এগিয়ে আসছে দামাল ‘রেমাল’। শক্তি বাড়িয়ে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত রেমাল। রবিবার মধ্যরাতে মংলার দক্ষিণ-পশ্চিমে ল্যান্ডফল। সাগর দ্বীপ ও খেপুপাড়ার মধ্যে আছড়ে পড়বে রেমাল। এমনটাই পূর্বাভাস আবহাওয়া দফতরের। স্থলভাগে ঢোকার আগে আরও শক্তি বাড়ানোর পূর্বাভাস। এই মুহূর্তে সাগর দ্বীপ থেকে আর ১৬০ কিমি দূরে রয়েছে ঘূর্ণিঝড়। ক্যানিং থেকে দূরত্ব ১৯০ কিলোমিটার।
দেশের সময় কলকাতা খাতায়-কলমে, এখনও সাগরদ্বীপ থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে তার অবস্থান। কিন্তু রবিবার সকাল থেকেই কলকাতায় কার্যত মাল্টিপ্লেক্সে ছবি শুরু হওয়ার আগের প্রিভিউ শো শুরু করে দিল ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢাকা, দমকা দমকা ঝোড়ো হাওয়া, সঙ্গে বৃষ্টি। যত বেলা গড়াবে, তত তার দাপট বাড়বে গাঙ্গেয় দক্ষিণবঙ্গে।
ঘূর্ণিঝড় রেমাল এখনও স্থলভাগে আছড়ে পড়েনি। তার আগেই রবিবার (২৬ মে) সকালে বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার মোংলা নদীতে ডুবে গেল একটি ট্রলার। ট্রলারটিতে অন্তত ৮০ জন যাত্রী ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। যত যাত্রী থাকা উচিত, তার প্রায় চারগুন বেশি যাত্রী নিয়ে আসার কারেই ট্রলারটি ডুবে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
একেবারে তীরে ভেড়ার মুহূর্তেই ট্রলারটিডুবে যায়। তাই, বেশ কয়েকজন যাত্রী সাঁতরে পাড়ে উঠে আসেন। তবে, অনেকেই এখনও নিখোঁজ। তাদের উদ্ধারে নৌ পুলিশ, দমকল ও উপকূলরক্ষী বাহিনীর ডুবুরিরা নদীতে তল্লাশি চালাচ্ছেন। এই ঘটনায় বহু মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এগোচ্ছে রেমাল
ক্রমেই এগিয়ে আসছে রেমাল। সাগর থেকে ১৬০ কিমি দূরে এই মুহূর্তে। ক্যানিং থেকে দূরত্ব ১৯০ কিলোমিটার।
২-৩ ঘণ্টার মধ্যেই প্রবল বৃৃষ্টি
আগামী ২-৩ ঘণ্টায় উপকূলে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা। কলকাতা, হাওড়ায় ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস। পূর্ব মেদিনীপুরেও ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস। ঘণ্টায় ২০-৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। আপাতত ৪০-৫০ কিমি/ঘণ্টা বেগে হাওয়া বইতে পারে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা সোমনাথ দত্ত জানিয়ে দিলেন, নিজের কেন্দ্র বা ‘চোখ’-এর চারপাশে ৯৫ থেকে ১০৫ কিলোমিটার বেগে ঘুরতে ঘুরতে ক্রমশ উত্তরদিকে বাংলাদেশ উপকূল লক্ষ্য করে এগোচ্ছে ‘রেমাল’।
বাংলাদেশের মোংলা বন্দরের কাছাকাছি আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড়
বাংলাদেশের মংলাতে ল্যান্ডফল ঘূর্ণিঝড় রেমালের। ভারতের মৌসম ভবন জানিয়ে দিল বাংলাদেশের মোংলা বন্দরের কাছাকাছি রবিবার মাঝরাতে আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড়। মোংলা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এর ল্যান্ডফলের প্রবল সম্ভাবনা। সেই সময় তার গতিবেগ থাকবে ১১০ থেকে ১২০ সর্বোচ্চ ১৩৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়।
ট্রেনে দেওয়া হচ্ছে তালা
রেমালের প্রভাবে ঝড়ের গতি এতটাই হতে পারে যে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন বেলাইন হতে পারে। ট্রেন গড়িয়ে গিয়ে অন্য ট্রেনে ধাক্কা মারতে পারে। তাই আগাম সতর্কতা অবলম্বন করছে দক্ষিণ পূর্ব রেল। শালিমার রেল ইয়ার্ডে ট্রেনের চাকায় বাঁধা হল চেন-তালা।রেলের ট্র্যাকে দেওয়া হল স্টপার।
বাতিল গুচ্ছ গুচ্ছ ট্রেন
ইতিমধ্যেই হাওড়া, শিয়ালদহ শাখায় বাতিল হয়েছে গুচ্ছ গুচ্ছ লোকাল ট্রেন। শনিবারই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে পূর্ব রেল। এবার একাধিক ট্রেন বাতিল হয়ে গেল দক্ষিণ-পূর্ব রেলেও। দিঘা, পুরীগামী অনেক ট্রেন বাতিলের ঘোষণা করা হয়েছে দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তি।
হাওড়ায় বেঁধে রাখা হচ্ছে লঞ্চ
একদিন আগেই রাজ্য পরিবহণ দফতরের নির্দেশ দিয়েছে। হাওড়া কলকাতার মধ্যে ফেরি সার্ভিস বন্ধ রাখা হচ্ছে। হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান বাপি মান্না জানিয়েছেন, এই দু’দিন কোনও লঞ্চ চলবে না। লঞ্চগুলিকে আর্মেনিয়ান ঘাট এবং হাওড়া ঘাটে মোটা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। এমার্জেন্সির জন্য লঞ্চের কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
রেমালের প্রভাবে পাহাড়ি নদীতে হড়পা বানের আশঙ্কা, বাগডোগরা থেকে কলকাতাগামী সমস্ত বিমান চলাচল স্থগিত
আছড়ে পড়বে ঘুর্ণিদানব রেমাল। তার জেরেই বন্ধ কলকাতা বিমান বন্দর। গোটা দেশ জুড়েই বাতিল বহু বিমান চলাচল। বাগডোগরা থেকেও কলকাতা সমস্ত বিমান বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে রেমালের প্রভাবে উত্তরেও বিভিন্ন জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্বাবনা আছে। পাহাড়ের নদীগুলি ফুঁসে উঠতে পারে। হড়পা বান আসতে পারে এই আশংকায় আবহাওয়া দপ্তর থেকে দার্জিলিং এবং কালিম্পং ছাড়াও উত্তরের বিভিন্ন জেলাগুলোকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
নয়াদিল্লির মৌসম ভবন সকাল সাড়ে এগারোটার বুলেটিনে জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের ওপরে প্রায় ৭ কিলোমিটার গতিবেগে ক্রমশ এগোচ্ছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। এখনও শক্তি বাড়িয়ে চলেছে সে। গাস্ট বা সর্বোচ্চ বায়ুপ্রবাহের বেগ ১১০ কিলোমিটার। আজ মধ্যরাতের মধ্যেই বাংলাদেশের খেপুপাড়া ও পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মাঝামাঝি অংশ দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করতে চলেছে সে। তবে মৌসম ভবন জানিয়ে দিয়েছে, সম্ভাব্য ‘ল্যান্ডফল’ হতে চলেছে বাংলাদেশের মংলার দক্ষিণ-পশ্চিমে। অর্থাৎ, এ’যাত্রা রেমালের সরাসরি রোষ থেকে রক্ষে পেয়ে যাবে পশ্চিমবঙ্গ।
কিন্তু সরাসরি ‘ল্যান্ডফল’ না হলেও, রেমালের রুদ্রমূর্তির দাপটে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ওড়িশার বিস্তীর্ণ অংশে আজ দুপুর থেকেই ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন। উপকূলবর্তী পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ও উত্তর চব্বিশ পরগণা, হাওড়া ও কলকাতার বিভিন্ন অংশে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির তোড় আজ রবিবার দুপুর থেকে কাল সোমবার বেলা অবধি থাকবে। বেলা যত গড়াবে, তত দাপট বাড়বে ঝড়ের।
মধ্যরাতে কলকাতায় ঝড়ের দাপট সর্বোচ্চ হতে চলেছে। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া ক্রমশ বাড়তে থাকবে। দুপুরে ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার বেগে হাওয়ার দাপট থাকবে, রাতে সেটা বাড়তে বাড়তে সর্বোচ্চ (গাস্ট) ১৩৫ কিলোমিটার বেগে পৌঁছবে মধ্যরাতে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করা হয়েছে। স্থল-পরিবহনেও সতর্কতা বজায় রাখতে পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
আজ রবিবার দুপুর থেকেই কলকাতা, হাওড়া, হুগলি ও পূর্ব মেদিনীপুরে ঝোড়ো হাওয়ার দাপট শুরু হবার কথা জানিয়ে দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। পূর্ব মেদিনীপুরে রবিবার রাতে হাওয়ার বেগ পৌঁছবে ৭০-৮০ কিলোমিটার বেগে, সর্বোচ্চ যা হবে ঘন্টায় ৯০ কিলোমিটার।
পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে অন্তত এক থেকে তিন মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে। ইতিমধ্যেই যা নিয়ে সতর্ক হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। উপকূল অঞ্চলে শুরু হয়েছে নজরদারি ও সতর্কবার্তা।
সাধারণত স্থলভাগে প্রবেশ করলেই দ্রুত শক্তি হারাতে শুরু করে ঘূর্ণিঝড়। রেমালের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না। মৌসম ভবন জানিয়েছে, সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যেই স্থলভাগে প্রবেশ করে ঘূর্ণিঝড়টি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে।
বাতাসের বেগ কমে আসবে ৫০-৬০ কিলোমিটারে, সর্বোচ্চ হতে পারে ৭০ কিলোমিটার। মঙ্গলবার সকালে সেটি সাধারণ নিম্নচাপে নেমে আসবে। তবে বৃষ্টি চলবে মঙ্গলবার অবধি। রেমালের প্রভাব থাকবে উত্তরপূর্ব ভারতের একাধিক রাজ্যে। মিজোরাম, অসম, মেঘালয় ও মণিপুরের বিক্ষিপ্ত অংশে ভারি বৃষ্টি হতে পারে।