বাংলা জুড়ে হালকা শীতের স্পেল জারি রয়েছে।ভোরে কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে একাধিক জেলা। হু-হু করে নেমেছে তাপমাত্রার পারদ। এই আবহে বুধবার দুপুর থেকেই দাপট দেখাতে পারে ঘূর্ণিঝড় ফেঙ্গল।
মঙ্গলবার বেলা যত গড়িয়েছে ধীরে ধীরে গভীর নিম্নচাপ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে বলে খবর। সোমবার রাত থেকেই তামিলনাড়ুতে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। সময় যত গড়িয়েছে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বৃষ্টি। হাওয়া অফিসের তরফে জানানো হয়েছে, বুধবার দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। একাধিক প্রান্তে ঘূর্ণিঝড় দাপট দেখাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া গভীর নিম্নচাপ বুধবারই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর (ইন্ডিয়ান মেটিওরোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট বা আইএমডি)। উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে তাদের পূর্বাভাস, আগামী দু’দিনে ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমশ উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিমে তামিলনাড়ু উপকূলের দিকে অগ্রসর হবে। আর এর প্রভাবে আগামী দু’-তিন দিন তামিলনাড়ুর আট জেলায় দুর্যোগ চলার পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস।
তামিলনাড়ুর আঞ্চলিক আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে চেন্নাই, ময়িলাদুথুরাই, তিরুভারুর, নাগাপট্টিনম, তিরুভাল্লুর, কাঞ্চিপুরম, চেঙ্গলপেট এবং কাড্ডালোর জেলায়। ইতিমধ্যেই এই আট জেলায় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসাবে স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে। নাগাপট্টিনম, তিরুভারুরের মতো উপকূলবর্তী জেলায় মঙ্গলবার থেকেই আবহাওয়া পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তাই মঙ্গলবার থেকেই সেখানে স্কুল-কলেজ বন্ধ।
দুর্যোগ পরিস্থিতির মোকাবিলায় মঙ্গলবারই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে এমন জেলাগুলিতে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দল মোতায়েন করার নির্দেশ দেন তিনি। ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ১,৬৩৪টি ত্রাণশিবির প্রস্তুত রাখছে রাজ্য প্রশাসন। আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায় জেনারেটর, নৌকাও মজুত রাখা হচ্ছে। দুর্যোগ বাড়লে চেন্নাই বিমানবন্দরে বিমান পরিষেবাও ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়টি তৈরি হলে তার নাম হবে ‘ফেনজ়ল’। নামকরণটি করেছে সৌদি আরব। অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে উত্তর আন্দামান সাগর এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে সৃষ্ট ঘূর্ণাবর্ত আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। সেটির নাম ছিল ‘ডেনা’।
বাংলায় প্রভাব পড়বে কতটা?
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর, বঙ্গোপসাগরে ইতিমধ্যেই গভীর নিম্নচাপ তৈরি য়েছে। যা শক্তি বাড়িয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে চলেছে। এর দাপটে তামিলনাড়ু, পুদুচেরিতে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকলেও, বাংলায় কতটা প্রভাব পড়বে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
তবে আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা, গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে দক্ষিণবঙ্গের পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো উপকূলের জেলাতে। শুক্রবার থেকে রবিবারের মধ্যে এই চার জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া এই জেলাগুলিতে সপ্তাহান্তে মেঘলা আকাশ থাকতে পারে।
আজ, বুধবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ দক্ষিণবঙ্গের কোনও জেলায় বৃষ্টি হবে না। সব জেলার আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে। শুক্রবারে দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের কিছু অংশে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। শনিবার আবার উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু অংশে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে।
রবিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে। সোমবার থেকে দক্ষিণবঙ্গের কোনও জেলায় বৃষ্টি হবে না। আজ কুয়াশাচ্ছন্ন থাকবে পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান এবং বাঁকুড়া। শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং এবং কালিম্পংয়ের পার্বত্য এলাকায়। অন্যান্য জেলায় কুয়াশার দাপট থাকবে।