দেশের সময় , সুটিয়া : ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় গরু পাচারের চেষ্টার কথা বার বার উঠে এসেছে সংবাদ শিরোনামে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কড়া নজরদারিতে বার বার ধরা পড়ে যাচ্ছে পাচারকারীরা। কখনও আবার বিএসএফ-এর তাড়া খেয়ে গরু ফেলে পালাচ্ছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় সর্বদা কড়া নজরদারি চালাচ্ছে বিএসএফ। আর এসবের মধ্যেই এক চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা। সীমান্তে গরুপাচারকারীদের সঙ্গে ঢুকেছিল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের কর্মরত এক সেপাইও। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার সুটিয়া সংলগ্ন বনগাঁর বাঁশঘাটা সীমান্ত এলাকায়।
ঠিক কী ঘটেছিল?
বিএসএফ সূত্রে জানা যাচ্ছে, একদল অনুপ্রবেশকারী লুকিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছিল। তারা চার-পাঁচটি গরু নিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছিল। সেই সময়ে বিএসএফ-এর এক জওয়ান তাদের বাধা দেয়। কিন্তু জওয়ানকে একা পেয়ে চার দিক থেকে ঘিরে ধরে সন্দেহভাজন পাচারকারীরা। এমনকী কাস্তে দিয়ে বিএসএফ জওয়ানের উপর হামলাও চালায় তারা। সেই সময় আত্মরক্ষার জন্য সন্দেহভাজন পাচারকারীদের দিকে গুলি চালান ওই বিএসএফ জওয়ান। গুলিবিদ্ধ হন একজন। আর তাতেই ভয় পেয়ে কুয়াশার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের দিকে পালিয়ে যায় সন্দেহভাজন পাচারকারীদের দল। গুলিবিদ্ধ একজন এবং গরুগুলিকে রেখেই পালিয়ে যায় তারা।
এদিকে গুলির শব্দ শুনে বিএসএফ-এর বাকি জওয়ানরাও ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। গুলিবিদ্ধ ওই ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয় এবং বনগাঁ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ওই বাংলাদেশির। পরে ঘটনাস্থল ভাল ভাবে তল্লাশি চালিয়ে একটি গরু ও কিছু ধারাল অস্ত্রও উদ্ধার করেন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানরা।
এদিকে ওই ঘটনার পরপরই ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের তরফে বিএসএফ-কে জানানো হয় যে তাদের একজন জওয়ানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সন্দেহ, ওই ব্যক্তি ভারতীয় সীমান্তের দিকে এসেছিল। ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের সময় বিজিবি-র তরফে বিএসএফ অফিসারদের হাতে ওই নিখোঁজ জওয়ানের ছবিও দেওয়া হয়। যাতে শনাক্তকরণে সুবিধা হয়। সেই ছবি শনাক্ত করে দেখা যায়, যে বাংলাদেশির গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে, সেই ওই বিজিবি-র সেপাই। নাম মহম্মদ রিয়াজউদ্দিন। ওই ব্যক্তি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সেপাই পদে কর্মরত এবং গরু পাচারকারীদের সঙ্গে ঘুরছিল। তবে কী কারণে ওই বাংলাদেশি সেপাই লুঙ্গি-গেঞ্জি পরে গরু পাচারকারীদের সঙ্গে এ দেশে ঢুকেছিল, সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়।
কী জানাচ্ছেন বিএসএফ মুখপাত্র?
সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের মুখপাত্র ডিআইজি এ কে আর্য ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানিয়েছেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় বিএসএফ জওয়ানরা নিজেদের জীবনের পরোয়া না করে সীমান্তে সজাগ নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছেন। পাচারকারীরা যখন তাদের প্ল্যানিং-এ ব্যর্থ হয়, তখন তারা জওয়ানদের উপর মারাত্মক হামলা চালায়। এর ফলে অতীতে বিভিন্ন সময় আমাদের জওয়ানরা গুরুতর আহত হয়েছেন।
এই বাংলাদেশি সেপাইয়ের ঘটনা প্রসঙ্গ বিএসএফ-এর তরফে তিনি জানিয়েছেন, মানবিকতার খাতিরে বিএসএফ জওয়ানরা গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এবং তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে তিনি মারা যান। তিনি আরও জানিয়েছেন, বিএসএফ জওয়ানদের কোনও ধারণা ছিল না যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরাও চোরাকারবারিদের সঙ্গে ঘুরতে পারেন।