দেশের সময় , বনগাঁ : বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বৃহস্পতিবার নবান্ন থেকেই সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ করে এ রাজ্যের আলু ভিন রাজ্যে পাঠিয়ে কৃত্রিম ভাবে দাম বাড়ানো নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নড়েচড়ে বসল টাস্ক ফোর্স।
শুক্রবার জেলা সদর বারাসত থেকে বনগাঁর বিভিন্ন বাজারে গিয়ে অভিযান চালান টাস্ক ফোর্সের আধিকারিকরা। সঙ্গে বারাসত থানার পুলিশও ছিল। আলু, পেঁয়াজ থেকে সমস্ত সব্জির বাজার দর যাতে প্রকাশ্যেই লেখা থাকে, তা নিয়েও ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দিয়েছেন আধিকারিকরা। চাষিদের কাছ থেকে সুফল বাংলার জন্য সরাসরি ১২০০ কেজি সব্জি কেনা হয়েছে এ দিন।
এবার সব্জির বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করতে ন্যায্য মূল্যে সব্জির দোকান চালু করার উদ্যোগ নিল বনগাঁ পুরসভা। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের আর্থিক নির্ভরতা দিতে তাদের মাধ্যমে সব্জি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা।
কল্পতরু উৎসবের দিন ন্যায্যমূল্যে আলু এবং পেঁয়াজ বিক্রি করে এই প্রকল্পের ট্রায়াল রান করা হয়েছে। আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই পুরসভার চারটি জ়োনে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের দিয়ে ন্যায্য মূল্যের সব্জি বিক্রি করতে চাইছেন পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ।
বনগাঁ শহরের বিভিন্ন বাজারে গিয়ে সব্জির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিক্রেতাদের কাছে আবেদন করেছিলেন বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। বনগাঁ পুরসভায় ২০টি ওয়ার্ড। পাঁচটি ওয়ার্ড নিয়ে একটি জ়োন তৈরি করা হয়েছে।এই চারটি জ়োনে চারটি ন্যায্য মূল্যের সব্জির দোকান করা হবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাই এই দোকান থেকে ন্যায্য দামে সব্জি বিক্রি করবেন। কল্পতরু উৎসবের সন্ধ্যায় ১৫ টাকা কেজি প্রতি আলু এবং ২০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ ক্রেতাদের হাতে তুলে দিয়েছে পুরসভা। আগামী মার্চের মধ্যে চারটি জ়োনে চারটি দোকানের মাধ্যমে ন্যায্য মূল্যে সব্জি কিনতে পারবেন বনগাঁ শহরের বাসিন্দারা।
পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ বলেন, ‘এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ম্যাক্সিমাম লাভে আলু, পেঁয়াজ থেকে সব্জি বিক্রি করছেন। এই প্রবণতা ঠেকাতে পুরসভা ন্যায্য মূল্যের সব্জির দোকান চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাই জেলা এবং কলকাতার বিভিন্ন পাইকারি বাজার থেকে সব্জি কিনে সামান্য কিছু লাভ রেখে সেগুলো বিক্রি করবেন।’
শীত বাড়লেও বাজারে সব ধরনের সব্জির দামই চড়া। আলু এবং পেঁয়াজের দাম লাগামছাড়া। এ দিন বারাসতের হৃদয়পুর, হরিতলা, কাছারি–সহ হেলাবটতলা বাজারে পরিদর্শন করে টাস্ক ফোর্স। জেলার পাঁচটি জায়গা থেকে কৃষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সব্জি কেনা হয়েছে। বনগাঁ, বাগদা, গাইঘাটার কৃষি মান্ডি ও দেগঙ্গা, দত্তপুকুর বাজার থেকেও কৃষকদের কাছ থেকে কেনা হয়েছে পেঁয়াজ, ক্যাপসিকাম, বিন, কাঁচকলা, ফুলকপি ও বাঁধাকপির মতো ১১৫০ কেজি সব্জি।
বারাসতের কৃষি বিপণন দপ্তরের আধিকারিক কাশীনাথ মোহান্তি বলেন, ‘টাস্ক ফোর্সের আধিকারিকরা বেআইনি ভাবে আলু, পেঁয়াজ ও অন্যান্য সব্জি মজুত করে রাখা হয়েছে কি না, তার উপরেই গুরুত্বও দিয়েছেন। নজরদারি করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে শহরের বিভিন্ন বাজারে সব্জির দামে তারতম্য রয়েছে। তাই প্রতিটি সব্জির দোকানের সামনে বাজার দর প্রকাশ্যে লিখে রাখার জন্য বিক্রেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, এই ধরনের অভিযান লাগাতার চলবে।