গুজরাতের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছে প্রশাসন। গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে গুজরাতের বিস্তীর্ণ অংশে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিপর্যস্ত এলাকা থেকে ইতিমধ্যেই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হাজার হাজার মানুষকে।
ফের ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়। আরব সাগরের উত্তরে গুজরাট উপকূলে শুক্রবারই তৈরি হতে পারে সাইক্লোন। বৃহস্পতিবারই এই নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে মৌসম ভবন।
বর্তমানে সৌরাষ্ট্র কচ্ছের উপর অবস্থান করছে একটি গভীর নিম্নচাপ৷ শুক্রবারের মধ্যে যা উত্তর আরব সাগরের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। যদি তেমনটা হয় তবে আরবসাগরে ১৯৬৪ সালের পর এটাই হবে দ্বিতীয় অগস্ট ঝড়। শুধু তাই নয়, সে ক্ষেত্রে বিগত ৮০ সালের মধ্যে এটি হবে চতুর্থ বিরল পরিস্থিতি যেখানে ভূমিভাগ থেকে সমুদ্রে পৌঁছনোর মধ্যেই সাইক্লোন সক্রিয় হবে।
ধীরে ধীরে শক্তিবৃদ্ধি করছে সৌরাষ্ট্র-কচ্ছের উপর থাকা গভীর নিম্নচাপ। মৌসম ভবন সূত্রে খবর, শুক্রবারই এই নিম্নচাপ পরিণত হতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে। আছড়ে পড়তে পারে উপকূলীয় এলাকায়। ফলে গুজরাতের বিস্তীর্ণ অংশে শুক্রবারও প্রবল বর্ষণের সম্ভাবনা থাকছে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।
মৌসম বিভাগের তরফে গুজরাটের ভারুচ, কচ্ছ ও সৌরাষ্ট্র জেলায় অত্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ৩১ অগস্ট পর্যন্ত গুজরাটের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি চলবে। ইতিমধ্যেই টানা বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি গুজরাটে। বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায় ডুবে গিয়েছে।
পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।। দ্বারকা, বরোদা, মোরবি-সহ একাধিক জেলায় সেনা নামিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা করা হচ্ছে। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেলের সঙ্গে ফোনে কথা বলে গুজরাটের পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজ নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গুজরাটের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস গিয়েছেন তিনি।
আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, এই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়লে তার নাম হবে ‘আসনা’৷ এই নামকরণ করেছে পাকিস্তান। ‘আসনা’ শব্দের অর্থ সর্বোচ্চ, উজ্জ্বলতম এবং প্রশংসনীয়।
তবে আসনা যে সে ঘূর্ণিঝড় নয়। গত ৮০ বছরে মাত্র চার বার এই ধরনের ঘূর্ণিঝড় দেখা গিয়েছে। নিম্নচাপ সাধারণত তৈরি হয় সমুদ্রে। পরে তা শক্তি বৃদ্ধি করে গভীর নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে আছড়ে পড়ে স্থলে।
কিন্তু আসনার ক্ষেত্রে উল্টো। নিম্নচাপ অঞ্চল তৈরি হয়েছে স্থলে এবং এই নিম্নচাপ থেকে তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে সমুদ্রে।
এর আগে ১৯৪৪, ১৯৬৪ এবং ১৯৭৬ সালের অগস্ট মাসেও আরবসাগরে পৌঁছনোর আগে ভূমিভাগেই গভীর নিম্নচাপ ঘণীভূত হয়েছিল। তবে সমস্ত ক্ষেত্রেই নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরতি হয়নি। এখন দেখার আদৌ ‘আসনা’-র আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না।
আবহাওয়াবিদদের একাংশ বলছেন, বর্ষার মরশুমে ঘূর্ণিঝড় বিরল। তবে সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর শক্তিশালী প্রতিরোধের কারণে সাধারণত নিম্নচাপগুলি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে না।
পাকিস্তানের আবহাওয়া দফতরের পক্ষ থেকেও শনিবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের দু’টি জেলায় বন্যা নিয়েও সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
মৌসম ভবন শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘কচ্ছ এবং আশপাশের এলাকায় থাকা গভীর নিম্নচাপ ভূজের প্রায় ৯০ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তরপশ্চিমে অবস্থান করছে। শুক্রবার তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। আগামী দু’দিনের মধ্যে উপকূল থেকে প্রায় পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে উত্তর-পূর্ব আরব সাগরের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে।’’
উল্লেখ্য, ভারী বর্ষণের কারণে বিধ্বস্ত গুজরাতের বরোদা এবং রাজ্যের অন্যান্য বেশ কয়েকটি এলাকায় নদীর জল ঢুকে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করেছে। রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে কুমির।
রবিবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির জেরে গুজরাতে মোট ৩৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। গুজরাতে বিশ্বামিত্রি-সহ বেশ কয়েকটি নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। নদীর জল ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে।
রবিবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির জেরে গুজরাতে মোট ৩৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। গুজরাতে বিশ্বামিত্রি-সহ বেশ কয়েকটি নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। নদীর জল ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে।
গুজরাত সরকার জানিয়েছে, আরাবল্লী, দ্বারকা, পঞ্চমহল, ডাং, বারুরুচ, মোরবি এবং বরোদায় এলাকাগুলিতে কমপক্ষে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। আনন্দে ছ’জন, আমদাবাদে পাঁচ জন, মহিসাগর এবং জামনগরে তিন জন মারা গিয়েছেন। গান্ধীনগর, খেদা, মহিসাগর, দাহোড় এবং সুরেন্দ্রনগর জেলায় মৃত্যু হয়েছে দু’জনের।
এই পরিস্থিতিতে ৩২ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বিপর্যস্ত এলাকাগুলি থেকে প্রায় ১,২০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে, হেলিকপ্টার ব্যবহার করে চলছে উদ্ধারকাজ।
উল্লেখ্য, গুজরাতের বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দেবভূমি দ্বারকা, জামনগর, রাজকোট এবং পোরবন্দর জেলায়। শুধু দেবভূমি দ্বারকাতেই ১৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্বামিত্রি নদী বরোদা শহরের মাঝ বরাবর বয়ে গিয়েছে। প্রবল বৃষ্টির কারণে বর্তমানে নদীর জল বিপদসীমার ৯ ফুট উপর দিয়ে বইছে। ফলে নদীর জল ঢুকে পড়েছে বরোদা এবং আশপাশের নিচু এলাকাগুলিতে।
বিশ্বামিত্রি নদী থেকে জলের পাশাপাশি একাধিক কুমিরও ঢুকে পড়েছে জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলিতে। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ জনগণের মধ্যে।
গুজরাতের জলমগ্ন এলাকাগুলিতে ত্রাণসামগ্রীর জন্য হাহাকারও চলছে। ঘরের মধ্যে আটকে পড়েছেন বহু মানুষ। বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভেঙে গিয়েছে। একাধিক ভবন জলের তলায় চলে গিয়েছে।
বরোদা শহর এবং আশপাশের লোকালয়ে কুমির ঘুরে বেড়ানোর বেশ কয়েকটি ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে সমাজমাধ্যমে। প্রকাশ্যে এসেছে অডি-সহ একাধিক বিলাসবহুল গাড়ির ভেসে যাওয়ার ভিডিয়োও। (যদিও ভিডিয়োগুলির সত্যতা যাচাই করেনি দেশের সময় অনলাইন )।