দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ চিন, জাপান, ব্রাজিলে নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে করোনা। এই পরিস্থিতিতে সুরক্ষায় কোনও খামতি রাখতে নারাজ ভারত সরকারও। নতুন কোনও ভ্যারিয়্যান্ট অজান্তেই চোখ রাঙাচ্ছে না তো? তা জানার জন্য এবার কোভিড পজিটিভ নমুনাগুলির জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠানোর নির্দেশ দিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। Indian SARS-CoV-2 Genomics Consortium (INSACOG)-এ পরীক্ষা করানোর মাধ্যমে কোভিড ভ্যারিয়্য়ান্টগুলির উপর নজরদারি চালাতে চায়ছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
চিনে সংক্রমণ বহুলাংশে বেড়েছে। তার জের ভারতেও। প্রতিবেশী দেশের পরিস্থিতি দেখে তৎপর কেন্দ্রীয় সরকার। মঙ্গলবার রাজ্যগুলিকে চিঠি দিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজ্যগুলিকে দেওয়া একটি চিঠিতে বলেছেন, “সমস্ত রাজ্যগুলিকে অনুরোধ করা হচ্ছে কোভিড পজিটিভ নমুনাগুলি জিনোম পরীক্ষার জন্য INSACOG-এ পাঠাতে।” প্রতিদিন পজিটিভ নমুনাগুলি পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে রাজ্য এবং ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলিকে তথ্য রাখার কথা বলা হয়েছে। ভারতে কোভিড সংক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ১১২ জন। সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৩৯০ জনে। গত এক সপ্তাহে দেশে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ১০৩ জন, যা ২০২০ সালের ২৩-২৯ মার্চের মধ্যে সর্বনিম্ন।
নতুন করে আবার উদ্বেগ বাড়াচ্ছে করোনাভাইরাস। বছর শেষের আগে চিন, আমেরিকায় সংক্রমণ বাড়ছে। এ নিয়ে এ বার তৎপর হল ভারত সরকার। দেশে কোভিডে আক্রান্তদের জিনোম সিকোয়েন্স করার সংখ্যা বাড়াতে রাজ্যগুলিকে মঙ্গলবার পরামর্শ দিল কেন্দ্রীয় সরকার।
এ নিয়ে রাজ্যগুলিকে পাঠানো চিঠিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ লিখেছেন, ‘‘চিন, জাপান, আমেরিকা, কোরিয়া, ব্রাজিলে আচমকা করোনায় সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ছে। তাই আক্রান্তদের জিনোম সিকোয়েন্সে জোর দিতে হবে। যাতে করোনার প্রজাতিকে নজরে রাখা যায়।’’
চিঠিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব আরও লিখেছেন যে, করোনার নতুন কোনও প্রজাতির কারণে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে কি না, তার হদিস পাওয়া যাবে জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে। জিনোম সিকোয়েন্স এমন একটা পদ্ধতি, যার সাহায্যে করোনার নতুন প্রজাতিকে চিহ্নিত করা ও তার চরিত্র সম্পর্কে জানা যায়।
বস্তুত, চিনে আবার করোনার দাপট দেখা গিয়েছে। সে দেশে সম্প্রতি করোনাবিধি শিথিল হতেই সংক্রমণ বাড়ছে। অতিমারি বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, আগামী ৯০ দিনে চিনের জনগোষ্ঠীর ৬০ শতাংশ মানুষই সংক্রমিত হবেন। মঙ্গলবার বেজিংয়ে করোনায় ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। যে হারে নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে, তা আন্তর্জাতিক স্তরে উদ্বেগের বিষয় বলে জানিয়েছে আমেরিকা।
যদিও গত কয়েক মাস ধরেই ভারতে করোনা অতিমারি থিতু হয়েছে। সংক্রমণের হার ক্রমশ নিম্নমুখী। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে জানা গিয়েছে, দেশে এক দিনে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ১১২ জন। চিনে আবার করোনার দাপট দেখা যাওয়ায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্যানেল আশ্বাসের সুরে জানিয়েছে যে, চিনের করোনা পরিস্থিতি বেগতিক হলেও এ নিয়ে ভারতের আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। তবে চিনের কোভিড পরিস্থিতির উপর সর্বদা নজর রাখা হচ্ছে। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে কোভিড ওয়ার্কিং গ্রুপের চেয়ারম্যান এনকে অরোরা জানিয়েছেন যে, দেশে বর্তমানে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার এন কে আরোরা বলেন, “চিনের কোভিড পরিস্থিতির উপর কড়া নজরদারি চালানোর প্রয়োজন রয়েছে। তবে ভারতের এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। ভারতের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।” দেশে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার নেপথ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে কোভিড টিকার, এমনটাই মন্তব্য করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বিশ্বে প্রথম করোনা আক্রান্ত ধরা পড়ে চিনে। এরপর গোটা দুনিয়ায় তা ছড়িয়ে পড়ে। চিনের বিরুদ্ধে কোভিড সংক্রান্ত তথ্য গোপন করার অভিযোগ উঠেছিল। এমনকী, করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়েও বিস্তর প্রশ্ন ওঠে। যদিও চিন বরাবর দাবি করে এসেছে বাদুড় থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO)-এর তরফে ক্লিনচিট পেয়েছিল চিন। যদিও এই ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে দ্বিতীয় বার পরীক্ষা চালানোর অনুমতি WHO-কে দেয়নি এই দেশ।