CM Mamata Banerjee: কলকাতা তো বর্তমানে চাকরির গেটওয়ে’, লন্ডন থেকে বললেন মমতা

0
94

কেলগ কলেজের হাউসফুল প্রেক্ষাগৃহে ‘হাইভোল্টেজ’ বক্তব্য রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এগিয়ে চলেছে বাংলা। গোটা দেশের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। নজর কাড়ছে বিশ্বের। এদিন একেবারে পরিসংখ্যান দিয়ে লন্ডনের বুকে দাঁড়িয়ে এ কথাই বললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তুলে ধরলেন তাঁর সরকারের একাধিক জনমুখী প্রকল্পের কথা। কীভাবে তা সমাজ বদলে ছাপ রাখছে তাও তুলে ধরেন নিজের বর্ক্তৃতায়। একইসঙ্গে ভারতের সঙ্গে ব্রিটেনের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথাও বারেবারে শোনা যায় মমতার মুখে। ভূয়সী প্রশংসা করেন বাংলার ছাত্র সমাজের। বলেন, ‘আমাদের ছাত্ররা অত্যন্ত প্রতিভাবান, ছাত্ররাই সমাজের ভবিষ্যৎ’। তুলেন ভারতের সর্ব-ধর্ম সমন্বয়, ঐতিহ্যের কথাও। 

পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি মেনেই এদিন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেলগ কলেজে ভাষণ দেন তিনি। সেখানেই মমতাকে বলতে শোনা যায়, “বাংলায় ৯৭টি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প রয়েছে। বাংলায় কেউ জন্ম নিলে তাহলে সে আমাদের প্রকল্প পায়। কেউ যদি মারাও যান তাহলেও তাঁর পাশে দাঁড়াই আমরা। আমি দেখেছি অনেকে প্রিয়জনের পর শেষকৃত্যটুকু করতে পারেন না টাকার অভাবে। আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে সমব্যথী প্রকল্প শুরু করেছি। তাঁদেরও আমরা টাকা দিই যাতে সুষ্ঠভাবে শেষকৃত্য করতে পারেন।” শুধু তাই নয়, বাংলা কীভাবে শিল্পায়নের হাত ধরে ধারেভারে বেড়ে উঠছে এদিন সেই পরিসংখ্যান দেন মমতা।

কেলগ কলেজ থেকেই বাংলায় শিল্পায়নের প্রসঙ্গে বলেন, “প্রচুর ইন্ড্রাস্ট্রি আসছে। কলকাতা তো বর্তমানে চাকরির জন্য সাম্প্রতিককালে একটা বড় গেটওয়ে হয়ে উঠছে। কয়েক বছরেই বেকারত্বের হার ৪৬ শতাংশ কমে গিয়েছে। ১ কোটি ৭৫ লক্ষ মানুষ আর আন্ডার প্রিভিলেজ সেকশনে নেই।” এখানেই না আমাদের তরুণদের জন্য খেয়াল রাখতে হয়। আমাদের কৃষকদের জন্য খেয়াল রাখতে হয়। প্রচুর ইন্ড্রাস্ট্রি আসছে। প্রতি বছর ২ বছরে একবার আমরা বিজেনেস সামিট করি। এখনও পর্যন্ত ২৩ লক্ষ মিলিয়ন বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে।” 

কোভিডে কীভাবে সারা বিশ্বের অ্রর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছে সেই প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শুরু থেকেই আমাদের নজরে ছিল সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির দিকে। তাই আমরা গরিব ছাত্রদের পাশে দাঁড়াতে স্কলারশিপের ব্যবস্থা করেছি। বিভাজন নয়, ঐক্যই আমার লক্ষ্য। সেজন্য মৃত্যুও বরণ করতে রাজি আছি।’

রামকৃষ্ণ পরমহংস থেকে বিবেকানন্দর প্রসঙ্গ টেনে আনেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতায় উঠে আসে ‘মা-মাটি-মানুষ’ এর কথাও। কেন এই স্লোগান, তার ব্যাখ্যাও দিলেন মমতা। বললেন, ‘বিভাজন নয়, মানবিকতাই শেষ কথা। তাই আমরা বরাবর গরিব মানুষের পাশে থেকেছি। ১ কোটি ৭৫ লক্ষ মানুষকে আমরা দারিদ্রসীমার উপরে নিয়ে এসেছি। আমরা শুধু পিছিয়ে পড়া শ্রেণি নয়, কৃষক থেকে সমাজের সর্বস্তরের খেয়াল রাখি।’

এদিনের বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীর জন্য করা নানারকম সুবিধার কথা উল্লেখ করেন, ‘নারী শিক্ষার উন্নয়নে স্কুলস্তর থেকে কন্যাশ্রী চালু করেছি। উচ্চশিক্ষার জন্য স্মার্টকার্ড। বাল্যবিবাহ কমেছে, স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে বলেই বাংলায় এখন ৯৯.৯৯ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব হয়। আগে মাত্র ৩৩ শতাংশ ছিল। প্রতিটি হাসপাতালে বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়। শুধু ছাত্রীদের নয়, ছাত্রদের জন্যও আমরা স্কলারশিপ চালু করেছি। প্রবীণদের জন্য বার্ধক্যভাতা চালু করেছি। কন্যাশ্রী এখন দেশের মডেল। লক্ষ্মীর ভান্ডার এখন মহিলাদের ভরসা। বাংলায় চালু হওয়া লক্ষ্মীর ভান্ডার এখন সারা দেশ অনুসরণ করছে।’

এই প্রকল্পের কথা ভাল করে ব্যাখ্যা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মহিলাদের আর্থিক সাহায্যের জন্যই লক্ষ্মীর ভান্ডার। এটা আমৃত্যু বাংলার মেয়েরা পাবে। সর্বস্তরের গৃহবধূদের জন্যই আমরা এটা চালু করেছি। কৃষকদের বিনামূল্যে বিমার ব্যবস্থা করেছি। বিনামূল্যে সরকারিভাবে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষকে আমরা বাংলার বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। জন্ম থেকে মৃত্যু, মানুষের সেবায় ৯৭টি সামাজিক প্রকল্প চালাই আমরা।’

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের এই জায়গায় পৌঁছে আচমকা টাটার প্রসঙ্গ ওঠে। শ্রোতাদের দিক থেকে অবিশ্বাসসূচক প্রশ্ন ওঠে বিনিয়োগ নিয়ে। মমতা আগেই বলেছিলেন, বল এলে ব্যাট চালাবেন। বাস্তবে হলও তাই। বললেন, আমি মিথ্যে বলছি না, বাংলাতেও টাটা কোম্পানি তাদের একাধিক প্রোজেক্ট করছে।’

এখানেই শেষ নয়, এর পরে উঠে এল আরজি কর প্রসঙ্গও। মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দিলেন, বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। ফলে এই নিয়ে এই মঞ্চে কথা বলা ঠিক হবে না। একই সঙ্গে বললেন, ‘এই মঞ্চকে রাজনীতির মঞ্চে পরিণত করবেন না। প্রয়োজন হলে বাংলায় এসে দেখে যান, আমি মিথ্যে বলছি না।’
এর পরেও অসন্তোষ চলতে থাকে শ্রোতাদের মধ্যে। রীতিমতো চ্যাঁচামেচি শুরু হয়।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবে আমাকে অপমান করতে পারেন না। আপনারা তো নিজেদের প্রতিষ্ঠানকেও অসম্মান করছেন। মনে রাখবেন. আমি কিন্তু এখনও বিনম্র রয়েছি। এমন আচরণ করবেন না।’

এর পরেও টানা চার মিনিট ধরে চলে তর্কাতর্কি। মুখ্যমন্ত্রী কার্যত রেগে যান, বলতে থাকেন, ‘এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, আমি যেখানে যাব সেখানেই গোলমাল  পাকানোর চেষ্টা হবে। তবে মনে রাখবেন আমি সকলের জন্য। নির্দিষ্ট কোনও সম্প্রদায়ের জন্য নয়।’ ভাই, বোন সম্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলতে থাকেন, ‘প্লিজ এখানে রাজনীতি করবেন না।’ উল্টো দিক থেকে ক্রমাগত চিল চিৎকার চলতে থাকে। তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়, ‘আপনি সত্য আড়াল করছেন।’

মুখ্যমন্ত্রী যদিও এখানেও দমে যাননি, সরেও যাননি। তিনি চেঁচিয়ে বলেন, ‘এবার থেকে আমি চেষ্টা করব প্রতি বছর এই প্রতিষ্ঠানে আসতে। আমি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে জানি। আমি পালিয়ে যাওয়ার মানুষ নই। আমি খুশি, আমি ফিরে গিয়ে তোমাদের চকলেট পাঠাব। তোমাদের এই ধরনের আদর্শের জন্য। কতিপয় মানুষ ইচ্ছে করে ঝামেলা পাকাচ্ছো।’

টাটা, আরজি করের প্রসঙ্গ নিয়ে প্রশ্নকারীদের সঙ্গে গোলমালের সময় প্রশ্নকারীদের বাম-অতি বাম বলেও উল্লেখ করতে শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। বিরোধী দলনেত্রী থাকাকালীন কীভাবে তাঁর ওপর হামলা করা হয়েছিল, সেই ছবি তুলে ধরে প্রশ্নকর্তাদের উদ্দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এখানে মিথ্যে কথা বলে আমাকে অপমান না করে বাংলায় গিয়ে নিজেদের দলকে শক্তিশালী করুন।’

এর পরে কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে সম্প্রচার। এর পরে আবার স্বমেজাজে ফিরে আসেন মমতা। শেষ করেন তাঁর বক্তৃতা। বলেন, ‘আমরা ১.২ কোটি স্ব-সহায়ক গোষ্ঠী তৈরি করেছি, তাই নারী ক্ষমতায়নে বাংলা শীর্ষে। এটা কি সহজ মনে করছেন? ধারাবাহিকতা রয়েছে বলেই এটা সম্ভব। দক্ষ শ্রমিকে আমরা শীর্ষে। প্রযুক্তিতেও আমরা এগোচ্ছি।’

এর পরে তিনি বলেন, ‘মনে রাখবেন, আমি সরকার থেকে একটা পয়সা নিই না। সরকারের টাকায় এক কাপ চাও খাই না। সাতবারের সাংসদ ছিলাম। পেনশনের টাকাও নিই না। আমার লেখা বইয়ের রয়্যালটি থেকে আমার চলে যায়। ছবি এঁকেও আমি টাকা পাই। মনে রাখবেন, আমি কখনও মিথ্যে কথা বলি না। আপনি আমাকে বলবেন, আপনার জন্য রান্না করে দিতে। হ্যাঁ, আমি হাসিমুখে করে দেব। কেন জানেন, কোনও কাজই ছোট নয়।’

সবশেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু কুৎসার সামনে মাথা নত করব না, মাথা নত করতে হলে মানুষের কাছে করব।’ এরপর রবি ঠাকুরের কবিতা আউড়ে বললেন, ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য…’

Previous articleMadhuparna Thakur ভোটে জয়ী হয়ে বলেছিলেন সবাইকে এক করবো, অবশেষে কাজ করল মধুপর্ণা’র ম্যাজিক
Next articleMyanmar-Bangkok earthquakeমায়ানমার ও ব্যাঙ্ককে ভূমিকম্পে ভাঙল মসজিদ, একাধিক বাড়িও সেতু! দুপুরে মেঘালয়ে ফের কম্পন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here