Chaitra Sale সারা বছর অনলাইনে থেকেও চৈত্র সেলের বাজারে ব্যাপক ভিড় মহিলাদের, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকাতেই বিকিকিনি

0
11
অর্পিতা বনিক ,দেশের সময়

বনগাঁ : ‘সেল’। ইংরেজি এই শব্দটির বাংলা মানে ‘বিক্রয়’ হলেও, বাঙালির যাপনে এর ব্যঞ্জনা খানিক আলাদা। ‘সেল’ মানে নিছক ‘বিক্রয়’ নয় বঙ্গজীবনে। তার অনাভিধানিক অর্থ ‘কম দামে বিক্রি’। বাঙালির মুখের ভাষায় ‘সেল চলছে নাকি’-র অর্থ মোটেই বিক্রিবাটার খোঁজখবর নয়, সস্তায় কিছু পাওয়া যাচ্ছে কি না, তারই সুলুকসন্ধান।

বছরের অন্য সময়ে যে ‘সেল’ চলে না, তা নয়। কিন্তু চৈত্র সেলের মধ্যে যে হরিহরছত্রের মেলা-মার্কা একটা ‘হোলসেল’ কিসিম লুকিয়ে রয়েছে, তাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। চৈত্রমাসব্যাপী ‘তারকনাথের চরণে সেবা লাগে’ হাঁক শহর বা উপকণ্ঠে শুনতে পেলেই বাঙালি টের পান চৈত্র এসে গিয়েছে অর্থাৎ এবার সেল শুরু।

যদিও  চৈত্রের অভিজ্ঞান বদলে গিয়েছে। ‘তপ্ত ধূলার পথে’ যখন ‘ঝরা ফুলের রথে’ মাধবীর সঙ্গ খোঁজেন ঋতুরাজ, মন খানিক উদাস হয়ে জানলা টপকিয়ে শেষ বসন্তের উদাসীনতাকে মেখে নিতে তৎপর, তখন কাক্কেশ্বর কুচকুচের মতো হেঁড়ে গলায় কারা যেন ঘোষণা করতে থাকেন, ‘সেল! সেল!!’ সব অভিজ্ঞানকে ছাপিয়ে বঙ্গজন বুঝে যান ‘বসন্তের দিন শেষ’। ঝরাপাতাদের দলে এখন বিকিকিনির হাট। শহর, মফস্‌সল, গঞ্জ একাকার সেই হাটে।

সেখানে ব্যস্ততার অবকাশ নেই ব্যবসায়ী মহলের। সামনেই পয়লা বৈশাখ। তাই নতুন জামাকাপড় কিনবেন অনেকেই। ইতিমধ্যেই চৈত্র সেলের বাজার জমজমাট। ছাড়ে জিনিস কিনতে মানুষের আকর্ষণ চিরকালীন। এবারও তাই চৈত্র সেলের বাজার ধরতে তৎপর বিক্রেতারাও।

অনেকেই বাংলা ক্যালেন্ডারের শেষ মাসে স্টক ক্লিয়ার করতে ছাড় ঘোষণা করেছেন। সেই ছাড়ের সুযোগ নিতে বাজারমুখী আমজনতাও। কলকাতাসহ জেলার বাজার তাই রীতিমতো সরগরম। হাসি বিক্রেতাদের মুখেও। শুধুই জামাকাপড় নয়, চটি জুতো বা বাড়ির প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রীও বিক্রি হচ্ছে উল্লেখযোগ্য ছাড়ে।

নিজেদের পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি চেনা পরিচিত বা আত্মীয়স্বজনের জন্য নববর্ষের উপহার কিনতে অনেকেই ছুটছেন চৈত্র সেলের ফায়দা নিতে।

বনগাঁ শহরের বাজারে চৈত্র সেলের ছাড়ের ঘোষণা টানছে ক্রেতাদের। তাই অনেকেই ঢুঁ মারছেন দোকানে। কোন জিনিসের ওপরে কত ছাড় তার বিস্তারিত তথ্য নিচ্ছেন বিক্রেতাদের কাছ থেকে। শাড়ি থেকে জামা, জুতো, বেডকভার, চায়ের কাপ, গ্লাস ইত্যাদি সবই মিলছে মোটা ছাড়ে।

বনগাঁ শহরের বাসিন্দা কোয়েল ভট্টাচার্য্য  বলেন, পুজোর সময়ের মতোই পয়লা বৈশাখেও নতুন জামাকাপড় পরা বাঙালির ঐতিহ্য। একসঙ্গে অনেক জামাকাপড় কিনতে হয়। চৈত্র সেলের কারণে কিছুটা টাকা বাঁচে।

বনগাঁ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি বিনয় সিংহ বলেন,   চৈত্রের শেষ শনিবার বাজার জমে উঠেছে। রবিবার আরও ভিড় বাড়বে কারণ হাতে আর একটা দিন তারপরই বাংলাও বাঙালির নববর্ষ উদযাপনের দিন তাই বিশেষত জামাকাপড়ের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস সামগ্রীর ওপরেও ছাড় থাকায় ওগুলিও ভালোই বিক্রির প্রত্যাশা রয়েছে।

এক কথায় জমে উঠেছে চৈত্র সেলের বাজার। যশোররোড সহ ট বাজার ,নিউ মার্কেট সব রাস্তায় জামাকাপড় থেকে বিছানার চাদর, জুতো, সবেতেই সেলের ছোঁয়া। কোথাও ৩০ শতাংশ, কোথাও ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় চলছে।

শপিংমলগুলিতেও জমছে কেনাকাটার ভিড়। ছোটদের জামাকাপড়, মেয়েদের পোশাক বিক্রি বেশি হচ্ছে।
শহরের বাটামোড় থেকে একেবারে নিউ মার্কেট পর্যন্ত  দোকানপাট বসেছে। ফলে সকাল থেকে ভিড় বাড়ছে শহরে।

শুধু ওই সেলের মার্কেট নয়, সব জায়গায় ভিড় বাড়ছে ক্রেতাদের। বনগাঁর এক ব্যবসায়ী মোহিত ঘোষ বলেন, এবারে চৈত্রের প্রথম থেকেই ভালো বিক্রি হয়েছে ।পয়লা বৈশাখের আগের দিনও ভালো বিক্রি বাট্টা হবে বলে আশা করছি ।

আগামী মঙ্গলবার বাংলা নববর্ষ। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষ্যে এখন শহরে বসেছে ‘‌সেল’‌। এখানে জামাকাপড় থেকে শুরু করে ঘরের নানা  ধরনের জিনিস বিশেষ ছাড়ে নতুন কিনতে মানুষজন ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তবে এই কেনার হিড়িকে একটা অন্য ছবি সামনে এসেছে। সেটি হল, শহর  নানা শপিং মলে মহিলাদের ব্যাপক ভিড় চোখে পড়ছে। সেখানে পুরুষরা রীতিমতো সংখ্যালঘু। কেন এমন ঘটনা ঘটছে?‌ এই প্রশ্ন এখন উঠতে শুরু করেছে।

সর্বত্র মহিলাদের উপস্থিতি বেশি দেখা যাচ্ছে। এই বিষয়টি জানার জন্য প্রশ্ন করা হয় এক যুবতীকে। জে বি এস সিটি মলে ‘‌চৈত্র সেলের’‌ বাজার করতে এসেছেন হৈমন্তী সেন। তিনি বলেন, ‘‌এই ব্যাপক নারী সমাজের উপস্থিতির নেপথ্যে রয়েছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। আমিও গত ৬ মাসের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা জমিয়ে শপিং মলে এসেছি সেলের বাজার করতে। আগে এমন স্বাধীনতা ছিল না। সবটাই নিজেকে জোগাড় করতে হতো। এখন মহিলাদের এই আর্থিক স্বাধীনতা মিলেছে।’‌

শহর থেকে জেলার বাজারেও চলছে চৈত্র সেল। জামাকাপড়, চটি–জুতোর দোকানগুলি দিচ্ছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। আর এই সব মিলিয়েই বাজারমুখী হচ্ছেন মহিলারা। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকে গিয়েছে টাকা।

পুরাতন বনগাঁর বাসিন্দা নেহা বিশ্বাস। তিনি বাটার মোড়ে চৈত্র সেলের বাজারে এসে দেদার শপিং করছেন। স্বামী চাষের কাজে যুক্ত । তাই কাজে ব্যস্ত। গৃহবধূ  মানষী দেবী
একাই এসেছেন শপিং মলে। তাঁর বক্তব্য,‘‌স্বামীর কাজের চাপ আছে। তাই শপিং করতে আসতে পারেননি। আর পাঁচ মাস ধরে দিদির দেওয়া লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা জমিয়ে শপিং করতে এসেছি।

আর সবার জন্য জামাকাপড় কিনে যখন বাড়ি ফিরব তখন স্বামীর কাছে সেটাই হবে বড় সারপ্রাইজ। আগে স্বামী সারপ্রাইজ দিত। আমার তো আর রোজগার নেই। এখন দিদির দৌলতে আমি পরিবারের সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে পারব।

এপ্রিলের শুরুতেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। তাই বেরিয়ে পড়েছি।’‌ সুতরাং চৈত্র সেলের ছাড়, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা এবং পয়লা বৈশাখের প্রস্তুতি মিলিয়ে মুখে হাসি ফুটেছে মহিলাদের।

Previous articlePhotography News আলোকচিত্রীদের পাশে কলকাতার ‘আইকনিক’ ইভেন্ট প্লানার
Next articleBangaon News বনগাঁ বাটা মোড়ে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ভস্মিভূত ৯ টি দোকান: দেখুন ভিডিও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here