মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে স্যালাইন কাণ্ডের স্মৃতি এখনও টাটকা রাজ্যবাসীর মনে। প্রসবের পর রিঙ্গার ল্যাকটেট নামে নিষিদ্ধ স্যালাইন দেওয়ায় সদ্য মা হওয়া একজন প্রাণ হারান। চারজন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসার পর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। সেই ঘটনা রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল। তার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের মুখ পুড়ল পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের।
সেন্ট্রাল ড্রাগ কন্ট্রোলের পরীক্ষায় ডাহা ফেল দেশের মোট ৯৩টি ওষুধ। এই তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের ১৬টি ব্যাচের রিঙ্গার ল্যাকটেট ও অন্যান্য স্যালাইন । স্টেরিলিটি পরীক্ষায় স্যালাইনের নমুনা ফেল করেছে। যেগুলির মধ্যে মিলেছে ব্যাকটেরিয়া। জানা গিয়েছে বেশিরভাগই নামী সংস্থার ওষুধ রয়েছে তালিকায়।
শিলিগুড়ির বেসরকারি সংস্থা ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যালস’-এর রিঙ্গার্স ল্যাকটেটের ১৬টি ব্যাচ ‘প্রত্যাশিত গুণমানের নয়’ (নট অফ স্ট্যান্ডার্ড কোয়ালিটি)। কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও )-র রিপোর্টে উঠে এসেছে এমনটাই।

সিডিএসসিও ১৪৫টি ওষুধের ব্যাচকে জানুয়ারি মাসে প্রত্যাশিত গুণমানের নয় বলে চিহ্নিত করেছে। সেই তালিকাতে রয়েছে শিলিগুড়ির সংস্থা ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যালস’-এর রিঙ্গার্স ল্যাকটেট (স্যালাইন)-এর নামও। এই রিঙ্গার্স ল্যাকটেট (স্যালাইন)-এর ১৬টি ব্যাচ জীবাণুমুক্ত নয় বলে জানা গিয়েছে দুটি পরীক্ষায়।

জানা গিয়েছে হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ব্যবহৃত টেলমিসারটান, এমোক্সিসিলিন ও পটাশিয়াম ক্ল্যাভিউনেট পরীক্ষায় ফেল করেছে। এছাড়াও তালিকায় রয়েছে প্যারাসিটামল, স্নায়ুরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, পরীক্ষায় বহুল ব্যবহৃত পেনকিলার, অ্যান্টিবায়োটিক, শিশুদের জন্য ব্যবহৃত সর্দি-কাশির সিরাপও।

পরীক্ষা হওয়া ১৪৫টি ওষুধের মধ্যে ৯৩টি ওষুধকে ‘প্রত্যাশিত গুণমানের নয়’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যের ল্যাবে। এছাড়াও ৫২টি ওষুধকে ‘প্রত্যাশিত গুণমানের নয়’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে কেন্দ্রের বিভিন্ন ল্যাবে। এর মধ্যে রয়েছে টেলমা এএম (ব্যাচ নম্বর ৫২৪০৩৬৭) ও অন্ডেম-৪ (ব্যাচ নম্বর ২৪৪৪১৪৫১)। বাজারে যে সমস্ত ওষুধ রয়েছে তাদের গুণগত মান যাচাই করার জন্য প্রতি মাসে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেন সিডিএসসিও-র আধিকারিকরা। যে সমস্ত ব্যাচের ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করা হয়, তার গুণগত মান ঠিক রয়েছে কি না তা বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হয়। তাতেই এই তথ্য সামনে এসেছে। শুধুমাত্র এই ব্যাচের গুণমানের ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট রিপোর্ট প্রযোজ্য। তা এড়িয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার অন্যান্য ব্যাচের ওষুধগুলির ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা থাকে না বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে আবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজেও সেই ঘটনার ছায়া। সোমবার ওষুধ খেয়ে সেখানকার স্ত্রীরোগ বিভাগে ভর্তি আট প্রসূতি আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন। খবর পেয়েই অবশ্য চিকিৎসকদের একটি দল জরুরিভিত্তিতে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেন। আপাতত সকলের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে।
