দেশের সময়: বিএসএফ ঠিকমতো সীমান্তে নজরদারি চালাচ্ছে না, যার কারণে পেট্রাপোল দিয়ে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। এমনই অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন বনগাঁর পুরপ্রধান গোপাল শেঠ। তাঁর তোপ, সীমান্ত পাহারার কাজে কিছু ক্ষেত্রে বিএসএফের গাফিলতি রয়েছে। সেকারণেই অনুপ্রবেশ ঘটছে। ওপারবাংলা থেকে চোরাপথে মানুষজন এসে বনগাঁর বিভিন্ন হোটেলে ঘাঁটি গাড়ছে। তারপর ছড়িয়ে পড়ছে নানা জায়গায়। একাজে বিজেপির কিছু জনপ্রতিনিধি এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন বলেও অভিযোগ তাঁর। যাঁরা এ ধরনের কাজ করছেন, তাঁদের অতীত রেকর্ড খতিয়ে দেখলেই সবটা বোঝা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বনগাঁর পুরপ্রধান।
তিনি বলেন, বিএসএফের চেয়ারে গিয়ে একজন সাধারণ জনপ্রতিনিধি বসে পড়ছেন। এটা কী করে হয়? যদিও গোপাল শেঠের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, বিএসএফ জানে কীভাবে বর্ডার সামলাতে হয়। বিএসএফকে কাজ শেখাতে হবে না। বিএসএফ সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরারত আছে বলেই আমরা নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারছি। তাঁর পাল্টা দাবি, রাজ্য সরকার জমি দিচ্ছে না বলেই সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ করা যাচ্ছে না। আর এই ফেন্সিং নেই বলেই বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে উগ্রপন্থীরা ঢুকে এরাজ্যকে তাদের আঁতুড় ঘর করে তুলেছে।
এদিকে, কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে পেট্রাপোল সীমান্তকে। পেট্রাপোল থেকে জয়ন্তীপুর বর্ডার আউট পোস্ট পর্যন্ত যে ১১ কিমি উন্মুক্ত সীমান্ত রয়েছে, সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে কাঁটাতারের বেড়া দিতে গিয়ে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেজন্য সেরে ফেলা হয়েছে বাঁশ দিয়ে ওই এলাকা ঘিরে ফেলার কাজ। বাংলাদেশ থেকে কোনওভাবেই যাতে অনুপ্রবেশের ঘটনা না ঘটে, সেব্যাপারে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে বিএসএফ।
এরইমধ্যে দুই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী এবং অনুপ্রবেশে সাহায্য করা এক ভারতীয় দালালকে গ্রেফতার করেছে উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগর থানার পুলিশ। বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার বাসিন্দা ওই দম্পতি চোরাপথে এপারে এসে দীর্ঘদিন ধরে ভিনরাজ্যে গিয়ে বসবাস করছিল। ভারতীয় দালাল মারফত বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টা করছিল তারা। সগুনা পঞ্চায়েত এলাকা থেকে দালাল সহ পাকড়াও করা হয় ওই বাংলাদেশি দম্পতিকে।
নিজেদের দেশে চলা অস্থিরতার মাঝে এবার একের পর এক সীমান্তে উসকানির অভিযোগ উঠছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) বিরুদ্ধে। মালদহ সীমান্তে অশান্তির চেষ্টার পর কোচবিহারের কুচলিগঞ্জ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিজিবি’র বিরুদ্ধে। একই ঘটনা ঘটেছে বালুরঘাট সীমান্তেও। মালদহে বিএসএফের উপর হামলার চেষ্টা চালায় পাচারকারীরা। বাধ্য হয়ে শূন্যে গুলি চালাতে হয় বিএসএফকে।
বালুরঘাট সীমান্তের শিবরামপুর এলাকায় দেড়শো মিটার কাঁটাতার নেই। ওই এলাকায় আরও একটি ভারতীয় গ্রাম রয়েছে। সীমান্তপারের গ্রামগুলি সুরক্ষিত করতেই সেখানে একটি রাস্তা তৈরির পাশাপাশি উন্মুক্ত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসএফ। কিন্তু একাজে বাধা দেয় বিজিবি। তা নিয়েই উত্তেজনা ছড়ায়।
বিজিবির তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই এলাকায় কাঁটাতার দেওয়া যাবে না। এতেই প্রশ্ন উঠেছে, ভারতীয় জমিতে বিএসএফ কাঁটাতার দেবে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষীরা বাধা দেওয়ার কে?
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, আসলে বিজিবি সীমান্তে উসকানি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। অশান্তি পাকাতে চাইছে তারা। যদিও ঠান্ডা মাথায় গোটা বিষয়টি সামলাচ্ছে বিএসএফ। তবে তারা যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৎপর তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বিএসএফের তরফে। কোচবিহারের কুচলিবাড়ি সীমান্তে বিএসএফের সহযোগিতায় নিজেদের এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। তাঁদের অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতীরা ঢুকে পড়ে। ওপার থেকে লোকজন এসে তাঁদের জমির ফসল লুট করে নিয়ে চলে যায়। একারণেই তাঁরা কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু বিজিবি এসে বাধা দেয়। তবে বিএসএফের সহযোগিতায় তাঁরা সেই বাধা উপেক্ষা করেই কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গে সর্বত্রই বাংলাদেশ সীমান্তে জওয়ানের সংখ্যা আরও বাড়ানো হয়েছে। ট্রিপ ফ্লেয়ার যন্ত্রের পাশাপাশি বুম ক্যামেরা, বুলেট ক্যামেরা সহ সীমান্ত সুরক্ষায় অত্যাধুনিক ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে বিএসএফের তরফে। ট্রিপ ফ্লেয়ার এমনই একটি অত্যাধুনিক ব্যবস্থা যে, কেউ যদি কাঁটাতারের বেড়া কাটার চেষ্টা করে, আগুন ধরে যাবে কাঁটাতারে। ধোঁয়া বেরতে থকবে। ফলে সতর্ক হয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবে বিএসএফ।