দেশের সময়: অনুব্রত ঘনিষ্ঠ বোলপুরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে মুনকে পাঁচ ঘণ্টা ধরে জেরার পর বেরিয়ে গেলেন সিবিআই আধিকারিকরা। কী নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হল, সে ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি কাউন্সিলর। তিনি শুধু বলেছেন, সিবিআই নিজের কাজ করেছে।
সিবিআইকে সহযোগিতা করেছি। ভবিষ্যতেও সহযোগিতা করব। তাঁর বক্তব্য, সিবিআই আধিকারিকরা আমার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেছেন। আমিও ভাল ব্যবহার করেছি। গরু পাচার সংক্রান্ত কোনও প্রশ্ন করা হয়েছে তাঁকে? এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ওসব নিয়ে আমার কোনও ব্যাপার নেই। বলেই তিনি বাড়ির দরজা বন্ধ করে দেন।
আজ সকালে তাঁর ‘অশোক নিলয়’ বাড়িতে হানা দেন সিবিআই আধিকারিকরা। মুন অনুব্রতর ছায়াসঙ্গী বলে পরিচিত। অনুব্রতর বিভিন্ন কাজকর্ম দেখাশোনা করতেন তিনি। দিনের বেশিরভাগ সময় অনুব্রতর বাড়িতেই দেখা যেত তাঁকে। এবারই কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। প্রথমে ২ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁকে। তার পর আয়-ব্যয়ের হিসেব খতিয়ে দেখতে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বোলপুর সুপার মার্কেট এলাকায় কনসালন্ট্যান্টের অফিসে। দুটি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথম যে অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়, সেটি বন্ধ ছিল। পরে একই সংস্থার আরও একটি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে আধঘণ্টা ধরে বিভিন্ন নথির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। এর পর ফের তাঁকে বাড়িতে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। দেখা যায়, একজন বিশ্বজ্যোতিকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর একজন কিছু নথি হাতে ওই বাড়িতে আসেন। জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, সিবিআই তাঁকে আসতে বলেছে।
বিশ্বজ্যোতির পাশাপাশি সুদীপ রায় নামে অনুব্রতর আরও এক ঘনিষ্ঠের বাড়িতে এদিন সকালে হানা দেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসাররা। তিনি বোলপুর পুরসভার কর্মী। বোলপুর চৌরাস্তায় অনুব্রতর চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মণীশ কোঠারির বাড়িতেও হানা দিল সিবিআই। দীর্ঘক্ষণ ধরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দরজা বন্ধ করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর আগেও মণীশকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
কিন্তু তাতে সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি বলে সিবিআই সূত্রে খবর। ফলে ফের তাঁকে জেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভিতরে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে আর বাড়ির বাইরে পাহারায় রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। অনুব্রতর যে বিপুল সম্পত্তির হদিশ মিলছে, তার সব হিসেব রাখত মণীশ কোঠারি। অনুব্রত ঘনিষ্ঠ প্রত্যেকের বাড়িতে সিবিআই অভিযান চালাবে বলে সূত্রের খবর। সেই প্রক্রিয়া চলছে। এদিন অনুব্রত ঘনিষ্ঠ আরও কয়েকজনের বাড়িতে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সিবিআইয়ের। ইতিমধ্যেই সুজিত দে নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছে সিবিআই।
এদিকে অনুব্রত ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি সামনে এল। সবমিলিয়ে ১৬২টি সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। শুধুমাত্র অনুব্রতর একার নামেই ২৪টি সম্পত্তি রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাঁর দেহরক্ষী সায়গলের নামে নথিভুক্ত সম্পত্তি রয়েছে ৪৭টি সম্পত্তি। অনুব্রত-কন্যা সুকন্যার নামে রয়েছে ২৬টি সম্পত্তি। অনুব্রতর স্ত্রী ছবি মণ্ডলের নামে রয়েছে ১২টি সম্পত্তি। অনুব্রত ঘনিষ্ঠ বিদ্যুৎবরণ গায়েনের নামে রয়েছে ৩২টি সম্পত্তি। তাঁর স্ত্রীর নামে রয়েছে ২টি সম্পত্তি। আর এক ঘনিষ্ঠ কমলকান্তি ঘোষ ও তাঁর পরিবারের নামে রয়েছে ১৮টি।