দেবী দুর্গার প্রতিমা নিরঞ্জনের পরেই বিষাদের সুর বাজে বাঙালির হৃদয়ে। তবে কথায় আছে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন তাই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসবের পরেই বাঙালি আবারো মেতে উঠেছে হৈমন্তিকার আরাধনায়।
দুর্গাপুজো, কালীপুজোর পর ভাইফোঁটাও হয়ে গেল। এবার সামনে জগদ্ধাত্রী পুজো। আর জগদ্ধাত্রী পুজো মানে প্রথমেই যে জায়গার কথা বেশিরভাগ মানুষের মাথায় আসে, তা হল হুগলির চন্দননগর। ঐতিত্যের পাশাপাশি থিমের ছোঁয়াও দেখা যায় চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয়। আর সেই সমস্ত থিম মন জিতে নেয় দর্শনার্থীদের। এবারেও তার ব্যতিক্রম নেই। এবারও ঐতিহ্যের সঙ্গে থিমের মেলবন্ধন দেখা যাবে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক চন্দননগরের কিছু বড় পুজোর এবারের থিম তথা ভাবনা। জগদ্ধাত্রী অনলাইন নামে একটি ফেসবুক পেজের পোস্ট অনুযায়ী –
মহাডাঙা মেইন রোড বালক সংঘ – ৪৪তম বর্ষে এই কমিটির নিবেদন ‘লালসার জ্বালে গুপ্তধনের সন্ধানে’।
বোড় কালীতলা সার্বজনীন জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটি – ‘ধামসা তালে মাতবে নগর, সাজছে তাই রানির বাড়ি, ২৩ রাতেও সাজবে রানি, চড়বে যখন আলোর গাড়ি’।
গঞ্জ শীতলাতলা – ৪৯ বছরে এই কমিটির নিবেদন ‘৫০ অপেক্ষায়’। দেখুন ভিডিও
১৫ পল্লী জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটি – এবারে এই কমিটির পুজোয় ফুটে উঠবে ‘বিশ্বরূপ উমা’।
কপালীপাড়া সাহেববাগান সর্বজনীন – এই বছর কমিটি ৫৮তম বর্ষে পদার্পণ করছে। এবার তাদের ভাবনা ‘আলোকবর্তিকা’।
কলুপুকুর সার্বজনীন জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটি – ৪৭তম বর্ষে কলুপুকুরের থিম ‘কুরুক্ষেত্রের রথ’।
গোন্দলপাড়া কাছারিঘাট জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটি – ৪৩তম বর্ষে এই কমিটির ভাবনা ‘অদিবাসীদের জয়যাত্রা’।
গোন্দলপাড়া মনসাতলা জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটি – ৮২তম বর্ষে গোন্দলপাড়ার নিবেদন ‘ইচ্ছাডানা’।
সুভাষপল্লী সর্বজনীন শ্রী শ্রী জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটি – সুভাষপল্লী এবার ৫৫তম বর্ষে পদার্পণ করছে। এবার তাদের থিম ‘ভক্তিতেই মুক্তি’।
কলুপুকুরধার সর্বজনীন শ্রী শ্রী জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটি – এই বছর কমিটির ভাবনা ‘প্রবাহ’।
হালদার পাড়া আদি সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটি – এই বছর হালদারপাড়ার থিম ‘মাটির ঘরে মা’।
সেজে উঠেছে চন্দননগরের সমস্ত অলি গলি । এই মুহূর্তে প্রস্তুতি তুঙ্গে । চার দিন ধরে চলে এই পূজা ।
চাউল পট্টির সম্পাদক জানালেন , এই চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা করেছিলেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায় বা নবাবের দেওয়ান কৃষ্ণচন্দ্রের বন্ধু ইন্দ্রনারায়ন চৌধুরীর হাত ধরে। এই পুজো চন্দননগরের সব থেকে প্রাচীন পুজো তাই এইখানের দেবী আদি মা নামেও খ্যাত।
বর্তমানে প্রতিটি অলিতে গলিতে হয় মা জগদ্ধাত্রীর আরাধনা।
ধুনো পুরানো, কুমারী পুজো , নাড়ু বানানো এই সকল রীতি রয়েছে জানালেন বোড় যাদু ঘোষ লেন এর কতৃপক্ষ ।
সকলেই মেতে থাকে এই চার দিন। বিভিন্ন বারোয়ারি কতৃপক্ষ নানা রকমের সামাজিক সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দেন ।
এই সকল পরিবার গুলোর হাঁড়ি আলাদা হলেও এই চার দিন সকলেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে থাকেন।
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রস্তুতির ছবি ও ভিডিয়ো শেয়ার হতে শুরু করেছে। কেউ শেয়ার করছেন মণ্ডপের নির্মাণে ছবি, তো কেউ আবার পোস্ট করছেন প্রতিমায় রং করার কোনও এক মুহূর্ত। আবার কোথাও পুজোর আগের আলপনার ছবিও পোস্ট করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। যাকে বলে চন্দননগরের প্রাক পুজোর প্রস্তুতি কেমন, সেটাই তুলে ধরা হচ্ছে মানুষের সামনে।