Cyclone Remal রেমালে বাংলাদেশে মৃত ১০ , পশ্চিমবঙ্গে ভেঙেছে ১৫ হাজার বাড়ি , বিপর্যস্ত দু’বাংলা, দেখুন ভিডিও

0
142

জাকির হোসেন, ঢাকা, হিয়া রায় কলকাতা: ঘূর্ণিঝড় রেমালের অভিঘাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় ছ’টি জেলায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৩৫ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত। এই ঝড়ে সে দেশের ১৯টি জেলার ৩৭ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকারি সূত্রে জানা গেছে ।

ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এর তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হওয়া বাংলাদেশের ভোলা জেলার চরাঞ্চলের চিত্র

সোমবার সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, রেমাল ঘূর্ণিঝড়ের কারণে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায় প্রায় ১৫ হাজার বাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ২৪টি ব্লক এবং ৭৯টি পুরসভার ওয়ার্ড এলাকায় তাণ্ডব চলেছে রেমালের।

দেখুন ভিডিও

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি বাংলাদেশে; বলা হচ্ছে সিডরকে ছাড়িয়ে গেছে রেমাল

বাংলাদেশে রেমালের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারে উপকূলের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল বিশেষত সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, ভোলা, খুলনা সহ বিভিন্ন জেলা প্লাবিত হয়েছে৷ এখন অবধি ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে গাছ উপড়ে গেছে, ভেঙে ও ভেসে গেছে ঘরবাড়ি৷ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে ৩০ লাখের বেশি মানুষ৷ ১০ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন৷ বাংলাদেশের দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রী মহিব্বুর রহমান জানান, “আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে৷ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষদের সাহায্য করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ এ কারণে মন্ত্রকের সব কর্মী ও আধিকারিকের ছুটি বাতিল করে তাদের সার্বক্ষণিক কাজে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷” আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ” তাণ্ডব চালিয়ে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করে গেছে ‘রেমাল’৷ ঘূর্ণিঝড়টির ব্যাস ছিলো প্রায় ৪০০ কিলোমিটার৷ এটা অনেক বিস্তৃত ছিল বিধায় স্থলভাগ অতিক্রম করতে বেশ সময় নিয়েছে৷

সোমবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ বৃহত্তর ফরিদপুর-মাদারীপুর এলাকার জেলাগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়টি বয়ে গেছে৷ রেমালের কারণে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ দমকা হাওয়াসহ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হচ্ছে৷ বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক বিজয় কুমার দে জানান, “মঙ্গলবার সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে হওয়া অতিবৃষ্টি কমতে থাকবে এবং এরপর থেকে আবহাওয়া ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করবে৷” এদিকে বাংলাদেশের যে চর এলাকাগুলোতে সুরক্ষাবাঁধ নেই, আগামী কয়েকদিনে এই এলাকাগুলো দিনে দুইবার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হবার আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ বহু এলাকা যাতে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো নয়, প্রত্যন্ত এসব অঞ্চলের খবর সংগ্রহ করতেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে৷

এককথায়, অঞ্চলগুলো প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে৷ উপকূল অঞ্চলগুলোতে কাজ করা বিভিন্ন এনজিও, সরকারের দুর্যোগ বিভাগের আধিকারিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রেমালের তাণ্ডবে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি ইতিমধ্যে সাধিত হয়েছে, তা ২০০৭ সালের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ এর ফলে হওয়া ক্ষয়ক্ষতিকেও ছাড়িয়ে গেছে৷ উপকূলে কাজ করা কোস্ট ফাউন্ডেশনের চর মোজাম্মেলের শাখা ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ কামাল জানান, “যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে, তা গত ২৫ বছরে হওয়া সব দুর্যোগকে ছাড়িয়ে গেছে৷”

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল তার তাণ্ডব দিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান ভঙ্গুর অর্থনীতিকে যেভাবে আরো নড়বড়ে করে দিয়ে যাচ্ছে, তার রেশ কাটতে বহুদিন লেগে যাবে৷

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি রোববার রাত আটটার দিকে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে৷ পরপরই উপকূল থেকে শুরু করে সারাদেশে বৃষ্টি শুরু হয়৷ রোববার রাত আটটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রামের মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে৷ এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়৷ তখন এর গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় প্রায় ১১০ কিলোমিটার৷

প্রসঙ্গত, ঘূর্ণিঝড় রেমাল রবিবার রাত ৮টা নাগাদ দিকে মংলা বন্দরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছিল। ওই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন জেলায় প্রবল ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। রাত দেড়টা থেকে ২টো মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১১১ কিলোমিটার গতিতে ঝড় বয়ে গিয়েছে পটুয়াখালির খেপুপাড়ায়। ঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গিয়েছে বহু মাছের ভেড়ি। নোনা জল ঢুকে বহু কৃষিজমি নষ্ট হয়েছে বলেও প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি।

পশ্চিমবঙ্গের  রাস্তায় হাঁটুজল, উপড়ে গিয়েছে গাছ, রেমালের প্রভাবে বেসামাল কলকাতা!
রবিবার সকাল থেকেই আকাশে ছিল কালো মেঘ। দফায় দফায় মুষলধারে বৃষ্টি। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দাপট বাড়তে থাকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের। রবিবার রাত থেকে সমুদ্র আরও উত্তাল হয়ে যায়। প্রবল বৃষ্টি, ঝোড়ো হাওয়াকে সঙ্গী করে আছড়ে পড়েছিল রেমাল I
রেমাল নামটি ওমানের দেওয়া। আরবি ভাষায় এই শব্দের অর্থ ‘বালি’। রেমালের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার। সাময়িক সর্বোচ্চ বেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার।

রেমাল প্রথম নয়। এর আগেও বার বার ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ। ২০০৯ সালের ২৫ মে ১২০ কিলোমিটার বেগে রাজ্যে আছড়ে পড়েছিল আয়লা।
আয়লার প্রায় দশ বছর পর আবার ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হয় রাজ্য। ২০১৯ সালের ৩ মে ঘণ্টায় ১৭৫ থেকে ১৮০ কিলোমিটার বেগে পশ্চিমবঙ্গের বুকে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল।

২০২০ সালের ২০ মে ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটার বেগে পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় আমপান। এর প্রভাবে প্রবল ক্ষয়ক্ষতি হয় উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে।
আমপান-রোষের এক বছরের মাথায় ২০২১ সালের ২৬ মে ঘণ্টায় ১৫৫ কিলোমিটার বেগে পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। ইয়াস বিদায়ের প্রায় তিন বছর পর রেমাল আবার তাণ্ডব চালাল বাংলায়।
সোমবার সকালে ঝড়ের মাত্রা কমলেও কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে সোমবার সকাল থেকে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি শুরু হয় । রাস্তাঘাটে জমে যায় হাঁটুজল।

কলকাতা শহর জুড়ে নানা জায়গায় গাছ পড়েছে।
কোমরজলে ভেসেছে পার্ক স্ট্রিট স্টেশন! নতুন দৃশ্য দেখা দিল কলকাতা মেট্রোয় I রবিবার ঘূর্ণিঝড় রেমালের জেরে রাতভর বৃষ্টির ফলে সোমবার সকাল থেকেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে কলকাতার মেট্রো পরিষেবা। পার্ক স্ট্রিট এবং এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশনের মাঝের ট্র্যাকে বৃষ্টির কারণে জল ঢুকে পড়ে। স্টেশনের একাংশ-সহ পার্ক স্ট্রিট স্টেশন জলের তলায় চলে যায়। তাই এদিন সোমবার সাতসকাল থেকেই ব্যাহত হয় মেট্রো পরিষেবা।
জল জমে যাওয়ার কারণে গিরিশ পার্ক থেকে মহানায়ক উত্তমকুমার (টালিগঞ্জ) পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ ছিল। আপ এবং ডাউন কোনও দিকেই মেট্রো চলে ওই অংশে এদিন। সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে মেট্রো পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে বলে মেট্রো সূত্রে খবর। ফলে বিপদে পড়েন নিত্যযাত্রীরা।

এদিকে কলকাতার বিভিন্ন এলাকা-সহ পার্ক স্ট্রিট সংলগ্ন রাস্তাঘাটেও সোমবার সকাল থেকে জল জমে যায় । রাস্তাঘাটে বাস, ট্যাক্সির সংখ্যাও খুবই কম ছিল এদিন। তাই অনেকেই মেট্রোর উপর ভরসা করেছিলেন। কিন্তু ট্রেন না চলায় দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন তাঁরা। হাতেগোনা কয়েকটি বাস চলায় সেগুলিতে ভিড়ও প্রচুর। ট্যাক্সির দেখা মেলেনি সেভাবে। অ্যাপ ক্যাবগুলি ভাড়াও ছিল আকাশছোঁয়া।

রবিবারের ঝড়ে উপড়ে পড়া গাছ গুলি সরানোর ব্যবস্থা করেন রাজভবনের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের কর্মীরা । কলকাতার কোথাও কোথাও রবিবার মধ্যরাত থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

ব্যাহত হয়েছে ট্রেন এবং মেট্রো পরিষেবা। রবিবার দুপুর ১২ টা থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে বিমান পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছিল। সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ প্রায় ২১ ঘণ্টা পর আবার বিমান ওঠানামার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
ঘূর্ণিঝড়ের জেরে কলকাতায় ঘণ্টায় ৭৪ কিলোমিটার বেগে বইল ঝোড়ো হাওয়া। আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায় নবান্নে বিশেষ কন্ট্রোল রুম খুলেছিল রাজ্য প্রশাসন।

ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় কী কী প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিকদের কাছে রবিবার সন্ধ্যায় বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

এখন বড় প্রশ্ন যে, এবারও ক্ষতিপূরণ নিয়ে কি ফের কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েন শুরু হবে? দিল্লি-কলকাতা রাজনৈতিক সম্পর্কের বর্তমান যে মতিগতি তাতে এরই মধ্যে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন নবান্নের একাংশ আমলা।  
এই সাত সতেরো প্রশ্নের মধ্যেই মঙ্গলবার ঘটনাচক্রে কলকাতায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রসঙ্গত আমফানের পরদিনই পশ্চিমবঙ্গে ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী কাল তাঁর বাংলা সফর পুরোপুরি রাজনৈতিক। তবে অনেকে মনে করছেন, মোদীর উদ্দেশে ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলতেই পারে শাসক দল। 

আমফানের পর ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। আমফানের ক্ষতিপূরণ বাবদ কেন্দ্রের কাছে যে টাকা দাবি করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার তার সিকিভাগও দেয়নি কেন্দ্র। ওই ঘূর্ণিঝড়ের পর পরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ভিডিয়ো বার্তায় কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর তিনি জানিয়েছিলেন, “আমফানে ৩৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য চাওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র এখনও পর্যন্ত ১ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে।” 

এ ব্যাপারে কেন্দ্রের পাল্টা যুক্তিও ছিল। আমফানের কারণে কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা সরেজমিনে দেখতে বাংলায় টিম পাঠিয়েছিল কেন্দ্র। তার পর দিল্লির বক্তব্য ছিল, রাজ্য যে টাকা দাবি করেছে, তাতে অসঙ্গতি রয়েছে। সেই কারণেই টাকার অঙ্ক চূড়ান্ত করার আগে রাজ্য সরকারের কাছে কিছু ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তার সদুত্তর পেলে তবেই চূড়ান্ত অর্থ অনুমোদন করা হবে। 

এবার কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার অবশ্য এখনও কোনও সমীক্ষা হয়নি। কারণ, দুর্যোগ পুরোপুরি কাটেনি। বিপর্যয় মোকাবিলার কাজ চলছে। কিন্তু কাল পরশুর মধ্যে তা শেষ হলেই অনুদানের প্রশ্নটি অবধারিত ভাবে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। 

নবান্নের এক কর্তার কথায়, তাৎক্ষণিক কিছু ক্ষতিপূরণ দিল্লি দিতে পারে ঠিকই। তবে বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিল থেকে টাকা পেতে এবার দেরি হতে পারে। কারণ, রাজ্যের ক্ষতিপূরণের দাবি সঙ্গত কিনা তা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রের অফিসাররা জিও ট্যাগিংয়ের সাহায্য নেয়। তার মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করে যে কত বাড়ি, স্কুলের ক্ষতি হয়েছে, কত বিদ্যুতের খুঁটি উপড়েছে।

এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এদিন বলেন, “কেন্দ্র ক্ষতিপূরণ নিশ্চয়ই দেবে। কিন্তু তৃণমূলকে লুঠ করার জন্য কোনও টাকা দেবে না।”

আবহাওয়া দফতরের তরফে রবিবার বিকেলের পূর্বাভাস ছিল, উত্তর বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে উত্তর দিকে এগিয়ে যাবে রেমাল। রেমালের অবস্থান তখন পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ছিল। ক্যানিংয়ের ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্বে ছিল রেমাল। বাংলাদেশের মোংলা থেকে ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান ছিল ঘূর্ণিঝড়ের।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের উপ অধিকর্তা সোমনাথ দত্ত জানিয়েছিলেন, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় রবিবার রাতে ঝড়ের গতিবেগ পৌঁছবে ১০০-১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত। অন্য দিকে, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ঝড়ের গতি থাকবে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। তবে তা বেড়ে ৯০ কিলেমিটারও হতে পারে বলে সতর্ক করেছিল হাওয়া অফিস।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উত্তাল হয়ে পড়ে সমুদ্র। ঢেউয়ের উচ্চতাও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়। সেই কারণে মৎস্যজীবীদের সোমবার পর্যন্ত সমুদ্রে যেতে বারণ করেছে আলিপুর হাওয়া অফিস।

রবিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ উত্তর বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে উত্তর দিকে এগিয়ে যায় রেমাল। রেমাল তখন পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে, ক্যানিংয়ের ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্বে, বাংলাদেশের মোংলা থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে ছিল ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান।

আবহাওয়া দফতরের রবিবার রাত সওয়া ৮টার পূর্বাভাস ছিল, উত্তর বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে উত্তর দিকে এগিয়ে যাবে রেমাল। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের ১২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে, ক্যানিংয়ের ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্বে, বাংলাদেশের মোংলা থেকে ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার ১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে ছিল তার অবস্থান।

সাগরে শক্তি বাড়িয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে রবিবার রাত ১২টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড় রেমালের ‘চোখ’ ঢুকে পড়ে স্থলভাগে। বাংলাদেশের খেপুপাড়া এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মাঝখান দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসাবে বাংলাদেশের মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিমে আছড়ে পড়ে রেমাল। ঘূর্ণিঝড়ের ‘লেজটি’ ক্যানিং থেকে এখনও ৯০ কিলোমিটার দূরে ছিল। ল্যান্ডফলের গোটা প্রক্রিয়াটি প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে চলে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানায়, রাত ১২টা নাগাদ রেমালের ল্যান্ডফল শেষ হয়।

নদিয়া এবং পূর্ব বর্ধমানে ঝড়ের গতি ৬০-৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত ছিল বলে হাওয়া অফিস সূত্রে খবর। তবে এই গতি বেড়ে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্তও ছুঁয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণের বাকি জেলাগুলিতেও ৫০-৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হয়। রবিবার রাতে বৃষ্টির কারণে জেলাগুলিতে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছিল।
সোমবার সকালে রেমাল তার দাপট কমিয়ে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলেও সোমবার নদিয়া, মুর্শিদাবাদে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই জেলাগুলিতে জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা।

কলকাতা, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, হুগলি, বীরভূম এবং পূর্ব বর্ধমানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির জন্য কমলা সতর্কতা জারি করা হয়। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাতেও ভারী বৃষ্টির জন্য হলুদ সতর্কতা জারি করা হয় ।
রেমালের প্রভাবে কলকাতা সহ হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪পরগনা জেলার বিভিন্ন নিচু এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায় । অবশেষে আবহাওয়া দপ্তর জানায় সোমবার শক্তি খুইয়ে ঘূর্ণিঝড় রেমাল এগোচ্ছে উত্তর-পূর্ব দিকে । স্বতি ফেরে পশ্চিমবঙ্গবাসীর ।


ছবি তুলেছেন  দেবাশিস রায়,পার্থসারথি নন্দী , সৃজিতা শীল ও অর্পিতা বনিক I

Previous articleCyclone Remalরেমালের দাপটে ভাসল কলকাতা! টানা বৃষ্টিতে শহর জুড়ে জল-যন্ত্রণা, ব্যাহত মেট্রো চলাচল , বিমানবন্দরে চালু পরিষেবা , অবশেষে স্বস্তিতে যাত্রীরা
Next articleLok Sabha Election 2024 : কলকাতায় মোদী-মমতার রোড শো-এর প্রস্তুতি তুঙ্গে,অবরুদ্ধ হবে শহর, কোন রাস্তা এড়িয়ে চলবেন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here