দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শুরু হয়ে গেছে কাউন্টডাউন। ‘অটোমেটিক ল্যান্ডিং প্রসেস’ শুরু করতে চলেছে ইসরো
সেই ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে ভারতের চন্দ্রযান ।
আর মাত্র ২ ঘণ্টার অপেক্ষা। সন্ধে ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের মাটিতে নামবে চন্দ্রযানের ল্যান্ডার বিক্রম। তার প্রস্তুতি পর্ব শুরু করছে ইসরো। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, চাঁদে অটোমেটিক ল্যান্ডিংয়ের প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে।
কিন্তু এই দিনেই দেশে উপস্থিত নেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi)। ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় (South Africa) গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে দেশের জন্য এত বড় মুহূর্ত হাতছাড়া করতে রাজি নন প্রধানমন্ত্রী মোদী। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেই তিনি চাক্ষুষ করবেন চন্দ্রযান-৩ এর অবতরণ।
ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতেই তিনদিনের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখান থেকেই তিনি ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে চন্দ্রযান-৩ এর অবতরণের মুহূর্তের সাক্ষী থাকবেন। ইসরোর চন্দ্রাভিযানের সাফল্য কামনাও করেছেন তিনি।
এখন থেকে চাঁদেরই আকর্ষণের আওতায় আছে বিক্রম। চাঁদই টেনে নেবে ল্যান্ডারকে। গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে গতিবেগ এবং সময়ের হিসেবটা ঠিক রাখতে হবে। আলতো করে ঠেলে দিতে হবে চাঁদের দিকে। শেষ ১৫ মিনিট সময়টাই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই সফট ল্যান্ডিংয়ে কোনও সমস্যাই হবে না।
Chandrayaan-3 Mission:
— ISRO (@isro) August 23, 2023
All set to initiate the Automatic Landing Sequence (ALS).
Awaiting the arrival of Lander Module (LM) at the designated point, around 17:44 Hrs. IST.
Upon receiving the ALS command, the LM activates the throttleable engines for powered descent.
The… pic.twitter.com/x59DskcKUV
চাঁদের ৩০ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে এবার নামানো হবে ল্যান্ডারকে।
৬৯০ সেকেন্ড এইভাবে ধীরে ধীরে নামার পর ল্যান্ডারের ইঞ্জিনগুলো কাজ করা শুরু করবে। দ্বিতীয় চন্দ্রযানে পাঁচটি ইঞ্জিন ছিল। তৃতীয় চন্দ্রযানে ইঞ্জিনের সংখ্যা কমিয়ে চার করা হয়েছে। তাই এবারে ল্যান্ডারের ওজন প্রায় ২০০ কিলোগ্রাম বেড়েছে। সফট ল্যান্ডিংয়ের সময় ন্যূনতম দুটি ইঞ্জিন চালু রাখা হবে। দ্বিতীয় চন্দ্রযানে যে সেন্ট্রাল ইঞ্জিন ছিল সেটা এবার বাদ দেওয়া হয়েছে। ল্যান্ডিংয়ের সময় গতিবেগে গন্ডগোল হলে বা সেন্সর কাজ না করলে যাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়, সেজন্য সফটওয়্যার আরও উন্নত করা হয়ছে।
ইঞ্জিন চালুর পরেই বেগ আরও কমিয়ে ব্রেক কষবে ল্যান্ডার । অনেকটা সাইকেল ব্রেক কষে দাঁড়ানোর মতো। এই অবস্থা থেকে পুরোপুরি চাঁদের আকর্ষণ বলের কাছে নিজেকে সঁপে দেবে ল্যান্ডার বিক্রম। চাঁদের টানে হাল্কা পালকের মতো ভাসতে ভাসতে নেমে আসবে। এই সময়ে তার গতিবেগ থাকবে সেকেন্ডে ৬০ মিটারের মতো।
চাঁদের মাটি থেকে যখন দূরত্ব কমে দাঁড়াবে ৭.৫ কিলোমিটার, তখনই শুরু হবে আসল চ্যালেঞ্জ। এই পর্যায়ে গিয়েই আগের বার মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছিল চন্দ্রযান-২। কিন্তু এবার তা হবে না বলেই দাবি ইসরোর । এই সাড়ে সাত কিলোমিটারের পথটা অত্যন্ত সতর্কভাবে এবং সময় ও গতিবেগ হিসেব করে পালকের মতো নামতে হবে ল্যান্ডিং স্পটে ৷
অবতরণের আগে পরপর দু’বার ল্যান্ডিং স্পট খুঁটিয়ে দেখে নেবে ল্যান্ডার। এই সময় তার রেডার ও সেন্সর কাজ করা শুরু করবে। যেখানে সফট ল্যান্ডিং হবে সেই জায়গাটা সুরক্ষিত কিনা, গহ্বর আছে কিনা বা চাঁদের ধুলো রেগোলিথ বেশি মাত্রায় উত্তেজিত কিনা সেইসব পরীক্ষা করে তবেই অবতরণ করবে ল্যান্ডার।
চাঁদের মাটি থেকে যখন দূরত্ব কমে হবে ৮০০-১৩০০ মিটার, তখন ল্যান্ডিং স্পটের একদম কাছাকাছি চলে আসবে বিক্রম। এই সময় বিক্রমের ক্যামেরা ল্যান্ডিং স্পটের ছবি তুলে পাঠাবে পৃথিবীর গ্রাউন্ড স্টেশনে। বিক্রমের সেন্সর ল্যান্ডিং স্পটের ডেটা সংগ্রহ করেও পাঠাবে। বেঙ্গালুরুর স্টেশনে বসে ইসরোর বিজ্ঞানীরা খুব তাড়াতাড়ি সেই জায়গার ছবি ও ডেটা থেকে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখবেন সেখানে নামা সুরক্ষিত কিনা। সব খতিয়ে দেখে তবেই অনুমতি দেওয়া হবে বিক্রমকে।
ঠিক ১২ সেকেন্ড পর চাঁদের মাটি থেকে যখন ১৫০ মিটার দূরত্বে থাকবে বিক্রম সেই সময় ফের তার হাই-সেন্সর ক্যামেরা সক্রিয় হবে। ল্যান্ডিং স্পটে কোনও বিপদ আছে কিনা তা আবারও খুঁটিয়ে দেখে নেওয়া হবে। ৭৩ সেকেন্ডে মোট ১৫০ মিটার পথ অতিক্রম করে চন্দ্রপৃষ্ঠের একদম কাছাকাছি চলে আসবে বিক্রম। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ৭৩ সেকেন্ডেই ইতিহাস রচিত হবে। এই পুরো পথটা কোনওরকম ভুল ছাড়াই যদি বিক্রম সঠিকভাবে নেমে আসতে পারে তাহলে সফট ল্যান্ডিংয়ে আরও কোনও সমস্যাই থাকবে না।
এর পরের পর্যায়ই হল চাঁদের মাটি ছোঁয়া। বিক্রমকে এই সময় পুরোপুরি চার্জড করা হবে। এবার চাঁদে সফট ল্যান্ডিং করার জন্য যে জায়গা বেছে নেওয়া হয়েছে, সেটার পরিধি আগেরবারের থেকে বেশি রাখা হয়েছে। গতবার চাঁদে অবতরণের জন্য ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-র কাছে মাত্র ৫০০ মিটারX৫০০ মিটার জায়গা ছিল। এবার সেটা বাড়িয়ে ৪ কিলোমিটারX২.৪ কিলোমিটার করা হয়েছে। বিক্রমের পা-ও অনেক মজবুত। চাঁদের মাটি ছোঁয়ার সময় কোনও রকম সমস্যা হবে না বলেই দাবি ইসরোর বিজ্ঞানীদের।