাথ দত্ত জানিয়েছেন, সব ঠিকঠাক চললে রবিবার গভীর রাতে সাগর দ্বীপ এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মধ্যে দিয়ে স্থলভাগে আছড়ে পড়বে রেমাল। তখন তার গতি থাকবে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। সাময়িক ভাবে হাওয়ার গতি বৃদ্ধি পেয়ে ঘণ্টায় হতে পারে ১৩৫ কিলোমিটার।
এই ‘রেমাল’-এর প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। রবিবার কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরে জারি রয়েছে লাল সতর্কতা। কলকাতা-সহ এই ছ’জেলাতেই অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ২০ সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টি হতে পারে সেখানে।
এদের মধ্যে দুই ২৪ পরগনায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড় বইতে পারে। সাময়িক ভাবে হাওয়ার গতি বৃদ্ধি পেয়ে ঘণ্টায় হতে পারে ১৩০ কিলোমিটার। কলকাতা-সহ বাকি চার জেলায় ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার গতিতে বইতে পারে ঝড়। সাময়িক ভাবে হাওয়ার গতি বৃদ্ধি পেয়ে ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার গতিতে ঝড় হতে পারে। পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, নদিয়ায় জারি রয়েছে কমলা সতর্কতা। সেখানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সঙ্গে ঘণ্টায় ৩৪ থেকে ৪৫ কিলোমিটার গতিতে ঝড় বইতে পারে। দক্ষিণের বাকি জেলায় হতে পারে ভারী বৃষ্টি। সেখানে জারি হলুদ সতর্কতা।
এদিকে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোতায়েন করা হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে (এনডিআরএফ)। দক্ষিণবঙ্গে এনডিআরএফ–এর ১২টি দল নিযুক্ত করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন এলাকায় থাকবে। ঝড় এবং তৎপরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে। এনডিআরএফ–এর যে ১২টি দলকে দক্ষিণবঙ্গে মোতায়েন করা হয়েছে, সেগুলি থাকবে কলকাতা
বিমানবন্দর এলাকা, হাসনাবাদ, বসিরহাট, গোসাবা, কাকদ্বীপ, সাগরদ্বীপ, দিঘার রামনগর, কাঁথি, দাঁতন, নারায়ণগড় এবং আরামবাগে। দিঘায় দু’টি দল থাকবে বলে জানা গিয়েছে।
হাওয়া অফিস বলছে, এই ঘূর্ণিঝড়ের উৎস চেন্নাই উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ৭২০ কিলোমিটার দূরে ভারত মহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগরের সংযোগস্থল। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ভারত মহাসাগরের একটা বড় অংশের তাপমাত্রা বেশি বেশি থাকার ফলেই এই ঝড়ের জন্ম।
কাকদ্বীপের হারুউড পয়েন্ট এলাকায় মুড়িগঙ্গা নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের সতর্ক করতে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন সুন্দরবন পুলিশের কর্তারা। কাকদ্বীপের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে গ্রামের পর গ্রামে গিয়ে মানুষজনকে স্থানীয় সাইক্লোন সেন্টার, স্কুল ভবন এবং উঁচু জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছেন।
সোমবার কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা, দুই বর্ধমান, বীরভূমে জারি কমলা সতর্কতা। সেখানে হতে পারে ভারী বৃষ্টি। সঙ্গে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার গতিতে বইতে পারে ঝড়। সাময়িক ভাবে হাওয়ার গতি বৃদ্ধি পেয়ে ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার গতিতে ঝড় হতে পারে। সোমবার নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদে লাল সতর্কতা জারি করেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। সেখানে ভারী থেকে অতি ভারী (সাত থেকে ২০ সেন্টিমিটার) বৃষ্টি হতে পারে। সঙ্গে বইতে পারে ঝড়, যার গতি থাকতে পারে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার। সাময়িক ভাবে হাওয়ার গতি বৃদ্ধি পেয়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে ঝড় হতে পারে। সমুদ্রের গতি থাকতে পারে উত্তাল। সে কারণে সোমবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে বারণ করা হয়েছে।