দেশের সময় : সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ঘোষণাকে ‘রাজনৈতিক খেলা’ ঘোষণা করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতা বালা ঠাকুর ।
এই আইন কার্যকরী করার সময় যদি ‘নিঃশর্ত’ নাগরিকত্ব না দেওয়া হয়, তাহলে তিনি নিজে ধরনায় বসবেন বলে হুঁশিয়ারি মমতা বালা ঠাকুরের। দেখুন ভিডিও
গোটা দেশ জুড়ে সোমবার সন্ধ্যায় সিএএ কার্যকরী করে কেন্দ্রীয় সরকার। বহুদিন ধরে টালবাহানা চলার পর অবশেষে লোকসভা নির্বাচন ঘোষণার ঠিক মুখে এই আইন কার্যকর করার ঘোষণা কেন্দ্রীয় সরকারের। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি থেকে সেই দেশের সংখ্যালঘু নিপীড়িত মানুষদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কারণেই এই আইন চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এই আইনের বিজ্ঞপ্তির পুরো বিষয়টি না জেনে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাইছে না তৃণমূলও।
অবশেষে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) চালু হল গোটা দেশে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে লোকসভা নির্বাচনের আগে বাড়তি অক্সিজেন পেল রাজ্য বিজেপি। কারণ, বাংলায় মতুয়া ভোটের অঙ্ক মেলাতে খুবই জরুরি ছিল এই বিজ্ঞপ্তি। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞপ্তি জারির সঙ্গে সঙ্গেই উৎসবের আবহ তৈরি হয়ে যায় পদ্ম-শিবিরে।
বনগাঁ লোকসভা এলাকাতে তো বটেই মতুয়া অধ্যুষিত অন্যান্য জায়গাতেও শুরু হয়ে যায় উৎসব। রানাঘাটের সাংসদ তথা লোকসভার প্রার্থী জগন্নাথ সরকার ঢোল বাজাতে বাজাতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। আর বনগাঁর সাংসদ তথা মতুয়া সমাজের নেতা সল্টলেকে বিজেপির রাজ্য দফতরে এসে মিষ্টিমুখ করান অন্য নেতাদের। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘একটা ইতিহাস তৈরি হল আজ। আজ থেকে ১০০ বছর পরে সরকার বদলে যেতে পারে কিন্তু কেউ উদ্বাস্তু হয়ে আসা মানুষের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না। ভবিষ্যতের জন্য বড় নিরাপত্তার গ্যারান্টি মিলল।’’
বিষয়টি নিয়ে এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা বালা ঠাকুর বলেন, ‘ আমাদের হাতে বিজ্ঞপ্তি আসুক। যদি দেখি নিঃশর্ত নাগরিকত্বের কথা বলা হয়েছে, তাহলে ভালো কথা। যদি সেটা না থাকে, তাহলে আন্দোলনে নামব।’ তাঁর ব্যাখ্যা, এই আইন মোতাবেক নিঃশর্ত ভাবে বাইরের দেশ থেকে আসা মানুষের নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করা উচিত। এখানে যদি কোনও নথি চাওয়া হয়, তাহলে তার বিরোধিতা করা হবে।
তাঁর কথায়, ২০১৯ আইনটি কী ভাবে এতদিন বাদে লাগু করা হয়। এর জন্য কোনও আবেদন পূরণ করতে হবে, নাকি কোনও ডকুমেন্টস দিতে হবে সেটা দেখা হবে। তাঁর কথায়, ‘আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর যে নথি আছে, আমাদের কাছেও সেই নাগরিক আছে। তাঁরা যদি এই দেশের নাগরিক হন, তাহলে আমরাও এই দেশের নাগরিক।’
তবে, এর পেছনে বিজেপির ভোটের রাজনীতি রয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। মমতা বালা বলেন, ‘’ ভোটের আগে এটা চালু করে দিল। এখনও তো মানুষ নাগরিক হননি। ভোট তাহলে কোন অধিকারে নিচ্ছে? নাগরিকত্ব এখন দেওয়া হবে নাকি ভোটের ফলাফলের পরে দেওয়া হবে সেটা কেই জানে না।’ প্রসঙ্গত, এই বিষয়টি নিয়ে ২০১৯ সালেও ভোটের প্রচার করেছিল গেরুয়া শিবির। এবারের লোকসভা নির্বাচনের আগেও এই আইন চালু করা অবশ্যই হবে বলে জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বনগাঁ কেন্দ্রের বিদায়ী বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। যদিও, মতুয়াদের একাংশ বিষয়টি নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় রয়েছেন বলেই দাবি করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছেলের হাতে মোয়া? কাউকে নাগরিকত্ব দিতে পারবে না। জাস্ট শো অফ! বলবে, ‘আপনারা পোর্টালে নাম লেখান।’ তখন সব ধর্মের মানুষই নাম লেখাবেন। কিন্তু সেই নাম আদৌ কার্যকর হবে?’’ একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, ‘‘এ জন্যই কি মতুয়া ভাই, নমঃশূদ্রদের আধার কার্ড বাতিলের চক্রান্ত হয়েছিল? কিন্তু আমরা তো সবাই নাগরিক। ভোট আজ আছে। কাল ফুরিয়ে যাবে। আর সিএএ একটা ছলনা। আমি বিশ্বাস করি, বাংলায় যাঁরা বসবাস করছেন, তাঁরা সবাই এ রাজ্যের নাগরিক।’’
এর জবাব দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তুনু পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা বলছেন কিন্তু তিনি কি এই জবাবটা দেবেন পাসপোর্ট বানানোর সময়ে তাঁর পুলিশ মতুয়া সমাজের সদস্যদের থেকে কেন ১৯৭১ সালের আগের জমির দলিল চায়?’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘আজ থেকে ১০০ বছর পরে কেউ প্রশ্ন তুলবেন কি না কথা দিতে পারবেন মুখ্যমন্ত্রী? আজ উদ্বাস্তু পরিবারের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নাগরিকত্বের নিশ্চয়তার গ্যারান্টি দিল মোদী সরকার।’’ রাজ্যের কারও নাগরিকত্ব কাড়তে দেব না বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারিরও জবাব দিয়েছেন শান্তনু। তিনি বলেন, ‘‘সিএএ-র মাধ্যমে কারও নাগরিকত্ব কাড়া হবে না। এটা নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য।’’
সঙ্ঘ পরিবারেরও দীর্ঘদিনের দাবি সিএএ। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এ নিয়ে অনেক আন্দোলনও করেছে। তার প্রেক্ষিতেই ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে এই আইন প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। সোমবার তার বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পরে পরিষদের বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সর্বভারতীয় নেতা শচীন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘নাগরিকত্ব নিয়ে কাউকে ভুল বোঝানো ঠিক হবে না। বরং, সকলে যাতে নাগরিকত্ব পান সে ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য এই আইন নয়। উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আসা মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়ার উদ্যোগ।’’