দেশের সময় , বাগদা: সিপিএম (CPIM) নেতাকে অপহরণ এবং মিডিলম্যান হিসাবে কাজ করেছেন তৃণমূল নেত্রী গোপা রায়। অর্থাৎ যে দুষ্কৃতীরা সিপিএম নেতাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়, তাঁদের সঙ্গে গোপা রায়ের যোগাযোগ ছিল বলে অভিযোগ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বাগদায়। তবে কী কারণে এই অপহরণ তা এখনও পরিস্কার নয়। বাম নেতার দাবি, অপহৃত ব্যক্তির মুক্তিপণের বিষয়ে মধ্যস্থতা করছেন ওই তৃণমূল নেত্রী।
চলতি মাসের ১ তারিখ এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে। অভিযোগ বাগদার বাসিন্দা তথা বাম নেতা সজল ভদ্রকে দেখা করতে বলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূল নেত্রী গোপা রায়। দেখা করার জন্য তাঁকে বনগাঁ চাকদা সড়কের একটি জায়গায় আসতে বলা হয়। সেখানে এলে তাঁকে গাড়ি থেকে নেম মোটরবাইকে করে চলে যান ওই তৃণমূলনেত্রী। কিছু সময় পর গোপা রায়ের গাড়িটিও চলে যায় ৷
তৃণমূলনেত্রী চলে যাওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই হঠাৎ কয়েকজন অপরিচিত যুবক এসে বাম নেতাকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে জোরপূর্বক একটি চার চাকা গাড়িতে তুলে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয় । আটকে রেখে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে দুষ্কৃতীরা। তবে এই মুক্তিপণ কীভাবে দেওয়া যাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই জানান তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন দুষ্কৃতীরা। দেখুনভিডিও
গোপা রায় ১০ লক্ষ টাকা দাবি করেন। এক লাখ টাকা ও সোনার চেনসহ বেশ কিছু সোনার গয়না দিয়ে বাম নেতাকে অপহরণকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যান ওই তৃণমূলনেত্রী। গোটা ঘটনায় গোপালনগর থানা সহ পুলিশ সুপার কাছে ইমেল করে অভিযোগ করেন বাম নেতা। সজল বাবুর অভিযোগ, ঘটনার কথা জানাজানি করলে তাঁকে এবং তাঁর বছর চারের ছেলেকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে ৷ তিনি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন৷
তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে সিপিএম যুবনেতাকে কিডন্যাপ করানোর অভিযোগ। মুক্তি পাওয়ার পর ইমেলের মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করলেন ওই সিপিএম নেতা। নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোপা বললেন, “ওকে গিয়ে বেটে দেব”
যদিও গোটা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূলনেত্রী। তাঁর দাবি, “যাঁরা টাকা পাবে তাঁরাই ওঁকে আটকে রেখেছিল। ওঁর পরিবারের লোক আমার দ্বারস্থ হয়েছিলেন। আমাকে জোর করে নিয়ে গিয়েছে, তাই আমি গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। আমি ওনার পরিবারে কাছ থেকে অনেক টাকা পাব।” পাশাপাশি বাগদা এলাকায় প্রচুর মানুষ টাকা পাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। এই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে, তাতে গোপার বক্তব্য শুনে মনে করা হচ্ছে যে তিনি অপহরণকারীদের চেনেন।
উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার সিপিএম-এর যুব সংগঠনের বাগদা লোকাল কমিটির সহ-সম্পাদক সজল ভদ্র। সোমবার ইমেল মারফত তিনি বনগাঁ গোপালনগর থানায় অভিযোগ করেন। তাঁর দাবি, মার্চ মাসের ১ তারিখ তাঁকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোপা রায় বনগাঁর চকদা চলকি এলাকায় ডাকেন। সেখানে তাঁকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে তৃণমূল নেত্রী চলে যান।
অভিযোগ, কিছুক্ষণ পরে একটি বাইক ও চার চাকা গাড়িতে কয়েকজন লোক এসে তাঁকে গাড়িতে তুলে নিয়ে একটি ফাঁকা জায়গায় নামিয়ে মারধর করে। শূন্যে ২ রাউন্ড গুলিও চালায়। এমনকী তাঁর কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকাও মুক্তিপণ চায় কিডন্যাপরা।
কিডন্যাপাররা তাকে বলে তাদের সঙ্গে গোপা রায়ের যোগাযোগ আছে। তাঁর মাধ্যমে কথা বলতে পারেন । সেই মতো গোপা রায়ের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে ১ লক্ষ ও সোনার মূল্য মিলিয়ে মোট প্রায় ১০ লক্ষ টাকা নিয়ে গোপা রায়ের মাধ্যমে তাঁর স্ত্রী সেই জায়গায় পৌঁছে সজলকে উদ্ধার করেন। সজলের তিনটি মোবাইল ফোন রেখে দেয় কিডন্যাপাররা। সেই মোবাইল ফোন ফেরত চাইতে গেলে আরও টাকার দাবি করে আততায়ীরা।
সজল ভদ্রের দাবি, কিডন্যাপের এই ঘটনায় মিডলম্যান হিসেবে কাজ করেছেন বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোপা রায়। তিনি বলেন, “আমি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। পুলিশ তদন্ত করে দেখুন প্রকৃত দোষী কে। আমি আতঙ্কে আছি। আমার চলাফেরা নজর রাখা হচ্ছে।” অপরদিকে, গোপা রায় বলেন, “সজল ভদ্র আমার বাড়ি আসেন। খাওয়া-দাওয়া করেন। সমস্যায় পড়লে আসেন। আমি জানিই না এই বিষয়ে। আসলে ও টাকা তুলত। এখন যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে তাঁরা তাগাদা দিয়েছে। আমি কাউকে ডাকিনি। ও কিডন্যাপ হয়েছে বলেতে পারব না।” শেষে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যাওয়ার আগে গোপা বলেন, “ওকে বেটে দেব আমি”
এই প্রসঙ্গে বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি তরুণ ঘোষ বলেন, “এটা যদি হয়ে থাকে তাহলে সেটা অন্যায় তৃণমূল কংগ্রেস কোন অন্যায় কে প্রশ্রয় দেয় না । অন্যায়কারীকে রেয়াত করে না।”