কালবৈশাখীতে লণ্ডভণ্ড কৃষ্ণনগরের সভা মঞ্চ
দেশের সময় কয়েকদিন আগেই কৃষ্ণনগর থেকে বাংলার নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এবার সেই কৃষ্ণনগর থেকেই প্রচার শুরু মমতার। রবিবারই নদিয়ার ধুবুলিয়া থানার সুকান্ত স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠে মমতার সভা। কিন্তু, তার আগেই বিপত্তি। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছিল রবিবার রাত থেকেই দক্ষিণবঙ্গের নানা প্রান্তে হতে পারে বৃষ্টি। সঙ্গে বইতে পারে ঝড়ো হাওয়া। এদিকে রাতেই রাতেই কালবৈশাখী ঝড়ে তছনছ হয়ে গেল মুখ্যমন্ত্রীর সভা মঞ্চ। এখান থেকেই কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী তথা প্রাক্তন সাংসদ মহুয়া মৈত্রের সমর্থনে সভা করার কথা তাঁর।
রাতের ঝড়ে ব্যাপাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুকান্ত স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠের সভা মঞ্চ। ভোরবেলা থেকেই জোরকদমে চলছে মেরামতির কাজ। নতুন করে মাঠে সাফাইয়ের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। বহু জায়গাতেই প্যান্ডেলের কাপড় ছিঁড়ে গিয়েছে। সেগুলিও মেরামতি হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী আসার আগেই পুরো কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা।
কৃষ্ণনগরের ধুবুলিয়ায় জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। লোকসভা ভোটে দলনেত্রীর প্রথম প্রচার সভায় রেকর্ড পরিমাণ জমায়েতের লক্ষ্য নিয়েছে তৃণমূল।
গত ১৪ মার্চ বাড়িতে পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পেয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কপালে একাধিক স্টিচও হয়েছিল। সূত্রের খবর, চিকিৎসকদের নিষেধ মেনে এতদিন প্রচারে নামেননি তিনি। এই মুহূর্তে চোট কাটিয়ে উঠেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যে এবারে সাত দফায় ভোট করছে কমিশন। ১৯ এপ্রিল প্রথম দফায় ভোট হবে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার আসনে। ১৩ মে চতুর্থ দফায় ভোট হবে কৃষ্ণনগরে। স্বাভাবিকভাবে, কৃষ্ণনগর থেকেই দলনেত্রীর প্রচার সভা শুরু করার ঘটনাকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
কৃষ্ণনগরে এবারেও তৃণমূল প্রার্থী করেছে মহুয়া মৈত্রকে। প্রশ্ন ঘুষ কাণ্ডে মহুয়াকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করেছে এথিক্স কমিটি। সম্প্রতি লোকপালের নির্দেশে মহুয়ার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে তাঁর কলকাতার এবং নদিয়ার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই। ফলে ওই মঞ্চ থেকে এজেন্সি ইস্যুতে রবিবার তৃণমূল নেত্রী কী বলেন, সেদিকে কৌতূহল রয়েছে সব মহলের।
দলীয় সূত্রের খবর, ৩ এপ্রিল থেকে পাঁচদিনের উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন মমতা। ৪-৮ এপ্রিল কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারে প্রচারসভা করার কথা রয়েছে দলনেত্রীর।
উত্তরবঙ্গ সফর থেকে ফিরে আবারও প্রচারসূচি তৈরি করে মুর্শিদাবাদের আসনগুলির জন্য প্রচারে যাবেন মমতা। এই সফরেই বালুরঘাটের তৃণমূল প্রার্থী বিপ্লব মিত্রের প্রচারে যাতে মুখ্যমন্ত্রী যান, সে ভাবেই তাঁর সফরসূচি তৈরি করা হচ্ছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। কারণ, দ্বিতীয় দফায় বালুরঘাটে ভোট হলেও, ওই কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থী বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। যিনি ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে জোরালো প্রচার চাইছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের সবকটি আসনে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। এবার উত্তরবঙ্গ থেকেও একাধিক আসনে জয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে শাসকদল। ইতিমধ্যে প্রচারে জোরও দিয়েছেন নেতৃত্ব। উত্তরবঙ্গ দলের জয় সুনিশ্চিত করতে দলনেত্রী কী বলেন, তা নিয়েও কৌতূহলী সব মহল।
প্রসঙ্গত, এই লোকসভা কেন্দ্রে ১৭ লক্ষ ৫৪ হাজারের বেশি ভোটার রয়েছে। তারমধ্যে শেষ নির্বাচনে ৪৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন মহুয়া মৈত্র। সেখানে বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিলেন ৪০ শতাংশ। অন্যান্যরা পেয়েছিলেন ১২ শতাংশ ভোট। এদিকে সাম্প্রতিককালে মহুয়ার বিরুদ্ধে উঠেছে একাধিক গুরুতর অভিযোগ। টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন করার অভিযোগে কয়েকদিন আগে সাংসদ পদও খারিজ হয়েছে তাঁর। তবে শুরু থেকেই দল তাঁর পাশে। কাঁধে এসেছে নতুন দায়িত্ব। এদিকে কৃষ্ণনগর জিততে এবারে একেবারে যুদ্ধের মেজাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে পদ্ম শিবির। প্রার্থী করা হয়েছে কৃষ্ণনগরের রানি মা অমৃতা রায়কে। সেই কৃষ্ণনগর থেকে এদিনের সভায় মমতা কী বার্তা দেন মমতা সেদিকে নজর রাজনৈতিক মহলের।