দেশের সময়: বড়দিনের উৎসবে মেতে উঠেছে বাংলা। প্রতিবারের মতো এবারও ২৫ ডিসেম্বরের কয়েকদিন আগেই কলকাতার পার্কস্ট্রিটে অ্যালেন পার্কের ক্রিসমাস উৎসবের উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সঙ্গে বড়দিন ও নতুন বছরের উপহার হিসেবে ঘোষণা করেছেন, রাজ্য সরকারের কর্মীরা পয়লা জানুয়ারি থেকেই আরও ৪ শতাংশ ডিএ পাবেন। যার সুবিধা পাবেন ১৪ লক্ষ সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী এবং পেনশনভোগীরা। পার্কস্ট্রিটের অ্যালেনপার্কে শুরু হওয়া ক্রিসমাস উৎসব চলবে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পার্ক স্ট্রিটের পাশাপাশি এবার হাওড়াতেও শুরু হয়েছে ক্রিসমাস কার্নিভাল।
১২ দিন ব্যাপী এই কার্নিভাল হবে ইছাপুরের ড্রেনেজ ক্যানেল রোডে ষষ্ঠী নারায়ণ ইকো পার্কে। এই উপলক্ষ্যে থিম সং তৈরি করা হয়েছে। গেয়েছেন অরিজিৎ সিং। পার্কটিতে নানা ধরনের আলো, ক্রিসমাস ট্রি, সান্তাক্লজ ও নানা জিনিস দিয়ে সাজানো হয়েছে। থাকছে মিষ্টি সহ নানা ধরনের খাবার এবং কেনাকাটার অন্তত ৫০টি স্টল। বেলেপোল থেকে শ্যামপুর মোড় পর্যন্ত ড্রেনেজ ক্যানেল রোড আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে।
এদিকে, ফি বছরের মতো এবারও বড়দিন উপলক্ষ্যে আলোর মালায় সেজে উঠেছে গোটা পার্কস্ট্রিট। বড়দিন উপলক্ষ্যে এখানে ভিড় করেন হাজার হাজার মানুষ। ভিড় উপচে পড়ে পার্ক স্ট্রিটের রেস্তরাঁগুলিতে। প্রত্যেকেরই ডেস্টিনেশন বো ব্যারাক। কেক এবং ওয়াইনের স্বাদ মিলবে এখানে। ক্রিসমাস কয়্যার থেকে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে অ্যালেন পার্কে। সাজিয়ে তোলা হয়েছে সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল চার্চ ও সংলগ্ন এলাকা।
সেজে উঠেছে বো ব্যারাকের গলিও। ২৬ ডিসেম্বর অ্যালেন পার্কে সঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ২৭-৩০ ডিসেম্বর রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
কলকাতার পাশাপাশি দার্জিলিং, কালিম্পং, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, আসানসোল, দুর্গাপুর, চন্দননগর, ব্যান্ডেল, বারুইপুর, কৃষ্ণনগর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, হাওড়া ও বিধাননগরেও আয়োজন করা হয়েছে ক্রিসমাস ফেস্টিভাল। তবে বাঙালির বড়দিন শুধু বো ব্যারাক বা পার্কস্ট্রিটে সীমাবদ্ধ থাকে না। বড়দিনের ছুটিতে বাংলার মানুষ ভিড় জমান চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়াম, ভারতীয় জাদুঘরের মতো জায়গায়।
বড়দিন উপলক্ষে কলকাতার বিভিন্ন নামী রেস্তরাঁয় থাকছে বিশেষ মেনু। সঙ্গে অফার। তাজ বেঙ্গলে রাখা হচ্ছে নানা ধরনের চা। কুকিজ, ফ্রুট কেক, প্লাম কেক, ডান্ডি কেক। নিউ টাউনে তাজ সিটি সেন্টারে থাকছে ক্রিস মাস পুডিং, প্লাম কেক, মিন্স পাই, ডান্ডি কেক, জার্মান স্টোলেন ব্রেড, ইউল লগ। ভিভান্তা কলকাতায় থাকছে প্লাম পুডিং, স্টোলেন ব্রেড। হোটেল হলিডে ইনে থাকছে রোস্টেড পাম্পকিন অ্যান্ড চিকেন ফেনেল স্যালাড, টুনা ইন কিউকাম্বার কাপ, আভেন রোস্টেড হোল ফিশ। করিমস কলকাতায় থাকছে পনির লাহোরি, তন্দুরি পনির টিক্কা, তন্দুরি চটপটা আলু, চিকেন দম বিরিয়ানি, বাটার গার্লিক মাশরুম।
এরই মধ্যে পর্যটকদের জন্য সুখবর দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। দার্জিলিংয়ের উঁচু অংশে এবং সিকিমের বিস্তীর্ণ এলাকায় বড়দিনে তুষারপাত হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া দপ্তরের আধিকারিকরা।
এই খবরে বাঙালি এখন পাহাড়মুখী। দার্জিলিংয়ের হোটেলগুলিও পর্যটকদের জন্য বিশেষ খাবারদাবার ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। দার্জিলিংয়ে শুরু হয়েছে মালে টি ফেস্টিভাল। ওপেন ব্যান্ড প্রতিযোগিতা থেকে অর্কিড ও কমলালেবুর প্রদর্শনী, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি থেকে ফ্যাশান শো, সবটাই জায়গা পেয়েছে এই উৎসবে ৷
থাকছে ম্যারাথন দৌড়ও। জিটিএ’র সঙ্গে যৌথভাবে এই উৎসবের আয়োজন করেছে দার্জিলিং পুলিশ। শুক্রবার শুরু হয়েছে উৎসব। চলবে রবিবার পর্যন্ত। ফলে এই মুহূর্তে যারা পাহাড়ে রয়েছেন, তাদের কাছে এই উৎসব নিসন্দেহে বাড়তি পাওনা। দেখুন ভিডিও
সোমবার বড়দিন। তার আগেই রং বেরঙের বাহারি আলোতে সেজে উঠেছে পার্ক স্ট্রিট এবং শহরের বিভিন্ন প্রান্ত। এবার বড়দিনে কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হবে পার্ক স্ট্রিটকে। মোতায়েন থাকবে ৩৫০০ পুলিশ।
শহরের বিভিন্ন প্রান্তে থাকবে ২৩টি নাকা চেক পয়েন্ট। প্রয়োজনে সেদিন পার্ক স্ট্রিটকে ‘ওয়াকিং স্ট্রিটও’ করে দেওয়া হতে পারে। এছাড়াও কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে মোতায়েন করা থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ।
লালবাজার সূত্রের খবর, বড়দিনে নজরদারির ক্ষেত্রে আরও আঁটসাঁট করার জন্য পার্ক স্ট্রিট এবং সংলগ্ন এলাকাকে মোট ৯টি সেক্টরের ভাগ করা হচ্ছে।
২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বিকেলের পর পার্ক স্ট্রিটে মানুষের ঢল নামলে, প্রয়োজনে কয়েক ঘণ্টার জন্য ওই রাস্তাটি ‘ওয়াকিং স্ট্রিট’ করে দেওয়া হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। নিরাপত্তায় তৈরি রাখা হচ্ছে পিসিআর ভ্যান, হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড, রিভার প্যাট্রোলিং এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকেও। শহরের ২৩টি নাকা চেক পয়েন্টও করা হবে।
তা ছাড়া নিউ মার্কেট, আলিপুর চিড়িয়াখানা, সায়েন্স সিটি-সহ কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে অতিরিক্ত পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হবে। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রতিটি সেক্টরে একজন করে ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার অফিসার দায়িত্বে থাকবেন। তা ছাড়া ২৫ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদা অফিসার টহলদারি দেবেন বলে জানা যাচ্ছে।
লালবাজার সূত্রে খবর, এবার ২৪ ডিসেম্বর রবিবার হওয়ার কারণে সকাল থেকেই শহরের দর্শনীয় স্থান থাকবে জমজমাট। বিকেল গড়াতেই পার্ক স্ট্রিট, নিউ মার্কেট, ক্যাথিড্রল চার্চ-সহ শহরের অন্যান্য চার্চে ভিড় বাড়তে থাকবে। তাই ওই দিন নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হবে প্রায় ২৩০০ পুলিশ কর্মী। প্রতিবারের মতো এবারও তৈরি হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার।
২৪ ডিসেম্বর ৩ জন ডিসি, ১০ জন এসি, ৫০ জন ইন্সপেক্টর, ২৩৯ জন সাব ইন্সপেক্টর বা সার্জেন্ট, ৩০০ জন এএসআই, ১৪৭২ জন হোমগার্ড, প্রায় ২০০ জন মহিলা পুলিশ সব মিলিয়ে ২৪ ডিসেম্বর অর্থাৎ ক্রিসমাস ইভ প্রায় ২৩০০ পুলিশ কর্মী শহরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন।
একই ভাবে ২৫ তারিখ বড়দিনের দিন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৩২০০ জন। অর্থাৎ পার্কস্ট্রিটে যেমন জোন করে নিরাপত্তার বেষ্টনি তৈরি হচ্ছে। তেমন চার্চ, কালী ঘাটের মন্দির, চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়ার মতও জায়গাগুলোতেও থাকছে নিরাপত্তা।
২৫ ডিসেম্বর ৯জন ডিসি, ২৫ জন এসি, ৭৫ জন ইন্সপেক্টর, ৩০৪ জন সাব ইন্সপেক্টর বা সার্জেন্ট, ৪০৯ জন এএসআই, ২০৬৪ জন হোমগার্ড ও ৩০০জন মহিলা পুলিশ।
এছাড়া গঙ্গার ঘাটগুলোতেও নিরাপত্তা বাড়ানো হবে। প্রিন্সেপ ঘাট, মিলেনিয়াম পার্ক-সহ সংলগ্ন এলাকায় নজরদারি থাকবে পুলিশের। রিভার পেট্রলিং, ডিএমজি টিম থাকবে। এছাড়া ক্যুইক রেসপন্স টিম, এইচআরএফএস থাকবে পর্যাপ্ত পরিমাণে। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে মোট ৮টি অ্যাম্বুলান্স প্রস্তুত থাকবে। ডিভিশন থানাগুলোতেও থাকবে বাড়তি তৎপরতা।