ধীরে ধীরে শক্তি বাড়াচ্ছে ‘দানা’। বুধবার মধ্যরাতে
উপকূলের দিকে আরও ৯০ কিলোমিটার এগিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে বুলেটিন প্রকাশ করে আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, সাগরদ্বীপ থেকে মাত্র ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড়টি। বর্তমানে ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছে। এদিন সকালে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছে বৃষ্টি। সকাল থেকেই ঝোড়ো হাওয়া বইছে।
প্রসঙ্গত, বুধবার রাতেই আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র ল্যান্ডফলের অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে। আজ মাঝরাত থেকে আগামিকাল, শুক্রবার ভোরের মধ্যে ‘দানা’ আছড়ে পড়বে ওড়িশার ভিতরকণিকা থেকে ধামরার মধ্যে। স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় এর সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১২০ কিমি। ওড়িশার ভুবনেশ্বর, পুরী, কটক সহ ১৪টি জেলায় জারি রয়েছে লাল সতর্কতা।
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র ভয়ে ত্রস্ত গোটা ওড়িশা। ইতিমধ্যেই মৌসম ভবন এই ঘূর্ণিঝড়ের স্থলপতনের সম্ভাব্য জায়গার কথা উল্লেখও করেছে। মৌসম ভবন জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি ওড়িশার ভিতরকণিকা এবং ধামারা দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে। আছড়ে পড়ার সময় গতি হতে পারে ঘণ্টায় ১০০-১১০ কিলোমিটার। সর্বাধিক গতি পৌঁছতে পারে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। বর্তমানে ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ‘দানা’। ধামারা থেকে ৩১০ কিলোমিটার এবং সাগরদ্বীপ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে।
মৌসম ভবনের ভুবনেশ্বর আঞ্চলিক অফিসের তথ্য বলছে, এই ঝড়ের তাণ্ডব সবচেয়ে বেশি দেখা যাবে বালেশ্বর, ভদ্রক এবং কেন্দ্রাপাড়ায়। এই তিন জেলাতে তাই বেশি ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ‘দানা’র স্থলপতনের সময় এই তিন জেলায় ঝড়ের সম্ভাব্য গতিবেগ হতে পারে ১১০-১১০ কিলোমিটার।
এদিকে ‘ দানা’র,আতঙ্কে পর্যটকশূন্য দিঘা-মন্দারমণি
সাইক্লোন ‘দানা’-র ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে দিঘা, মন্দারমণি-সহ পূর্ব মেদিনীপুরে। সকাল থেকে দিঘার চিত্রটাও বদলে গেছে ।
অধিকাংশ পর্যটক ইতিমধ্যেই দিঘার হোটেল ছেড়ে বাড়ির পথ ধরলেও কিছু অত্যুৎসাহী পর্যটক এখনও হোটেলে বসে রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। বৃহস্পতিবার বেলার দিকে তাঁদের কয়েক জন সমুদ্রের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাঁশের ব্যারিকেড থাকায় সৈকতে নামতে পারেননি তাঁরা। সমুদ্রে যাতে কেউ নামতে না পারেন, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনের তরফে নজর রাখা হচ্ছে। সকালের দিকে সৈকত সংলগ্ন কয়েকটি দোকান খুললেও পরে প্রশাসনের লোকজন গিয়ে সেগুলি বন্ধ করান।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই উত্তাল দিঘার সমুদ্র। পর্যটকদের সতর্ক করতে মাইকিং হচ্ছে।
২৬ অক্টোবর পর্যন্ত দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুরে সমুদ্র স্নানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সমুদ্রের পাড়ে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে। পর্যটকরা যাতে সমুদ্রের কাছাকাছি না যান সেই জন্য বারংবার সতর্ক করা হচ্ছে।
অত্যাধিক ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে। সেই জন্য জারি হয়েছে লাল সতর্কতা।
সকাল থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে দিঘায়। এ দিন সেখানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
উপকূলবর্তী এলাকায় সব হোটেল খালি করে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল প্রশাসনের তরফে। হোটেল মালিক কর্তৃপক্ষদের তরফে জানানো হচ্ছে, বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে সমুদ্র লাগোয়া প্রায় সব হোটেল পর্যটকশূন্য।
পূর্ব মেদিনীপুরের নিচু এলাকাগুলি যেমন রামনগর ১, খেজুরি ১, কন্টাই ২ ব্লক থেকে মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হচ্ছে।
সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা পর্যটকদের হোটেলে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন। সমুদ্র সৈকত মোটের উপর খালি।
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর, আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গের নয় জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্বমেদিনীপুর, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়,পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামে জারি রয়েছে লাল সতর্কতা। স্থলভাগে ‘ডানা’ প্রবেশ করার পর কলকাতায় প্রতি ঘণ্টায় ৮০ কিমি বেগে ঝড় বইবে। ‘ডানা’র সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারে ১২০কিমি/ঘণ্টা।
আগামিকাল শুক্রবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে। জারি থাকবে লাল সতর্কতা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ঝোড়ো হাওয়ার বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার। বৃহস্পতিবার রাত এবং শুক্রবার সকালের মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরে হাওয়ার গতি বেড়ে ১২০ কিলোমিটারে পৌঁছে যেতে পারে। পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপ, সুন্দরবন এলাকায় আজ রাত থেকে ঝড়ের গতি হতে পারে ৮০-৯০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজ্যের সমুদ্র উপকূলবর্তী দুই জেলা পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অংশেও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ওই দুই জেলায় মাঝেমধ্যে ঝোড়ো হাওয়াও বইছে। তবে এখনও পর্যন্ত সমুদ্র মোটের উপরে শান্ত রয়েছে। পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে জেলা প্রশাসন।